ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
ঝিনাইদহ-২ আসন বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। স্বাধীনতার পর থেকে বিএনপির প্রার্থী এই আসন থেকে একাধিকবার জয়ী হয়েছেন। ফলে জেলা সদরের এই আসনটি বিএনপির হৃদস্পন্দন ধরা হয়।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৩৭টি আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হলেও ঝিনাইদহ-১, ঝিনাইদহ-২ ও ঝিনাইদহ-৪ সংসদীয় আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিএনপি। গুঞ্জন উঠেছে ঝিনাইদহ-২ আসন মিত্রদলের জন্য ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এ খবরে তৃণমূল বিএনপিতে ক্ষোভ ও অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহ-২ আসন বহুদিন ধরেই বিএনপির অন্যতম শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। এই আসনের রাজনীতি মূলত ঘুরে দাঁড়িয়েছে তৃণমূল নেতাকর্মীদের ত্যাগ, আন্দোলন ও দীর্ঘ সংগ্রামের ওপর। কিন্তু সেই দৃঢ় সেই ঘাঁটিতেই এখন দেখা দিয়েছে শঙ্কার কালো মেঘ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ঝিনাইদহ-২ আসনে যদি বিএনপির প্রার্থী না থাকে তবে এই অঞ্চলে বিএনপির অস্তিত্ব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। গভীর সংকট দেখা দিবে মাঠের রাজনীতিতে।
তৃণমূল বিএনপির নেতা সাধুহাটী ইউনিয়নের কৃষক আলাউদ্দীন জানান, যারা বছর দশকের পর দশক ধরে রাজপথে থেকে দলকে টিকিয়ে রেখেছেন, হামলা-গ্রেপ্তার সহ্য করে সংগঠন ধরে রেখেছেন, তারা যদি মনোনয়ন বঞ্চিত হন তবে ভবিষ্যতে আর কেউ বিএনপি করবে না। ফলে ঝিনাইদহ ও হরিণাকুন্ডু উপজেলায় বিএনপির জনপ্রিয় প্রার্থী হিসেবে অ্যাডভোকেট এম এ মজিদকে মনোনয়ন দিলে আসনটির মর্যাদা যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনি জেলার অন্য তিনটি আসনও নেতৃত্বে সমৃদ্ধ থাকবে।
সদরের নগরবাথান গ্রামের মোজাম্মেল হক জানান, ঝিনাইদহ এলাকার রাজনীতি গড়ে উঠেছে তৃণমূল নেতাকর্মীদের ত্যাগ, নিষ্ঠা ও মাঠের লড়াইয়ের ওপর ভিত্তি করে। তাই প্রার্থী নির্বাচনে যদি সেই বাস্তবতা উপেক্ষা করা হয়, তাহলে সংগঠনের ভিত নড়বড়ে হয়ে যাবে এবং দলের অভ্যন্তরে বিভক্তি অনিবার্য হয়ে উঠবে।
সাদুহাটী ইউনিয়নের জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, দীর্ঘ সময় ধরে মাঠে থাকা নেতাদের বাদ দিয়ে সমঝোতার রাজনীতি যদি হাইকম্যান্ড প্রাধান্য দেয়, তাহলে ঝিনাইদহ-২ কেবল হারানো আসন হবে না, এটি পুরো জেলার বিএনপি সংগঠনের জন্য হতাশার প্রতীক হয়ে দাঁড়াবে।
এদিকে বিএনপির প্রবীণ নেতা আক্তারুজ্জামান বলেন, ঝিনাইদহ-২ আসনে এমন অনেক পরিবার আছে যাদের সদস্যরা বছর পর বছর বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। কারো বাড়ি পুড়েছে, কেউ মামলা খেয়ে পালিয়ে থেকেছে, কেউ আবার জেল খেটেছে; কিন্তু দল ছাড়েনি কেউই। সেই মানুষগুলোর মনে এখন একটাই প্রশ্ন—যাদের রক্ত, শ্রম আর ত্যাগে এই আসনের সংগঠন টিকে আছে, তাদের বাদ দিয়ে শরীক দলকে সিট ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে সেটা হবে নিজের কান কেটে অপরের যাত্রা ভঙ্গের সামিল।
বিষয়টি নিয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুজ্জামান মনা বলেন, এই মুহূর্তে বিএনপির জন্য সবচেয়ে জরুরি হলো দ্রুত, স্বচ্ছ ও বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়া। কারণ এই আসনের প্রশ্ন কেবল একজন প্রার্থীর নয়, বরং এটি দলীয় অস্তিত্ব, তৃণমূলের সম্মান ও আন্দোলনের উত্তরাধিকার রক্ষার প্রশ্ন। সময় এসেছে দল প্রমাণ করুক, তারা ত্যাগ ও সংগ্রামের মূল্য দিতে জানে কিনা।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.