আক্তারুজ্জামান বাচ্চু, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
সাতক্ষীরার ডিসি মোস্তাক আহমেদ অবশেষে ঢাকায় বদলী হলেন। তাকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব জেতী প্রু স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
অপরদিকে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত শনিবার (৮ নভেম্বর) দিবাগত রাতে এক প্রজ্ঞাপনে মিজ আফরোজা আখতারকে সাতক্ষীরার ডিসি হিসেবে যোগদানের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
তিনি ২৮ তম বিসিএস প্রশাসনের কর্মকর্তা। বর্তমানে পাবনা জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
জানা যায়, ২০২৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর মোস্তাক আহমেদ সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করেন।
এর আগে তিনি পরিচালক তোষাখানা ইউনিট, মন্ত্রী পরিষদ বিভাগে কর্মরত ছিলেন।
মোস্তাক আহমেদ সাতক্ষীরায় যোগদানের পরপরই জাহির করতে থাকেন ক্ষমতার অপব্যবহার। মানুষের সাথে অসাদাচরণ ছিলো তার নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। যাকে তাকে যোকোন জায়গায় খারাপ ব্যবহার করে থাকেন। এমনকি তার নিম্নস্থল কর্মকর্তাদের সাথে নিয়মিত অশোভন আচরণ করে থাকেন।
সাতক্ষীরায় যোগদানের পরপরই তিনি ফ্যাসিস্টদের মতো কার্যক্রম শুরু করেন। খাসজমি উদ্ধারের নামে জেলা প্রশাসনের অনুমোদিত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত শ্রমিক ইউনিয়নের অফিস বুলডোজার দিয়ে ভাঙচুর, আলিপুর ইউনিয়নের একাধিকবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আলহাজ্ব মোঃ আব্দুর রউফের সাথে জনসম্মুখে কটুক্তি, জেলা আইনশৃঙ্খলা মিটিং এ রাজনীতিবিদদের ক্রিমিনাল ও সাংবাদিকদের মুনাফেক বলে বেশ সমালোচিত হয়েছেন। শুধু এমনই নয়, সম্প্রতি
জুম্মার নামাজে শহরের কামাননগর মসজিদের ইমামের সাথে বেয়াদবি করে মুসল্লিদের জনরোষে পড়েছিলেন তিনি।
সাতক্ষীরা পৌরসভার একাধিকবার নির্বাচিত মেয়র ও বিএনপি নেতা তাসকিন আহমেদ চিশতির সাথেও অশোভন আচরণ করেছেন জেলা প্রশাসক। এলাকার বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, সরকারি কর্মকর্তা -কর্মচারী ও সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের সাথে তার রুক্ষ ও অসম্মানজনক আচরণে
সাতক্ষীরাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন।
নিজেকে জামায়াত - বিএনপির লোক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে বিভিন্ন সময়ে নানান কৌশল অবলম্বন করেন।
সরকার ঘোষিত নিষিদ্ধ দলের লোকজনদের নিয়ে নিয়মিত গোপন ও প্রকাশ্য মিটিং করা, ডিসি বাংলোতে নাচ- গানের আসর বসানোসহ খাওয়া -দাওয়া ও মসতির ব্যবস্থা রাখা হতো বাংলোতে।
স্থানীয় সাংবাদিকদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে ফ্যাসিস্টদের সুবিধা নেওয়াই তার উদ্দেশ্য। এমনকি সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের দখল নিতেও তিনি নানান ধরনের অপচেষ্টা চালিয়েছেন।
এছাড়া, দূর্নীতি ছিলো তার আপাদ মস্তকে। ডি সি আরকৃত খাস জমি উদ্ধারের ভয় দেখিয়ে শহরের ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়েছেন তিনি। জেলা প্রশাসনের এল আর ফান্ডের নামে জেলার ইটভাটা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে কয়েক কোটি টাকা তিনি হাতিয়ে নিয়েছেন বলে ইতোমধ্যে অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের বাংলোর দেয়ালে জুলাই আন্দোলনের আঁকা গ্রাফিতি মুছে ফেলে তিনি জুলাই যোদ্ধাদের রোষানলে পড়েছেন ।
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারী, সাতক্ষীরা পৌর মেয়র ও বিএনপি নেতা তাসকিন আহমেদ চিশতি খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী পরিষদে ডিসি মোস্তাক আহমেদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন।
সাতক্ষীরা ১ আসনের সাবেক এমপি ও বিএনপি নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাতক্ষীরার ডিসি মোস্তাক আহমেদকে প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়েছিলেন।
তবে, ডিসি মোস্তাক আহমেদ দিনের পর দিন তার এই অনৈতিক কার্যকলাপ চেপে রাখতে জেলার শীর্ষ কয়েক জামায়াত ও বিএনপি নেতাদের সাথে ঘনিষ্ঠতা রাখতেন। তিনি কখনো জামায়াত, কখনো বিএনপি হয়ে নিজের অপকর্ম চালিয়ে যাওয়ার সবরকম চেষ্টা চালিয়েছেন। বিভিন্ন সেক্টর থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ বাণিজ্য করেছেন।
তথ্যানুসন্ধানে আরো জানা যায়, সাতক্ষীরার ডিসি মোস্তাক আহমেদ ভালো কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প পুরস্কার পেয়েছিলেন ।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.