শারমিন সুলতানা,পলাশ (নরসিংদী) প্রতিনিধি
পলাশ পারুলিয়া তিন গম্বুজ নীল মসজিদটি ঢাকার অদূরে নরসিংদী জেলায় অবস্থিত। নরসিংদীর পলাশে মোগল আমলের মুসলিম সভ্যতার এই ঐতিহাসিক নিদর্শনটি ৪০০ বছর আগের। পারুলিয়ার তিন গম্বুজবিশিষ্ট নীল রঙের মসজিদটি আজও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
এর পাশেই রয়েছে ঈশা খাঁর পঞ্চম অধস্তন পুরুষ দেওয়ান শরিফ খাঁ ও তার স্ত্রী মুর্শিদ কুলি খাঁর কন্যা জয়নব বিবির যুগল সমাধী (মাজার)। জানা যায়, ১৭১৯ হিজরিতে তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটি নির্মাণ করেন জয়নব বিবি। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৫৮০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৭২২ পর্যন্ত সময়ে বর্তমান নরসিংদী (ঢাকা জেলার এ অঞ্চল মহেশ্বরদী) নামে পরিচিতি লাভ করে। ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে মুর্শিদ কুলি খাঁ বাংলার সুবেদার নিযুক্ত হন ও তার কনিষ্ঠ কন্যা বিবি জয়নবকে ঈশা খাঁর পঞ্চম অধস্তন পুরুষ মনোয়ার খাঁর পঞ্চম ছেলে দেওয়ান শরিফ খাঁর সঙ্গে বিবাহ দিয়ে জামাতাকে মহেশ্বরদী পরগনার দেওয়ান নিযুক্ত করেন। তখন থেকেই তিনি দেওয়ান শরিফ খাঁ নামে পরিচিতি লাভ করেন এবং এলাকার নামকরণ করা হয় শরীফপুর।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, হুসেন শাহী শাসনামলে ধনপদসিংহ নামে এক রাজা ছিল তার পুত্র রাজা নরসিংহ শীতলক্ষ্যার তিন মাইল আগে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে বসতি গড়ে তোলেন এবং তার নামে স্থানের নামকরণ করেন নরসিংহপুর। আজও নগর নরসিংহপুর নামে একটি গ্রাম বিদ্যমান রয়েছে। তবে কালের বিবর্তনে শরীফপুর নামের বিলুপ্তি ঘটেছে।
তখনকার সময়ে ব্রহ্মপুত্র নদ নিয়ে বড় বড় পাল উড়িয়ে পালের নৌকা আসা-যাওয়া করতো। পালের নৌকা দেখতে এলাকাবাসী নদের তীরে ভীর করত। তখনই নাম পরিবর্তণ করে নমকরন করা হয় পারুলিয়া। ওতাছাড়া, নৌকায় নদী পারাপার হতো বলে এর নামকরণ পারুলিয়া হয়। ১৭১৯ হিজরিতে দেওয়ান শরিফ খাঁর স্ত্রী জয়নব বিবি এলাকার মানুষের চাহিদা মোতাবেক মসজিদটি নির্মাণ করেন।
মসজিদের আওতায় রয়েছে ১২ বিঘা জমি। এখানে রয়েছে চারটি শান বাঁধানো পুকুরঘাট। মসজিদটি ৫ ফুট প্রস্থ দেয়াল, তার মধ্যে মজবুত পাথর দিয়ে খিলানের উপর ৬০ ফুট দৈর্ঘ্য মসজিদ নির্মিত। মসজিদে প্রবেশের জন্য রয়েছে একটি প্রধান গেট, পূর্বদিকে তিনটি দরজা, উত্তর-দক্ষিণে একটি করে দরজা। মসজিদের পাকা বেষ্টনী প্রাচীরের অভ্যন্তরে রয়েছে প্রশস্ত প্রাঙ্গণ। প্রাঙ্গণের উত্তর-পূর্ব কোণে রয়েছে সুউচ্চ দু’টি মিনার।উত্তর দিকে রয়েছে, টাইলস বাধানো বিশাল একটি অজুখানা। মসজিদের কারুকাজ অত্যন্ত শিল্প সুষমামণ্ডিত। জানা যায় ইরান, বাগদাদ, ইয়েমেন থেকে কারিগর এনে মসজিদের নির্মাণ ও কারুকাজ করা হয়।
মসজিদের সম্মুখভাগের উপর একটি স্মৃতিফলকে লেখা রয়েছে, ( ‘লা ইলাহা ইলালাহু মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’) কার্দে জয়নব বিনতে নাছের জজায়ে দেওয়ান শরিফ, হিজরি ১০২০ সাল। এই প্রাচীন ঐতিহাসিক মসজিদটি ৪০০ বছর আগে নির্মিত হলেও আজও আপন শিল্পকর্মে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে পলাশ উপজেলার নিবিড় পল্লীতে শান্ত পরিবেশে।
১৯০৪ সালে প্রচণ্ড ভূমিকম্পে মসজিদের ছাদে একটি ফাটল দেখা দেয়, আর ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে যায় দেওয়ান সাহেবের কাচারিঘর, নায়েব সাহেবের ভবনটি। মসজিদের পূর্ব কোণে কয়েকটি প্রাচীন কবরের ধ্বংসাবশেষ। মসজিদের বারান্দায় প্রবেশ দরজায় উপরিভাগে ফার্সি ভাষায় লেখা আছে মসজিদ তৈরির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।
পাঠোদ্ধারে জানা যায়, ১১২৮ হিজরিতে নাছেরের কন্যা দেওয়ান শরিফের স্ত্রী জয়নব বিবি মসজিদটি তৈরি করেন। মসজিদের পশ্চিম পাশে পুকুরের পূর্ব তীরে এক গম্বুজবিশিষ্ট সৌধ। পাশাপাশি দু’টি কবর। জানা যায়, ১১২৮ হিজরিতে দেওয়ান শরিফ খাঁ ইন্তিকাল করেন। তার স্ত্রীর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী পরের বছর জয়নব বিবি মারা গেলে স্বামীর পাশেই তাকে দাফন করা হয়। এখনও প্রতিদিন শত শত মুসল্লি মসজিদে নামাজ আদায় এবং মাজার জিয়ারত করেন।
তিন গম্বুজবিশিষ্ট নীল রঙের মসজিদটি ভূমিকম্পে ফাটল দেখা দিলে ১৯৮৯ সালে স্থানীয় লোকজন পূনরায় সংস্কার করেন। ২০১২ সালে মসজিদটি পুনঃসংস্কারের কাজ সমাপ্ত হয়।
দেওয়ান শরিফ খাঁ ও তাহার স্ত্রী জয়নব বিবির মাজার এবং মসজিদটি দেখতে ইতিহাস সন্ধানীরা, দূর দূরান্ত থেকে আগত ভক্ত বৃন্দরা প্রতি দিনই ভীড় করেন।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.