রাসেল আহমেদ,খুলনা প্রতিনিধি
খুলনা থেকে আসে শোকসংবাদ—দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রণীত মামলায় পিপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা আইনজীবী শেখ মো. লুৎফুল কবির নওরোজ শেষপর্যন্ত নিজের জীবন শেষ করেছেন। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) দুই বছরের তদন্ত শেষে চূড়ান্তভাবে এটিকে আত্মহত্যা হিসেবে উল্লেখ করেছে।
তদন্তে উঠে এসেছে, ক্রমবর্ধমান আর্থিক দায়, দাম্পত্য জীবনের অশান্তি এবং মানসিক চাপ নওরোজের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। ২০২৩ সালের ১৬ জুলাই বটিয়াঘাটার তেতুলতলা গ্রামের রূপসা নদীর তীরে একটি পুকুরপাড় থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিন দিন আগে, ১৩ জুলাই, তিনি পীর খানজাহান আলী সেতু থেকে নদীতে ঝাঁপ দেন। নদীতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেতুর পিলার ও লোহার অংশে আঘাত পায়, পরে পানির স্রোতে ভেসে ১৬ জুলাই দেহ তীরে আসে।
পিবিআইয়ের সাব-ইন্সপেক্টর মো. রাজীব রায়হান জানিয়েছেন, নওরোজ দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক সংকটে ছিলেন। তিনি রূপসা উপজেলার নৈহাটি গ্রামের ইব্রাহিম শেখের স্ত্রী বিলকিস বেগমের কাছ থেকে জমি দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে ২২ লাখ টাকা নেন; জমি দিতে না পারায় ১৮ লাখ টাকার চেক দেন। কিন্তু ব্যাংকে টাকা না থাকায় চেকটি বাউন্স হয়ে যায় এবং তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। গোপালগঞ্জের বারেক মিয়ার স্ত্রী জোছনা বেগমের কাছ থেকেও তিনি টাকা ধার নেন। দেনাদেনা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় মানসিকভাবে ক্রমশ ভেঙে পড়েন।
ব্যক্তিগত জীবনের দিক থেকেও নওরোজের জীবন অস্থিরতায় ভরা ছিল। ১৯৯২ সালে চম্পা বেগমের সঙ্গে প্রথম বিয়ে ভেঙে যায়, ২০০২ সালে জেসমিন নাহারের সঙ্গে দ্বিতীয় বিয়ে থেকে দুই পুত্রের জন্ম হয়। ২০০৮ সালে হেনাকে বিয়ে করেন, যা ছয় বছরের মধ্যে শেষ হয়। সর্বশেষ ২০১৯ সালে বয়রার সুলতানা পারভীন চুমকিকে বিয়ে করেন; মাত্র ১৯ দিন পরেই তার জীবন শেষ হয়।
চার্জশিটে বলা হয়েছে, আত্মহত্যার ঘটনায় সুলতানা পারভীন চুমকিকে সন্দিগ্ধ করা হলেও কোনো প্রত্যক্ষ বা বস্তুনিষ্ঠ প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বাদীও সাক্ষ্য দিতে পারেননি। তাই তাকে মামলার দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
ঘটনার দিন নওরোজ খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক তারেক মাহমুদের ডেস্কের ড্রয়ারে একটি চিরকুট রেখে যান। চিরকুটে তিনি লিখেছিলেন, “আমার মৃত্যুর কারণে যেন আদালতের কার্যক্রম একদিনও বন্ধ না হয়।”
২৪ আগস্ট পিবিআই তদন্ত শেষে চার্জশিট আদালতে দাখিল করে। সর্বশেষ ধার্য তারিখে বাদী সময়ের আবেদন করেন। নওরোজের মৃত্যু শুধু তার পরিবার ও বন্ধুদের জন্য নয়, খুলনার আইন ও প্রশাসনিক মহলের জন্যও গভীর শোকের সংবাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.