রাসেল আহমেদ, খুলনা প্রতিনিধি
খুলনার লবণচরা এলাকার দরবেশ মোল্লা গলির ট্রিপল খুন এখন পুরো শহরজুড়ে তীব্র আলোচনার বিষয়। শিশু মোস্তাকিম (৮), ফাতিহা (৬) এবং তাদের নানি মহিতুন্নেছার হত্যার নৃশংসতা যেমন সবাইকে শিউরে তুলেছে, ঠিক তেমনি তদন্তে পরিবারকেও সন্দেহের বাইরে রাখা যাচ্ছে না। দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও রহস্য ঘনীভূত হচ্ছে।
এই ঘটনার বাদী নিহত দুই শিশুর বাবা শেফার আহম্মেদ। তিনি বলেন, “রবিবার সকালে বাচ্চাদের শাশুড়ির কাছে দিয়ে অফিসে যাই। দুপুরে মেয়ে ফাতিহাকে দাঁতের চিকিৎসা করিয়ে আবার বাড়িতে রেখে কাজে ফিরে যাই। রাতে স্ত্রী রুবি আক্তার বাসায় ফিরে গেটের সামনে ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়া না পেয়ে ভেতরে ঢোকে।” শেফার আহম্মেদ জানান, ঘরে ঢুকে দরজা ভাঙা, বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন এবং পুরো বাসায় অস্বাভাবিক পরিবেশ দেখে তিনি হতবাক হয়ে যান।
তিনি আরও বলেন, “মুরগির খামারের ভেতর শাশুড়ির রক্তাক্ত দেহ পড়ে ছিল। আর আমার দুই সন্তান অচেতন অবস্থায় পড়ে ছিল। স্থানীয়দের নিয়ে দ্রুত হাসপাতালে ছুটে যাই, কিন্তু ডাক্তার জানান তারা আর নেই।” তার কণ্ঠে ছিল অসহায়তা ও ক্ষোভ। তিনি ট্রিপল হত্যাকাণ্ডের পেছনে তার মামাতো ভাই শামীম আহম্মেদের ভূমিকা থাকতে পারে বলে সন্দেহ করেন। শেফার আহম্মেদের দাবি, জমি নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ এবং জাল দলিলের ঘটনা এই সংঘর্ষকে আরও জটিল করে তুলেছিল। তিনি বলেন, “শামীম আগেও অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়েছিল। এখন জামিনে আছে। প্রতি পদে আমাদের হয়রানি করেছে।”
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হত্যার সময়সীমা দুপুরের পর। ধারণা করা হচ্ছে প্রথমে শিশু মোস্তাকিম ও ফাতিহাকে হত্যা করা হয়। সেই সময় নানি মহিতুন্নেছা বাথরুমে গোসল করছিলেন। গোসল শেষ করে বের হওয়ার পর তাকেও হত্যা করা হয়।
সূত্রটি জানায়, তদন্তকারীরা লক্ষ্য করেছেন, মা রুবি আক্তারের আচরণও স্বাভাবিক নয়। তিনি একেক সময় একেক রকম তথ্য দিচ্ছেন, যা তদন্তকে জটিল করে তুলছে। তিনদিনেও সন্তানদের মৃত্যুর পর তাকে কান্না করতে দেখা যায়নি। পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী, তিনি পরিবারের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন এবং তার নামে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সম্পত্তি রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “মহিতুন্নেছার এক দেবরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে আনা হয়েছে। তিনি সহযোগিতা করতে চাইলে পরিবার থেকে তাকে বিষয়ে নীরব থাকতে চাপ দেওয়া হচ্ছে। পরিবারকে সন্দেহের বাইরে রাখা হচ্ছে না।”
তিনি আরও জানান, জমি-জমার বিরোধ, পারিবারিক আধিপত্য, প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর চেষ্টা কিংবা মাদকসংশ্লিষ্ট বিরোধ—সব সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনার পর সিআইডি, পিবিআই, ডিবি এবং র্যাব-৬ ছায়াতদন্ত শুরু করেছে।
লবণচরা থানার অফিসার ইনচার্জ হাওলাদার সানওয়ার হুসাইন মাসুম বলেন, আমরা ঘটনাস্থল থেকে সব আলামত সংগ্রহ করেছি। রক্তমাখা ইট ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। শিশু দু’টির মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা পাওয়া গেছে। পারিবারিক বিরোধকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত এগোচ্ছি। কাউকে অযথা হয়রানি নয়, প্রকৃত দোষীদের আইনের মুখোমুখি আনা হবে।”
এদিকে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ও ক্ষোভ বাড়ছে। কেউই বিশ্বাস করতে পারছেন না, এত ছোট দুই শিশুকে এমন নির্মমভাবে হত্যা করা হতে পারে।
রহস্যে ভরা এই ট্রিপল হত্যা এখনো স্পষ্ট সমাধানের পথে পৌঁছায়নি। তবে তদন্তকারীরা বলছেন, সময়ের অপেক্ষা—দোষী যে-ই হোক, শিগগিরই সত্য বেরিয়ে আসবে
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.