রাসেল আহমেদ,খুলনা প্রতিনিধি
খুলনার বিভিন্ন ঘাটে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) ইউরিয়া সার খালাসের নামে চলছে সংঘবদ্ধ চোরাচালান। সাম্প্রতিক সময়ে চুয়াডাঙ্গায় প্রায় ২০ টন সরকারি ইউরিয়া সার জব্দ হওয়ার পর বিষয়টি প্রশাসনের নজরে এলেও স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ—প্রতিদিনই সরকারি সার কালোবাজারে বিক্রি হচ্ছে। আর এ কাজে জড়িত সরকারি গুদামের কিছু অসাধু কর্মকর্তা, পরিবহন মালিক ও প্রভাবশালীরা।
সূত্র জানায়, অতিরিক্ত মুনাফার লোভে গড়ে ওঠা একটি সিন্ডিকেট খুলনা অঞ্চলের কৃষি খাতকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। কোটি কোটি টাকার এই সার চক্র বছরের পর বছর ধরে সরকারি সার পাচার করছে। অভিযোগ উঠেছে—বিষয়টি জানলেও বিসিআইসি কর্তৃপক্ষ কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
বিসিআইসির খুলনা ক্যাম্প জানায়, চলতি বছর খুলনার বিভিন্ন ঘাটে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৬৫০ টন ইউরিয়া সার খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে। চারটি জাহাজ—অলিম্পিয়া লগার, গ্লোবাল এম্বিশন, নিকোলাস এ ও লটিকা নারি—মারফত এসব সার দেশে আনা হচ্ছে। সার দেশের ৩৪টি গুদামে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বে রয়েছে সামিট অ্যাসোসিয়েটস। আবার তারা সাব-কন্ট্রাক্ট দিয়েছে জুয়েল ট্রান্সপোর্টকে।
নিয়ম অনুযায়ী সার ঘাটে খালাস হয়ে বস্তাবন্দি অবস্থায় গুদামে যাওয়ার কথা। সেখান থেকে ডিলাররা বরাদ্দ অনুযায়ী সার সংগ্রহ করে কৃষকদের হাতে পৌঁছে দেবেন। কিন্তু এই পুরো সরকারি তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার আড়ালে চলছে বড় ধরনের জালিয়াতি ও চোরাচালান। স্থানীয় সার ব্যবসায়ীদের অভিযোগ—ঘাট থেকে নামানো সার অনেক সময় গুদামে না গিয়ে সরাসরি কমদামে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে বড় ব্যবসায়ীদের কাছে। কাগজে-কলমে গুদামে সংরক্ষণের দেখিয়ে ট্রাকভর্তি সার বাইরে পাচার করা হচ্ছে।
একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “ট্রাক ট্রাক সার গুদামে না গিয়ে বাইরে চলে যায়। ২০ টন সার কালোবাজারে বিক্রি হলে আট লাখ টাকা পর্যন্ত লাভ হয়। পরিবহন মালিক ও গুদাম কর্মকর্তারা ভাগাভাগি করে।”
সাম্প্রতিক ঘটনায় গত ৮ নভেম্বর গভীর রাতে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গোষ্টবিহার গ্রামে একটি ট্রাক সারসহ আটক করে উপজেলা কৃষি বিভাগ। ট্রাকটি শিরোমনি ঘাট থেকে ছাড়ার পর স্থানীয় ব্যবসায়ী শামীম রেজার গুদামে যাচ্ছিল। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে এক মাসের কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনিছুর রহমান বলেন, “ব্যবসায়ী বৈধ কাগজ দেখাতে পারেননি, তাই তাকে জরিমানা করা হয়েছে। আমরা আরও খোঁজ নিতে পারিনি—এটা আমাদের ভুল।”
জানা যায়, আটককৃত ট্রাকটি জুয়েল ট্রান্সপোর্টের, আর সারটি ছিল সামিট অ্যাসোসিয়েটস কর্তৃক আমদানি করা চালানের অংশ। ওই সময় দেশে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের সার না আসায় পাচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো পক্ষ জড়িত থাকার বিষয়টি স্পষ্ট হলেও এখন পর্যন্ত কোনো তদন্ত হয়নি।
সামিট অ্যাসোসিয়েটসের ম্যানেজার মো. শামীম আহসান বলেন, “ট্রাকটি জুয়েল ট্রান্সপোর্টের হলেও ডিলার সার নিজের বলে স্বীকার করেছেন। তাই আমরা জুয়েল ট্রান্সপোর্টকে দায়ী বলতে পারছি না।”
অন্যদিকে কালোবাজারে সার যাওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে বিসিআইসির মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক) সেরনিয়াবাত রেজাউল বারী বলেন, “আমরা দেখি চাহিদা অনুযায়ী সার গুদামে পৌঁছেছে কি না। সামিট জানিয়েছে চাহিদা অনুযায়ী সার দেবে। তাই আলাদা করে তদন্ত হয়নি।”
খুলনা অঞ্চলের কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি সার পাচার বন্ধ না হলে মৌসুমে কৃষকদের হাতেই পর্যাপ্ত সার পৌঁছাবে না। এতে ফসল উৎপাদনে বড় ধরনের সংকট তৈরি হতে পারে। তারা অবিলম্বে স্বচ্ছ নজরদারি ও পাচার চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.