বকশীগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিনিধি
জামালপুরের বকশীগঞ্জে ভাটি খেওয়ারচর উচ্চ বিদ্যালয় নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির চাপে প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। শিক্ষক নিয়োগে জাল সনদ, ক্লাস ফাঁকি, আর্থিক অনিয়মসহ একের পর এক দুর্নীতিতে ক্ষোভে ফুঁসছে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী। যথাযথ শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় দ্রুত প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন সচেতন মহল।
১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয় একসময় এলাকাবাসীর শিক্ষার প্রধান ভরসা থাকলেও বর্তমানে সম্পূর্ণ হযবরল অবস্থা। অনুসন্ধানে জানা যায়, বিদ্যালয়ের ১৮ জন শিক্ষকের মধ্যে অন্তত ৯ জনের বিরুদ্ধে জাল সনদ ও বিভিন্ন জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। ইতোমধ্যে জাল সনদে চাকরি নেওয়ায় ৬ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
অভিযোগ রয়েছে, সাবেক প্রধান শিক্ষক নুর মোহাম্মদের সুপারিশে জাল সনদধারী এসব শিক্ষক এমপিওভুক্ত হয়েছেন। সহকারী শিক্ষক রুমা আক্তারের এইচএসসি সনদে জিপিএ জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। তার প্রকৃত ফল ১.৮০ হলেও সনদে তা ২.৮০ করা হয়েছে। একইভাবে সহকারী শিক্ষক তৌহিদুল ইসলামের এসএসসি তৃতীয় বিভাগ হলেও ঘষামাজা করে প্রথম বিভাগ দেখানো হয়েছে। তবে তারা অভিযোগ অস্বীকার করেন।
এছাড়া স্নাতক সনদ জাল থাকার অভিযোগ রয়েছে সহকারী শিক্ষক আতোয়ার রহমানের বিরুদ্ধেও।
শুধু সনদ জালিয়াতি নয়, শিক্ষকদের অনুপস্থিতি, প্রক্সি শিক্ষক দিয়ে পাঠদান ও কোচিং বাণিজ্যের অভিযোগেও ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা। শিক্ষার্থীরা জানায়, নিয়মিত ক্লাস না হওয়ায় পড়াশোনায় ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
২০২৪ সালের মার্চে দায়িত্ব পাওয়া ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবু নোমান নুরুজ্জামানের বিরুদ্ধেও উঠেছে একাধিক অভিযোগ। সভাপতির অনুমতি ছাড়াই ব্যাংক থেকে অর্থ উত্তোলন, অনিয়মিত আর্থিক লেনদেন, প্রক্সি শিক্ষক দিয়ে পাঠদান ইত্যাদি বিষয়ে প্রশ্ন উঠে। যদিও তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন—পূর্বের প্রধান শিক্ষক নুর মোহাম্মদের সময়েই অনিয়ম হয়েছে।
গত ১২ নভেম্বর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ জহুরুল হোসেন আকস্মিক পরিদর্শনে গেলে আর্থিক অনিয়মসহ বিভিন্ন অসঙ্গতি ধরা পড়ে। এরপরই বিদ্যালয়জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়।
এক অভিভাবক বলেন, “শিক্ষকদের ক্লাস ফাঁকি ও অনিয়মে শিক্ষার মান ভেঙে পড়েছে। ফলাফলেও নানা কারসাজি হচ্ছে।”
এক স্থানীয় সমাজসেবক জানান, “স্বজনপ্রীতি ও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে দীর্ঘদিন ধরে স্কুল পরিচালনায় স্বার্থসিদ্ধি বড় ভূমিকা রাখছে।”
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজাদুর রহমান ভুইয়া বলেন, “বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ জহুরুল হোসেন জানান, “পরিদর্শনে আর্থিক অনিয়মসহ বিভিন্ন অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। শিক্ষার মানোন্নয়ন ও শৃঙ্খলা ফেরাতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.