গিয়াস উদ্দিন মিয়া, গৌরনদী (বরিশাল) প্রতিনিধি
বরিশালের গৌরনদীতে ভূল চিকিৎসায় সিজারিয়ান অপারেশনে সাথি আক্তার পরী (২২) নামে এক প্রসূতি মায়ের মৃত্যু’র অভিযোগ পাওয়া গেছে। রোগীর মৃত্যুর পর ক্লিনিকের কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা গা ঢাকা দিলে উত্তেজিত জনতা ক্লিনিক ভাঙচুর করেছে।
শনিবার (২২ নভেম্বর ২০২৫) রাতে উপজেলার বাটাজোর হাট এলাকার মদিনা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এ ঘটনা ঘটে। নিহত পরী পার্শ্ববর্তী উজিরপুর উপজেলার ভরশাকাঠি গ্রামের ইমন আকনের স্ত্রী।
এ ঘটনায় নিহত সাথী আক্তারের স্বামী ইমন আকন বাদি হয়ে রোববার সকালে ৪ জনের নামউল্লেখ সহ আরো অজ্ঞাতনামা ৫ থেকে ৬ জনকে আসামি করে গৌরনদী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
পরীর শ্বশুর নজরুল আকন জানান, তার পুত্রবধু’র প্রসব বেদনা শুরু হলে শনিবার বেলা ১১টার দিকে গৌরনদীর বাটাজোর মদিনা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি করেন। এরপর ক্লিনিকের কর্তব্যরত ডা. রাজিব কর্মকার তার পুত্রবধুকে ৫ হাজার টাকার বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার করায়। পরীক্ষা নিরীক্ষার রিপোর্ট দেখে ডা, রাজিব জানান, পরীর নরমাল ডেলিভারি হবেনা, তাকে সিজার করানো লাগবে।
তিনি (নজরুল) সিজার করাতে আপত্তি জানালে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ বরিশাল থেকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক এনে অপারেশন করানোর আশ্বাস দেন। শ্বশুর নজরুল অভিযোগ করে আরো বলেন, শনিবার ‘বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে অপারেশনের ডা. সমিরন হালদার অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে এক ঘণ্টা পর সিজার সম্পন্ন করে দ্রুত চলে যায়।
নবজাতককে আমাদের কোলে দেওয়া আধাঘণ্টা পর নবজাতকের মা পরীকে বেডে নিয়ে আসে নার্সরা। তখন পরীর শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল ও শরীর সম্পূর্ণ সাদা দেখা যায়। এসময় কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা জানায়, ক্লিনিকে অক্সিজেন সিলিন্ডাার নেই, বাহির থেকে আনতে হবে। এরপর একজন স্টাফ অক্সিজেন সিলিন্ডার আনতে গিয়ে আর ফিরে আসেননি।
পরীর অবস্থা আরও খারাপ হলে চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে ডা. রাজিব কর্মকার এসে পরীকে পরীক্ষা করে কোনো কথা না বলে দ্রুত বের হয়ে যান। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই ক্লিনিকের সব স্টাফ পালিয়ে যায়। আমরা তখন পাশের একটি ক্লিনিক থেকে এক জন ডাক্তার ডেকে আনলে পরীক্ষা করালে তিনি জানান, পরী মারা গেছে।
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ জনতা ক্লিনিকে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পরিবারের স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, ‘ডাক্তারের অবহেলা, উদাসীনতা, ক্লিনিকে পর্যাপ্ত জরুরি সরঞ্জাম না থাকার কারণে অপারেশনের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ও পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা না পাওয়ায় পরীর মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে নিহতের স্বজনরা জানান।
এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য অভিযুক্ত ডা. সমিরন হালদারের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন রিং করা হলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ক্লিনিকের কর্তৃপক্ষ গা ঢাকা দেয়ায় তাদের বক্তব্যও পাওয়া সম্ভব হয়নি।
গৌরনদী মডেল থানার ওসি মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘খবর পেয়ে দ্রুত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় নিহত সাথী আক্তার পরীর স্বামী ইমন আকন বাদি হয়ে মদিনা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে মালিক এনামূল হক ডালিম, ডা. সমিরন হালদার, ডা. রাজিব কর্মকার সহ ৪ জনের নামউল্লেখ করে আরো অজ্ঞাতনামা ৫ থেকে ৬ জনকে আসামি করে গৌরনদী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
অভিযুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তারের জোর প্রচেষ্টা চলছে।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা, মো. সাহতা জারাব সালেহিন বলেন, ‘বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। আমার জানামতে ওই ক্লিনিকের লাইসেন্স নবায়ন নেই। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

