রাসেল আহমেদ,খুলনা প্রতিনিধি
খুলনা নগরীর ব্যস্ততম শিববাড়ী মোড়ে ‘অর্জন’ নামের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ভাস্কর্য একসময় ছিল দৃষ্টিনন্দন। চারপাশে গড়া হয়েছিল ফুলের বাগানও। তবে কয়েক মাস ধরে প্রার্থী ও সমর্থকদের বেপরোয়া প্রচারণায় সেই সৌন্দর্য এখন প্রায় আড়ালে।
ফেস্টুন-ব্যানারে পুরো মোড়টি এমনভাবে ঢেকে গেছে যে ভাস্কর্যটি দেখতে পথচারীকেও দাঁড়াতে হয়। অতিরিক্ত প্রচারের কারণে চলতি শীত মৌসুমে বাগানে নতুন চারা রোপণ পর্যন্ত বন্ধ রেখেছে নগর কর্তৃপক্ষ।
একই চিত্র দৌলতপুর নতুন রাস্তা মোড়েও। খুলনা সিটি করপোরেশন স্থাপিত ‘বীর বাঙালি’ ভাস্কর্যটি ব্যানারের চাপে এতটাই আচ্ছাদিত যে মূল কাঠামো আর চোখে পড়ে না।
ময়লাপোতা মোড়ের ষাটগম্বুজ রেপ্লিকা, রয়েল মোড়ের রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ নগরীর সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য তৈরি স্থাপনাগুলোও একইভাবে ঢেকে গেছে নানা দলের প্রচারণায়। গুরুত্বপূর্ণ মোড় ছাড়াও ফুটপাত, ডিভাইডার, সড়কের মাঝ—সবখানেই ব্যানার–বিলবোর্ডের আধিপত্য।
নাগরিক সমাজ বলছে, এ অবস্থায় শুধু নগরীর শ্রী নষ্ট হচ্ছে না, পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব বাবুল হাওলাদার বলেন, “মানুষ প্যানা–ব্যানারের ঝামেলা থেকে মুক্তি চেয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে উল্টো পরিস্থিতি। সবুজায়ন ঢেকে যাচ্ছে, প্লাস্টিকের ব্যবহার বাড়ছে। নির্বাচন কমিশন ও সিটি করপোরেশনকে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে।”
সরেজমিন দেখা গেছে, বিএনপি, জামায়াত ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের বহু নেতা–কর্মীর ফেস্টুন ও বিশাল আকারের বিলবোর্ডে মোড়গুলো প্রায় অচেনা হয়ে উঠেছে। অনেক জায়গায় ভাস্কর্য ও ফোয়ারার মূল অংশ পর্যন্ত ঢাকা পড়ে গেছে।
শহরের বিভিন্ন স্থাপনায় অনুমতি ছাড়াই ব্যানার টাঙানোয় বিরক্ত ব্যবসায়ী ও বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলো। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থার এক ব্যবস্থাপক বলেন, “বিলবোর্ড দখল হলে কোম্পানিগুলো ভাড়া কেটে রাখে। প্রতিবাদ করলে উল্টো তেড়ে আসে অনেকেই।”
শিববাড়ী মোড়ে আড্ডা দিচ্ছিলেন খান কমার্স কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরমান হোসেন। তিনি বলেন, “ছবি দেখে ভোট দেওয়ার দিন শেষ। অতিরিক্ত প্রচার যারা করছেন, তারাই শহরের সৌন্দর্য নষ্ট করছেন। মানুষ এসব দেখেই সিদ্ধান্ত নেবে।”
বিএনপি খুলনা মহানগরের সাবেক সভাপতি ও খুলনা–২ আসনের প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, “আমি প্যানামঞ্জু হতে চাই না। ভাস্কর্য বা ফোয়ারার চারপাশে কোনো ফেস্টুন পছন্দ করি না। দুই দিনের মধ্যে যেগুলো লাগানো হয়েছে, সেগুলো খুলে ফেলতে নির্দেশ দিয়েছি।”
খুলনা মহানগর জামায়াতের আমির ও খুলনা–৩ আসনের প্রার্থী মাহফুজুর রহমান বলেন, “বিএনপি সরাতে শুরু করলে আমরা ১৫ মিনিটেই সব খুলে নেব। তপশিল ঘোষণার পর যাইহোক সবই সরাতে হবে।”
নগরবাসীর দাবি, নির্বাচনী প্রচারণা অবশ্যই হওয়া উচিত; তবে তা যেন শহরের স্থাপনা, ভাস্কর্য ও সবুজায়নের ক্ষতি না করে। নির্বাচনের উত্তাপ বাড়লেও শহরের সৌন্দর্য যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়—এমন প্রত্যাশা খুলনার সর্বস্তরের মানুষের।

