রাসেল আহমেদ,খুলনা প্রতিনিধি
সুন্দরবনের হরিণ সংরক্ষণে নানা ধরনের বিপদ বেড়েই চলেছে। কুমিরের কামড়, বাঘের থাবা আর শিকারিদের ফাঁদের ভয়—জলে, স্থলে এবং বনে এই প্রাণীর নিরাপত্তা নেই।
খুলনার কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ ও বাগেরহাটের রামপাল, মোংলায় ও সাতক্ষীরার শ্যামনগরে গরুর মাংস কেজি প্রতি ৭৫০ টাকা, খাসির মাংস ৯০০ টাকা হলেও হরিণের মাংসের কেজি মাত্র ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম কম হওয়ায় এবং বাজারে দুষ্প্রাপ্য হওয়ার কারণে বেকার জনগোষ্ঠীর একাংশ বনাঞ্চলে শিকারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে।
অমাবস্যা ও পূর্ণিমার রাতগুলোতে শিকারির পদচারণা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। তারা হরিণ ধরার জন্য ব্যবহার করছে নাইলন সুতোর ফাঁদ। এ বছর জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত হরিণ শিকারের ৪১টি মামলা হয়েছে। মামলার আসামি ১০২ জন, গ্রেপ্তার করা হয়েছে মাত্র ১৬ জনকে। পলাতক ৮৬ জনকে খুঁজছে পুলিশ। ২০২৩ সালের জরিপ অনুযায়ী, সুন্দরবনে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৬শ’ হরিণের আবাসস্থল রয়েছে।
শিকারিরা দীর্ঘদিন ধরে সুন্দরবনের পাঁচ উপজেলায় সক্রিয়। বিশেষ করে কয়রার আংটিহারা, জোড়শিং, ৪নং কয়রা, মহেশ্বরীপুর এবং পাইকগাছার গড়ইখালিতে শিকারীরা পারস্পরিকভাবে পেশাদার। তাদের সঙ্গে পারদর্শী দিনমজুররাও কাজ করে, দৈনিক এক হাজার টাকা পারিশ্রমিক নিয়ে শিকারিদের কার্যক্রম অমাবস্যা ও পূর্ণিমার সময় সীমিত না রেখে বনাঞ্চলে চলে। শিকার হওয়া হরিণের মাংস জোয়ার ভাটা উপেক্ষা করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয়। এক শ্রেণির ক্রেতাও বিশেষভাবে এই মাংস সংগ্রহ করে।
খুলনা–পশ্চিম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এ জেড এম হাছানুর রহমান বলেন, “হরিণ সংরক্ষণের জন্য মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যেই স্মার্ট পেট্রোলিং টিম গঠন করেছে। অমাবস্যা ও পূর্ণিমার সময় তারা বনে অবস্থান রাখে। হরিণ পাচার ও শিকার প্রতিরোধে ডোন ও বন সংলগ্ন এলাকায় উঠান বৈঠক চলছে।”
বন বিভাগের নিযুক্ত আইন কর্মকর্তা মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, “২০২২ সাল থেকে বাগেরহাট ও খুলনার ১৫০টি বন মামলা বিচারাধীন। হাতে নাতে ধরা পড়া ৯০ শতাংশ আসামিরা সাজাপ্রাপ্ত। পালাতক আসামিদের মধ্যে ৩০ শতাংশের সাজা হয়েছে। মামলা গুলো মূলত হরিণ শিকার এবং কীটনাশক দিয়ে মাছ ধরার সম্পর্কিত।”
উল্লেখযোগ্য সাজাপ্রাপ্ত ও পেশাদার শিকারিদের মধ্যে রয়েছেন কয়রার মহারাজপুরের দিদারুল ইসলাম, আংটিহারার মিজানুর রহমান গাজী, দাকোপের বানিশান্তার ওমর আলী, কালাবগীর শফিকুল বৈদ্য, ইয়াসিন গাজী এবং রামপালের ফরিদ হাওলাদার। বন বিভাগের অভিযান ও পুলিশি তৎপরতার মধ্যেও শিকারিরা তাদের কার্যক্রম থামাতে প্রস্তুত নয়।
সুন্দরবনের হরিণ সংরক্ষণের জন্য স্থানীয় প্রশাসন, বন বিভাগ এবং পুলিশ একসাথে কাজ করছে। তবে কম দামের কারণে এই বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী রক্ষা করা একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.