হুমায়ুন কবির মিরাজ, বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার শংকরপুরে দুষ্কৃতকারীদের দেওয়া আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে এক কৃষকের সারা বছরের ঘাম ঝরানো পরিশ্রমে উৎপাদিত ধান। ঘটনায় পুরো এলাকাজুড়ে নেমে এসেছে বিষাদের ছায়া। ধান হারিয়ে পরিবার নিয়ে দিশেহারা কৃষক রাজু।
বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) ভোররাতে শংকরপুর–কুলবাড়ীয়া মাঠে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। রাতের অন্ধকারে আগুনে পুরো মাঠজুড়ে সৃষ্টি হয় আতঙ্কের পরিবেশ।
স্থানীয়রা জানান, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক রাজু পেশায় একজন ভাঙাড়ি ব্যবসায়ী। সংসারের বাড়তি আয় ও সন্তানদের পড়াশোনার খরচ চালাতে তিনি ১০ কাঠা জমি বন্ধক নিয়ে চাষাবাদ করছিলেন। নিজের শ্রম আর পরিবার-পরিজনের কষ্ট দিয়ে উৎপাদিত ধান কয়েকদিন ধরে কাটার পর মাঠে শুকানোর জন্য রাখা ছিল।
কিন্তু গভীর রাতে কোনো একদল অজ্ঞাত দুর্বৃত্ত ধানের গাদায় আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায়। মুহূর্তেই আগুন লেলিহান হয়ে ধানগুলো ছাইয়ে পরিণত হয়।
কৃষক রাজু ভোরে মাঠে এসে অবর্তমান ধানের স্তূপ দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন এ ধান ছিল আমাদের সারা বছরের আশা-ভরসা। এক ফোঁটা করে ঘাম ঝরিয়ে ফলিয়েছিলাম। আজ সব পুড়ে ছাই। কে বা কারা করল জানি না, কিন্তু আমাদের সর্বনাশটুকুই করে গেল।
ভুক্তভোগী রাজুর স্ত্রী বলেন, আমরা নিজের হাতে পরিচর্যা করে ধান তুলেছি। এই ধানের পয়সায় বাচ্চাদের পড়াশোনা থেকে শুরু করে ঘর চালানো সবই চলত। এখন আমরা কীভাবে চলব বুঝতে পারছি না। মনে হচ্ছে আমাদের সংসারের আলো যেন নিভে গেছে।
স্থানীয়দের ধারণা, পূর্ব কোনো শত্রুতার জের ধরে পরিকল্পিতভাবে এ অগ্নিসংযোগ করা হয়ে থাকতে পারে। তারা চান প্রশাসন দ্রুত ঘটনার সঠিক তদন্ত করে জড়িতদের গ্রেপ্তার করুক।
এ বিষয়ে ঝিকরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুর মোহাম্মদ বলেন, এ ঘটনায় এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয় কৃষকরা বলেছে, এই ধরনের নাশকতা শুধু একটি পরিবারকেই বিপর্যস্ত করে না উপজেলা পর্যায়ের কৃষি নিরাপত্তাকেও হুমকির মুখে ফেলে। তারা চান উপজেলা প্রশাসন এমন ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককে জরুরি সহায়তা প্রদান করুক।

