রিপন হোসেন সাজু, মনিরামপুর (যশোর)
যশোরের মনিরামপুর ও অভয়নগর উপজেলার মধ্যে যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম টেকা নদীর ওপর নির্মিত অস্থায়ী কাঠের ব্রিজটি ভেঙে পড়ায় দুই উপজেলার হাজার হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে নড়বড়ে হয়ে পড়া ব্রিজটি গত এক সপ্তাহ আগে সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়ে।
ব্রিজটি ভেঙে যাওয়ায় শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও ব্যবসা-বাণিজ্য কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ভোগান্তি লাঘবে অভয়নগর উপজেলা প্রশাসন জরুরি ভিত্তিতে ব্রিজটি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর টেকা নদীর ওপর একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এতে ব্যয় ধরা হয় ৭ কোটি ৫৭ লাখ ২৮ হাজার ৫০৭ টাকা। সেতুর প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হলেও আইনি জটিলতায় পড়ে চার বছর ধরে নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। ফলে দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসী চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
কাঠের ব্রিজটি ভেঙে পড়ার পর উপায় না পেয়ে অনেকেই নৌকায় নদী পার হচ্ছেন। দূর-দূরান্ত থেকে আসা মোটরসাইকেল আরোহীরা মাঝপথ থেকে ফিরে যাচ্ছেন। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে প্রায় ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার ঘুরে বিকল্প পথে গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মনিরামপুর ও অভয়নগর উপজেলার অন্তত ২৫ থেকে ৩০টি গ্রামের মানুষ নওয়াপাড়া–মনিরামপুর সড়কে টেকা ব্রিজ ব্যবহার করে চলাচল করতেন। এ ছাড়া রাস্তাটি আড়াআড়ি হওয়ায় যশোরের কেশবপুর, খুলনার ডুমুরিয়া, পাইকগাছা এবং সাতক্ষীরা জেলার মানুষও সময় বাঁচাতে এ পথ ব্যবহার করতেন।
অভয়নগরের বারান্দি ও দিঘলিয়া গ্রামের শতাধিক ছাত্রী মনিরামপুর উপজেলার টেকারঘাট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। ব্রিজ ভেঙে যাওয়ায় তারা এখন স্কুলে যেতে পারছে না। জরুরি রোগী হাসপাতালে নেওয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে। কৃষকরাও উৎপাদিত ফসল নদীর দুই পাশের হাটবাজারে নিতে পারছেন না।
সেতু নির্মাণ শুরু হওয়ার পর দুই উপজেলার লাখো মানুষের ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে নির্মাণাধীন সেতুর পাশে অস্থায়ীভাবে একটি কাঠের ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছিল। যানবাহনের অতিরিক্ত চাপে ব্রিজটি দীর্ঘদিন ধরেই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল।
ভ্যানচালক আব্দুর রহিম বলেন, এই সড়কের কাঠের ব্রিজ দিয়ে ভ্যান চালিয়েই জীবিকা নির্বাহ করতাম। সাত দিন আগে ব্রিজটি ভেঙে যাওয়ায় চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে অন্য এলাকায় গিয়ে ভ্যান চালাচ্ছি। দ্রুত মেরামতের দাবি জানাচ্ছি।
বারান্দি গ্রামের শেখ রাজু আহম্মেদ বলেন, এই ব্রিজটি ছিল দুই উপজেলার ২৫ থেকে ৩০ হাজার মানুষের প্রধান যাতায়াত পথ। এখন স্কুল-কলেজে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। এলাকার মানুষ নৌকায় পারাপার হচ্ছে।
মনিরামপুর উপজেলার পাঁচাকড়ি গ্রামের মধু রায় জানান, অসুস্থ স্ত্রীকে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিতে গিয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয় তাকে। শেষ পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার ঘুরে হাসপাতালে পৌঁছাতে হয়েছে।
এ বিষয়ে অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালাউদ্দিন দিপু বলেন, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে ব্রিজটি সংস্কারের জন্য প্রকল্প থেকে তিন লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দ্রুত মেরামতের কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.