ফকিরহাট (বাগেরহাট) প্রতিনিধি
বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার প্রাণভ্রমরা ভৈরব নদ এখন মৃত্যুযন্ত্রনায় ছটফট করছে। ২০২০ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নদটির ১৭.৫ কিলোমিটার এলাকা পুনঃখনন করলেও বর্তমানে সেই প্রকল্পের সুফল মিলছে না। স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, খুলনা ওয়াসার একটি পাইপলাইন নদের জন্য ‘মরণফাঁদ’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ফকিরহাট বাজার সংলগ্ন এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের সেতুর নিচে নদীর মাঝ বরাবর বিশাল একটি পানির পাইপ স্থাপন করা হয়েছে। পাইপের রক্ষার অজুহাতে লোহার খাম্বা বসিয়ে শক্ত বেড়া নির্মাণ করা হয়েছে। এতে নদের জোয়ার-ভাটার স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পলি নদে জমে দ্রুত তলদেশ ভরাট হচ্ছে। কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে করা খননকৃত নদ অংশের চিহ্নও মুছে যাওয়ার পথে।
স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। মধুমতী নদী থেকে খুলনা শহরে পানি সরবরাহের এই প্রকল্প এখন ফকিরহাট ও পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষের জন্য গলার কাঁটা। গত বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ায় সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। ফলে বিঘার পর বিঘা ফসলি জমি তলিয়ে গেছে এবং কয়েক হাজার মাছের ঘের নষ্ট হয়ে চাষিরা অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। নৌপথ বন্ধ হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যেও বড় ধরনের ধস নেমেছে। ফকিরহাট বাজারের ব্যবসায়ী আলমগীর বলেন, “এক সময় এই নদে বড় বড় ট্রলার চলত। এখন পাইপের বাধার কারণে নৌযান চলাচল বন্ধ থাকায় ব্যবসার খরচ কয়েক গুণ বেড়ে গেছে।”
ফকিরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমনা আইরিন বলেন, “ওয়াসার এই পাইপলাইনটি একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জন্য দীর্ঘদিনের ভোগান্তির কারণ। বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।” খুলনা ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরমান সিদ্দিক জানান, পাইপলাইনটি আধুনিকায়ন ও সংস্কারের জন্য চীন থেকে উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি আনা হচ্ছে। যন্ত্রপাতি দেশে পৌঁছালে পাইপলাইনটি এমনভাবে পুনঃস্থাপন করা হবে যাতে নৌযান চলাচল সচল হয়।
তবে এখন বড় প্রশ্ন, এই আশ্বাস কবে বাস্তবায়ন হবে, নাকি ভৈরব নদ চিরতরে হারিয়ে যাবে।

