মহম্মদপুর (মাগুরা) প্রতিনিধি
মাগুরা-২ আসনের বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল নির্বাচন ও সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন। শনিবার সকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। তিনি জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ছিলেন।
স্ট্যাটাসে কাজী সালিমুল হক কামাল উল্লেখ করেন, দীর্ঘ সাত বছর কারাবাস, রাজনৈতিক অবহেলা এবং পরিবারের চরম ভোগান্তির কারণে তিনি আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেবেন না। সক্রিয় রাজনীতি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে জীবনের বাকি সময় পরিবারকে নিয়ে শান্তিতে কাটাতে চান বলেও জানান তিনি। যদিও তাঁর পক্ষে দলীয় নেতাকর্মীরা মাগুরা-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
নিজের রাজনৈতিক জীবনের স্মৃতিচারণ করে তিনি লেখেন, ২০০৮ সালের পর তিনি রাজনীতি থেকে অনেকটাই দূরে ছিলেন। ২০১৭ সালে একটি মিথ্যা মামলায় তাঁকে কারাবরণ করতে হয়। দীর্ঘ কারাবাস শেষে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর অসুস্থ শরীরে তিনি ২২ আগস্ট কারাগার থেকে মুক্তি পান। মুক্তির দিন নেতাকর্মীদের ভালোবাসা ও আবেগ তাঁকে গভীরভাবে নাড়া দেয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি জানান, মুক্তির পর গত ১৬ মাসে মাত্র চারবার মাগুরায় এসেছেন এবং প্রতিবারই নেতাকর্মীদের চোখে ভালোবাসার পাশাপাশি দীর্ঘদিনের কষ্ট ও বেদনা দেখেছেন। গত ১৬ বছর ধরে মাগুরার ত্যাগী নেতাকর্মীরা মামলা, হামলা, জেল ও নির্যাতন সহ্য করেও বিএনপির পতাকা আঁকড়ে ধরে রেখেছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
দলীয় হাইকমান্ডের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে কাজী সালিমুল হক কামাল বলেন, তৃণমূল নেতাকর্মীদের আবেগ ও অনুভূতির কোনো মূল্য দেওয়া হচ্ছে না। ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের জন্য মাগুরা-২ আসনে প্রাথমিক প্রার্থী ঘোষণার পর তৃণমূলে যে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, তা দীর্ঘদিনের অবহেলা ও বঞ্চনারই প্রতিফলন।
তিনি দাবি করেন, মাগুরা-২ আসনের ৫১৩ জন দায়িত্বশীল নেতার মধ্যে ৫০১ জন, ১৯টি ইউনিয়নের ১৮ জন সাবেক চেয়ারম্যান এবং দুইজন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান লিখিতভাবে ওই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু তৃণমূলের সেই মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
কাজী সালিমুল হক কামাল আরও বলেন, ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের বাদ দিয়ে বিতর্কিতদের পুনর্বাসনের চেষ্টা দলকে আদর্শিকভাবে দুর্বল করছে। এতে ভবিষ্যতে দলের সাংগঠনিক ভিত্তি নড়বড়ে হয়ে পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা তুলে ধরে তিনি বলেন, একজন হিন্দু প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ায় ধর্মভীরু ভোটারদের একটি অংশ জামায়াতে ইসলামীর দিকে ঝুঁকে পড়তে পারে—এ নিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে ফিরলে দলের অবস্থান কী হবে, সেটিও তৃণমূলের বড় দুশ্চিন্তার বিষয়।
স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, ‘তৃণমূলই দলের প্রাণ। হাজার হাজার ত্যাগী কর্মীকে উপেক্ষা করে একতরফা সিদ্ধান্ত নিলে দল শক্তিশালী না হয়ে ভেতর থেকে ক্ষয়ে যায়। মাঠপর্যায়ের কর্মীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়লে তার দায় দলকেই নিতে হবে।’
তিনি জানান, নেতাকর্মীদের চাপে পড়ে তিনি স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে দলের বর্তমান অনড় অবস্থান দেখে তিনি বুঝেছেন, তৃণমূলের যুক্তি ও আবেগের কোনো মূল্য নেই।
সবশেষে পরিবারের একান্ত অনুরোধের কথা উল্লেখ করে কাজী সালিমুল হক কামাল বলেন, তিনি আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেবেন না এবং সক্রিয় রাজনীতি থেকে চিরতরে অবসর নিচ্ছেন।
তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, রাজনীতিতে এগিয়ে যাওয়ার অনেক সুযোগ রয়েছে, তবে একটি ভুল সিদ্ধান্ত যেন তাদের ভবিষ্যৎ নষ্ট না করে।
উল্লেখ্য, সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামালকে বাদ দিয়ে মাগুরা-২ আসনে বিএনপি সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরীকে মনোনয়ন দিয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.