রাসেল আহমেদ,খুলনা প্রতিনিধি
খুলনার তেরখাদা উপজেলায় শীতের তীব্রতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ঘন কুয়াশা, হাড় কাঁপানো ঠান্ডা এবং শীতল বাতাসে স্বাভাবিক জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে।
বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষ, দিনমজুর, ছিন্নমূল ও আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাসরত অসহায়–দুস্থরা মারাত্মক কষ্টে রয়েছেন। তবে সরকারি উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ এখনও শুরু হয়নি।
ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের গ্রামাঞ্চল কুয়াশায় ঢাকা থাকে। কুয়াশার কারণে সকালে সড়কে যান চলাচল কমে গেছে। ভ্যান, ইজিবাইক ও সিএনজির সংখ্যা সীমিত হওয়ায় কর্মস্থলে পৌঁছাতে দেরি হচ্ছে শ্রমজীবী মানুষের।
এতে অনেকের দৈনিক আয়ও কমে যাচ্ছে, যা দরিদ্র পরিবারের জীবনযাত্রাকে আরও কঠিন করছে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, খোলা মাঠ, রাস্তার পাশে বা বাড়ির উঠোনে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন দরিদ্র মানুষজন।
অনেকের শরীরে নেই পর্যাপ্ত গরম কাপড়। রাত নামলেই শীতের কষ্ট আরও বেড়ে যায়। শিশু ও বয়স্করা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন।
নাচুনিয়া এলাকার দিনমজুর আলী বলেন, “শীতে কাজ কমে গেছে। ঠান্ডায় শরীর ঠিকমতো চলে না। তবু কাজ না করলে সংসার চলবে না।” তার মতো অনেক মানুষ শীত উপেক্ষা করে জীবিকার তাগিদে বাইরে বের হচ্ছেন।
একই অবস্থা আশ্রয়কেন্দ্র ও খোলা জায়গায় বসবাসরত ছিন্নমূল মানুষের। পর্যাপ্ত কম্বল বা শীতবস্ত্র না থাকায় তাদের রাত কাটছে চরম কষ্টে। শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যাচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। হাসপাতাল সূত্র জানায়, নিউমোনিয়া, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট ও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ চিকিৎসা নিচ্ছেন।
আক্রান্তদের মধ্যে শিশু ও প্রবীণদের সংখ্যাই বেশি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: প্রীতম স্বাক্ষর চক্রবর্তী জানান, শীতকালে শিশু ও প্রবীণরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। তিনি সবাইকে গরম কাপড় ব্যবহার, ঠান্ডা এড়িয়ে চলা এবং অসুস্থ হলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
উপজেলা প্রশাসন শীতবস্ত্র বিতরণের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা হানিফ শিকদার জানান, বরাদ্দ পাওয়া হয়েছে, তবে এখনো বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়নি। প্রকৃত অসহায় ও দুস্থদের তালিকা তৈরি করে শীঘ্রই বিতরণ করা হবে।
স্থানীয়রা মনে করছেন, শীত যত বাড়ছে, দরিদ্র মানুষের সহায়তার প্রয়োজনও ততই বেড়ে যাচ্ছে। দ্রুত ও পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র না পেলে তাদের দুর্ভোগ আরও তীব্র হবে। তেরখাদার এই শীত তাই শুধু আবহাওয়ার খবর নয়—এটি প্রান্তিক মানুষের বেঁচে থাকার সংগ্রামের বাস্তব চিত্র।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.