গিয়াস উদ্দিন মিয়া, গৌরনদী (বরিশাল) প্রতিনিধি
বরিশালের গৌরনদীতে মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হলেও শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ সমর্থক না হওয়ায় এক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার নাম গেজেটভুক্ত না করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হয়েও গেজেটভুক্ত না হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, উপজেলার দক্ষিণ বিল্বগ্রাম এলাকার বাসিন্দা ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক মুক্তিযোদ্ধা মো. আনোয়ার হোসেন সরদার ২০০৪ সালের ৩ আগস্ট মৃত্যুবরন করেন। সে সময় তাকে রাস্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়। তবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হলেও রহস্যজনক কারনে তাকে গেজেটভুক্ত করা হয়নি।
প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধার ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন-আমার বাবা একজন প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনের সকল কাগজপত্র তার রয়েছে। তার মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে দাফনও করা হয়েছে। তিনি জীবিত থাকাকালীণ গেজেটভুক্ত হওয়ার জন্য আবেদন করেও গেজেটভুক্ত হতে পারেননি।
পরবর্তীতে আমার বাবা মারা যাওয়ার পর ২০১৪ সালে তাকে গেজেটভুক্ত করার জন্য অনলাইনে আবেদন করা হয়। কিন্তু তৎকালীণ আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আমার বাবাকে বিএনপি-জামাত আখ্যা দিয়ে বাছাই তালিকা থেকে বাদ দেন। এরপরও তাকে গেজেটভুক্ত করার জন্য আর চেষ্টা করিনি।
অভিযোগ করে মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন- শুধুমাত্র রাজনৈতিক মতাদর্শ ভিন্ন হওয়ায় আমার বাবাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। আমাদের দাবী এই বিজয়ের মাস উপলক্ষে তাকে যেন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় অথবা তাকে যে রাস্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়েছে তা যেন বাতিল করা হয়।
অপরদিকে উপজেলার সরিকল গ্রামের প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের গেজেট ব্যবহার করে মুলাদী উপজেলার বাসিন্দা আরেক নুরুল ইসলাম নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবী করে ভাতা উত্তোলণ করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরিকল গ্রামের প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের ছেলে নাসির হোসেন অভিযোগ করে বলেন-আমার বাবা একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।
২০২০ সালে তিনি মৃত্যুবরন করেন। তাকে রাস্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়। মারা যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তিনি সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ভাতার টাকা উত্তোলণ করতেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মুলাদী উপজেলার গাছুয়া গ্রামের নুরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে আমার বাবার গেজেট ব্যবহার করে ভাতা উত্তোলণ করে আসছেন।
এনিয়ে আমি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় সহ একাধিক স্থানে অভিযোগ করেছি। সর্বশেষ এবিষয়ে সমাধান পেতে আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে আবেদন করেছি। পরবর্তীতে বিষয়টি তদন্তের জন্য গৌরনদী সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও কৃষি কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়েছে। তবে দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত তদন্তের জন্য ডাকা হয়নি। এবিষয়ে মুলাদীর গাছুয়া গ্রামের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার বলেন-আমি আমার গেজেট দিয়ে ভাতা উত্তোলণ করছি।
এবিষয়ে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইব্রাহীম বলেন-বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা গেজেটভুক্ত হওয়ার আবেদন বন্ধ রয়েছে। চালু হওয়ার পর কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে সঠিক প্রমানিত হলে গেজেটভুক্ত করা হবে। এছাড়াও অপর ব্যক্তির তদন্ত কার্যক্রম দ্রুত শেষ করার জন্য তদন্ত কর্মকর্তাদের নির্দেশ প্রদান করা হবে।

