মেজবা রহমান;স্টাফ রিপোর্টারঃ
গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে (বশেমুরবিপ্রবি) বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) উপাচার্যের মেয়েকে প্রভাষক পদের সেই নিয়োগ বিষয়ে চিঠি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)।
প্রভাষক পদের ওই নিয়োগ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য ১০ দিনের মধ্যে কমিশনে পাঠাতে বলা হয়েছে ওই চিঠিতে।
সম্প্রতি বশেমুরবিপ্রবির সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক পদে নাটোরের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট অহনা আফরিনকে নিয়োগ দিয়ে বেশ সমালোচনার মুখে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অহনা আরেফিন নামের নিয়োগ পাওয়া ওই শিক্ষক ববির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ছাদেকুল আরেফিনের মেয়ে। অভিযোগ উঠেছে, বাবার পেশাগত পরিচয়ে অনৈতিক প্রভাব খাটিয়েই ওই প্রার্থীকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এবং রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) মতো সামনের সারির প্রতিষ্ঠানের গ্র্যাজুয়েটদের বাদ দিয়ে ওই প্রার্থীকে নিয়োগ দেয়া নিয়ে এরইমধ্যে বেশ সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
সমালোচকদের মতে, একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের মেয়েএ পরিচয়ের অনৈতিক প্রভাব খাটিয়েই অনেক যোগ্য প্রার্থীকে বাদ দিয়ে ওই প্রার্থীকে নিয়োগ দিয়েছে বশেমুরবিপ্রবি প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর পাঠানো পত্রে বলা হয়েছে, গোপালগঞ্জের বশেমুরবিপ্রবির সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি কমিশনের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। চিঠিতে বেশকিছু তথ্য তলব করেছে কমিশন। এরমধ্যে রয়েছে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির কপি, বিজ্ঞাপিত পদের বিপরীতে আবেদনকারীর সংখ্যা, যোগ্যতার ভিত্তিতে সাক্ষাত্প্রার্থীর সংখ্যা, তাদের শিক্ষকতা ও অভিজ্ঞতার তথ্য ছক এবং সিলেকশন বোর্ডের সুপারিশ।
জানা যায়, কয়েক মাস আগে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে প্রভাষক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ বোর্ড। দুটি পদের বিপরীতে প্রথম সারির বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটসহ মোট ১৬ জন প্রার্থী আবেদন করেন। তাদের মধ্য থেকে দুজন প্রার্থীকে প্রভাষক পদে নিয়োগ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। দুজনের মধ্যে একজন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট। নিয়োগ পাওয়া আরেকজন বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির গ্র্যাজুয়েট। এর মধ্যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটের বিষয় নিয়ে।
এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার মো. মোরাদ হোসেন (ভারপ্রাপ্ত) বলেন, নিয়োগপ্রাপ্ত প্রভাষকের বিষয়ে ইউজিসি তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছি। আমরা যাবতীয় তথ্যসহ আগামী সপ্তাহে কমিশন বরাবর পাঠাবো।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. একিউএম মাহবুব নবধারা কে বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লে কিংবা উপাচার্যের ঘরে জন্ম নিলে শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়া যাবে না— এমন কোনো আইন বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেকশন বোর্ডে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনীত সদস্যও রয়েছেন। কারো একার পক্ষের গোটা বোর্ডকে প্রভাবিত করার সুযোগ নেই। প্রার্থীদের যোগ্যতা ও ভাইভা পারফরম্যান্স বিবেচনায় নিয়েই সিলেকশন বোর্ড নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছে। সে সুপারিশ পর্যালোচনা করে রিজেন্ট বোর্ড নিয়োগ অনুমোদন দিয়েছে। এখন যে কেউই সমালোচনা করতে পারেন, তবে সেটি আমলে নেয়ার মতো কোনো আইনি ও যৌক্তিক অবস্থান আমরা খুঁজে পাচ্ছি না। নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরা এরই মধ্যে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু করেছেন। তাদের পারফরম্যান্স নিয়েও শিক্ষার্থীরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
ইউজিসির চিঠি বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, আমরা কমিশনের চিঠিটি পেয়েছি। সেখানে নিয়োগবিষয়ক কিছু তথ্য চাওয়া হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেটি কমিশনে পাঠানো হবে।