সবিতা রায়, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের নায়ক মাস্টারদা সূর্য সেনের আজ জন্মদিন। মাস্টারদার জন্ম ২২ মার্চ ১৮৯৪ সালে। তার বাবার নাম রাজমণি সেন এবং মায়ের নাম শশীবালা। সূর্যসেন চট্টগ্রামের রাউজান থানার নোয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
সূর্যসেনরা ছিলেন দুই ভাই, চার বোন। সূর্যসেনের বয়স যখন পাঁচ বছর তখন তার বাবা মৃত্যুবরণ করেন। এ সময় তার বড় কাকা গৌরমণি সেন তাকে পিতার মতো আদর-স্নেহ দিয়ে বড় করেন। ১৭৫৭ সালে পলাশীর প্রান্তরে ইংরেজ বাহিনীর সঙ্গে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের মধ্য দিয়ে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়। ১৯০ বছর ব্রিটিশ বাহিনী এ দেশকে শাসন ও শোষণ করার পর ১৯৪৭ সালে বিতাড়িত হয়। তবে তাদের এ দেশ থেকে বিতাড়ন অত সহজ ছিল না। এর জন্য অনেক প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়েছে এ দেশকে। সূর্যসেন ছিলেন এমন হাজারও বীর সেনার অন্যতম।
ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনে যে পথ দেখিয়েছিলেন সূর্যসেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রামের সাহসী যোদ্ধারা, ইতিহাসে তা ছিল একটি বিরল ঘটনা। কলেজজীবনেই তিনি বিপ্লবীদের সংস্পর্শে আসেন। পেশাগত জীবনে তিনি শিক্ষকতায় এসেছিলেন মূলত তরুণ শিক্ষার্থীদের বিপ্লবী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে দেশপ্রেম জাগ্রত করার মাধ্যমে ব্রিটিশদের এ দেশ থেকে বিতাড়িত করতে। তখন থেকেই তিনি মাস্টারদা নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন। ‘যুগান্তর’ নামে একটি বিপ্লবী সংগঠনের তিনি ছিলেন সক্রিয় সদস্য। ব্রিটিশদের রোষানলে পড়ে অনেকবার তাকে জেল খাটতে হয়েছে। তবে উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে ছাড়াও পেয়ে গেছেন বারবার। ১৯৩০ সালের যে রাতে চট্টগ্রামে অস্ত্রাগার লুট করা হয়, সেই রাতে অস্ত্রাগারের মাঠে জাতীয় পতাকা তোলা হয়। এ সময় এ বিদ্রোহের সর্বাধিনায়ক মাস্টারদা সূর্যসেন ওই পতাকার তলে দাঁড়িয়ে চট্টগ্রামের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
সূর্যসেনের আরেক সহযোদ্ধা ছিলেন বিপ্লবীকন্যা প্রীতিলতা। সূর্যসেন ছিলেন স্বাধীনতা আন্দোলনের মহান সৈনিক। ইংরেজরা তাকে কারাগারে বন্দি রেখে বিচার কাজ চালায়। ১৯৩৩ সালে বিচারের রায় হয়। রায়ে সূর্যসেনকে ফাঁসির নির্দেশ দেয়া হয়। ১৯৩৪ সালের ১২ জানুয়ারি এ রায় কার্যকর করা হয়। জেলখানায় তাকে চরম নির্যাতন করা হয় এবং ফাঁসির পর তার মৃতদেহ বঙ্গোপসাগরে ভাসিয়ে দেয়া হয়। বিপ্লবী বীর মাস্টারদা সূর্যসেন স্বাধীনচেতা এ দেশের জনগণের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
মাস্টারদা সূর্য সেনের জন্মদিনে নবধারা পরিবারের পক্ষ থেকে জানাই গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।