জবি প্রতিনিধি
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমামের অব্যাহতির ঘটনায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
তবে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন শেষ করার আগেই বাঁধা প্রদান করে ব্যানার কেড়ে নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
আজ বৃহস্পতিবার (৩০ মে) দুপুর ২টায় বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সামনে এ বাধা প্রদান ও ব্যানার কেড়ে নেওয়া হয়। বাধা প্রদানে নেতৃত্ব দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা মিছিল কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে থেকে শুরু হয়ে বিজ্ঞান চত্বর ঘুরে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সামনে আসলে শিক্ষকদের সঙ্গে বাকবিতন্ডা শুরু হয়।
শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা শুধু আমাদের দাবি জানাচ্ছি। কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমামকে মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ এনে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আমাদের দাবি, ইমামকে স্থায়ী নিয়োগ দিতে হবে। আমরা কি আমাদের বাক-স্বাধীনতা পাবো না? আমরা কি আমাদের দাবি জানাতে পারি না? বাক-স্বাধীনতা আমাদের মৌলিক অধিকার। আপনারা আমাদের মৌলিক অধিকার প্রকাশে বাধা দিচ্ছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আপনারা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া ক্যাম্পাসে কোনো প্রকার মিছিল মানববন্ধন করতে পারেন না। আপনাদের কোনো অভিযোগ থাকলে আপনারা আপনাদের প্রতিনিধি পাঠাবেন আমাদের কাছে।
তিনি আরও বলেন, ইমামকে অব্যাহতি দেওয়া হয়নি। দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগের তাকে ইমামতি থেকে সাময়িক বিরতি দেওয়া হয়েছে।
ঘটনাস্থলে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড মো. মাশরিক হাসান উপস্থিত হন। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য বলেন, মসজিদে একটা ঘটনা ঘটেছে। মেয়েটার লিখিত একটি অভিযোগপত্র দিয়েছে। একটা কপি আমার কাছেও আছে। একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সে সময় পর্যন্ত তোমাদের অপেক্ষা করতে হবে।
জানা যায়, গত ১৮ মে নারীদের নামাজের স্থানে এশার নামাজের পর অসুস্থ এক ছাত্রী ঘুমিয়ে পড়েন। পরে ইমাম মো. ছালাহ উদ্দিন কয়েকজন সিকিউরিটি গার্ড ডেকে ওই ছাত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীহলে পৌঁছে দিতে বলেন। এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনে ইমামকে সাময়িক অব্যহতি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ঘটনার তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করে প্রশাসন। যদিও এ বিষয়ে ওই ছাত্রী কোনো লিখিত অভিযোগ দেননি।
এদিকে ইমামের অব্যহতির বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র প্রতিবাদ ও সমালোচনার ঝড় তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা বলছেন, মূল ঘটনার সূত্রপাত গত ১৭ মার্চ থেকে। সেদিন জাতীয় শিশু দিবস এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার মৃত্যুতে আত্মার মাগফেরাত কামনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত মাহফিলে মসজিদের মিম্বরের পাশে নারী-পুরুষ সবাইকে একসাথে বসিয়ে বক্তব্য দিয়েছিলেন মহিলা উপাচার্য সাদেকা হালিম। এ ঘটনার ছবি ভাইরাল হলে ঘটনাটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি করে। এ ঘটনায় কয়েকটি গণমাধ্যমের সংবাদকর্মীরা ইমামকে প্রশ্ন করলে বক্তব্য দেন ইমাম সালাহ উদ্দিন। বক্তব্যে মসজিদে নারী-পুরুষ একত্রে বসা ইসলামি বিধানের লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেন তিনি। এরপর ইমামকে উপাচার্য দপ্তরে ডেকে নিয়ে তিরস্কার করা হয়। এ ঘটনার জের ধরেই ইমামকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে বলে শিক্ষার্থীদের ধারণা।