রাকিব চৌধুরী, বিশেষ প্রতিবেদক
বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের সদস্য এসপি মোঃ মিজানুর রহমানকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে সরকার।আজ রোববার রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন স্বাক্ষরিত পৃথক প্রজ্ঞাপনে পুলিশের এই কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর কথা জানানো হয়।
বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো কর্মকর্তা হলেন কমান্ড্যান্ট (পুলিশ সুপার)আরআরএফ ঢাকা(পুলিশ সুপার, পুলিশ অধিদপ্তর, ঢাকায় সংযুক্তির আদেশপ্রাপ্ত) এসপি মোঃ মিজানুর রহমান(বাংলাদেশ পুলিশ আইডি ৬৬৯৮০২০৯১৫ )।
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পূর্ব টুঙ্গিপাড়া গ্রামের লাল মিয়া মোল্লার ছেলে এসপি মোঃ মিজানুর রহমান।চাকরি জীবনে তিনি বিভিন্ন কেলেঙ্কারিতে সব সময় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন।
বাড়ি নির্মাণে জোগালি পুলিশ:
দুদক সূত্র জানায়, নিজের বাড়ি নির্মাণের সময় পুলিশের ৬০ জন সদস্যকে রাজমিস্ত্রির সহকারী বা জোগালির কাজ করানোর অভিযোগ ওঠে মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে। ২০১৬ সালে বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানটি শুরু করে দুদক। অভিযোগ ছিল, সাভারের হেমায়েতপুরের আলীপুর ব্রিজ-সংলগ্ন ৮৪ শতাংশ জমির ওপর বাড়ি তৈরি ও ঢাকার মিরপুরের মাজার রোডের আলমাস টাওয়ারের পাশে আরও একটি বাড়ি নির্মাণে জোগালি ও শ্রমিক হিসেবে সাব-ইন্সপেক্টরসহ বিভিন্ন পদমর্যাদার ৫০ থেকে ৬০ জন পুলিশ সদস্যকে দিয়ে কাজ করান মিজানুর রহমান। সরকারি কর্মচারীদের ব্যক্তিগত কাজে খাটানোর অভিযোগ এবং জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামেন দুদকের উপপরিচালক এস এম মফিদুল ইসলাম। এর মধ্যে মিজানের বিরুদ্ধে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
পরে অনুসন্ধানের ক্ষেত্র আরও বেড়ে যায়। মিজানের বিরুদ্ধে নকল সার কারখানা পরিচালনার অভিযোগ ওঠে। এটিও যুক্ত হয় অভিযোগ নথিতে। এর মধ্যে নতুন করে অনুসন্ধানের দায়িত্ব পান সহকারী পরিচালক মো. ফারুক আহমেদ।
নকল সার কারখানা পরিচালনা:
দুদকে থাকা অভিযোগে বলা হয়েছে, এসপি মিজান ফসল উৎপাদনে বহুল ব্যবহৃত টিএসপি বা ট্রিপল সুপার ফসফেট সার নকল করার চারটি বড় কারখানার পরিচালনা করেন। এর মধ্যে দুটি কারখানা গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় আর অন্য দুটি ঢাকার অদূরে হেমায়েতপুরে। ওই চারটি কারখানায় প্রতিদিন এক হাজার টন নকল টিএসপি সার তৈরি করা হয়, যার দাম প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। আর এসব সার দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পাঠিয়ে দেওয়া হয় সরকারি টিএসপি সারের বস্তায় ভরে। কিছু সার বিক্রি হয় ‘তিউনিসিয়া টিএসপি’ নামে।
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ (২০১৮ সালের ৫৭ নম্বর আইন)–এর ৪৫ ধারার বিধান অনুযায়ী জনস্বার্থে সরকারি চাকরি থেকে তাঁদের অবসর দেওয়া হলো। তাঁরা বিধি অনুযায়ী অবসরজনিত সুবিধা পাবেন।
উল্লেখ্য,ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে পুলিশের ঊর্ধ্বতন বেশ কয়েক কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে অবসরে পাঠানো হয়েছে।