রুহুল আমিন, যশোর প্রতিনিধি
যশোরের চৌগাছা উপজেলার পুড়াপাড়া সড়কটির বেহালদশা। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় এ সড়কের পিচ ও বিটুমিন উঠে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে, যা চলাচলের একেবারেই অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের অন্ত নেই।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার চৌগাছা থেকে পুড়াপাড়া বাজার পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার সড়কটি দুটি উপজেলার সাধারণ মানুষের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম।
বিশেষ করে টেঙ্গুরপুর থেকে কমলাপুর মোড় পর্যন্ত অংশে কয়েক স্থানে হাঁটু সমান গর্তের মধ্য দিয়ে চলাচল করতে হয়। ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর ও যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলার মধ্যে সংযোগকারী এই গুরুত্বপূর্ণ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন শত শত মানুষ যাতায়াত করেন। এ সড়কটির দুরবস্থার কারণে খড়িঞ্চা, দেবলয়, সাঞ্চাডাঙ্গা, কমলাপুর, শ্যামনগর, চুটারহুদা, যাদবপুর, শাহাপুর, হাবাশপুর, জাগুসা, নাটিমা, মান্দারতলা, গয়েশপুর, সামান্তসহ দুই উপজেলার অন্তত ৮০ গ্রামের মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
পুড়াপাড়া বাজার এলাকাটি মিল, চাতাল, কলকারখানা, এনজিও, ব্যাংক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পশুহাট ও কাঁচাবাজারসহ একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র। সপ্তাহে রবিবার ও বুধবার দুটি হাট বসে, যেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা পণ্য কেনাবেচার উদ্দেশ্যে আসেন। কিন্তু সড়কের করুণ অবস্থার কারণে তারা সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন না, ফলে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে ভারি যানবাহন, বাস, নছিমন, ট্রাক, ইজিবাইক, করিমন, ভ্যান, চার্জার, থ্রিহুইলার, মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেল চলাচল করে। সড়কের দুরবস্থার কারণে প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যাচ্ছে। পথচারী ও চালকদের জন্য সড়কটি এখন এক আতঙ্কের নাম।
এলাকার অধিকাংশ মানুষ কৃষিজীবী। এখানকার গম, ভুট্টা, মসুর, পটল, বেগুন, টমেটো, লাউ, মিষ্টিকুমড়া, ধান, পাট, আখ, খেসারী, সরিষা, পেঁপে ও কাঁচা মরিচসহ নানা কৃষিপণ্য দেশের বিভিন্ন মোকামে বাজারজাত করতে হয়। রাস্তার দুরবস্থার কারণে কৃষকরা যেমন ক্ষতির মুখে পড়ছেন, তেমনি শিক্ষার্থীদেরও ভোগান্তির শেষ নেই।
পুড়াপাড়া বাজারের বিশিষ্ট চাতাল ব্যবসায়ী নুরুণ নবী ও এস এম মিলন জানান, রাস্তাটির করুণ অবস্থার কারণে হাটের দিনগুলোতে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছে। আন্দুলিয়া দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক রনি খাতুন, আলী হোসেন ও রামকৃষ্ণপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ময়না খাতুন জানান, সড়কটি দ্রুত সংস্কার না হলে চলাচল একপ্রকার অসম্ভব হয়ে পড়বে।
ইজিবাইক চালক শরিফুল ইসলাম, করিমন চালক হাসানুর রহমান, ট্রাকচালক আকবার আলী ও ভ্যানচালক আলামিন হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “প্রতিদিন এ রাস্তায় চলতে গিয়ে জীবনঝুঁকি নিতে হচ্ছে। যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।”
শিক্ষক সোহেল আক্তার ও পথযাত্রী মাসুরা আক্তার জানান, রাস্তা মেরামত না হওয়ায় আমাদের হাঁটু সমান পানির ভেতর দিয়ে চলাচল করতে হয়, যা অত্যন্ত কষ্টদায়ক।
এ বিষয়ে চৌগাছা উপজেলা প্রকৌশলী জনাব রিয়াসাত ইমতিয়াজ বলেন, পুড়াপাড়া সড়কটি বর্তমানে খুবই খারাপ অবস্থায় রয়েছে। এবারের বাজেটে বরাদ্দ পাওয়া গেলে দ্রুত সংস্কারের কাজ শুরু করা হবে।
চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা আক্তার বলেন, পুড়াপাড়া সড়কটির বেহালদশা। দ্রুতই সড়কটি সংস্কারের জন্য পদক্ষেপ নেয়া হবে।