মোঃ জিহাদুল ইসলাম, নড়াইলঃ
নড়াইলের কালিয়ায় আগামী ২৮ নভেম্বর আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, টেনশন ততই বাড়ছে দলীয় প্রার্থীদের বলে মন্তব্য করেছেন সাধারন ভোটাররা। শুরুতে যেমনটি আশা করেছিল দলীয় প্রার্থীরা তেমন পরিবেশ আর হচ্ছেনা ভেবে উৎকন্ঠা বাড়ছে বলে আলোচনার ঝড় ওঠেছে বিভিন্ন চায়ের দোকান ও জনাকির্ণ স্থানে।
খাশিয়াল ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি এস,এম, ফারুক হুসাইন বলেন, অধিকাংশ ইউনিয়নে নৌকার পরাজয়ের অন্যতম কারন হলো প্রার্থী নির্বাচনে মনোনয়ন বানিজ্য, অযোগ্য ও অথর্ব ব্যাক্তিদের হাতে নৌকা তুলে দেওয়া, স্বজনপ্রীতি, আমলাদের মন রক্ষার্থে তাদের সুপারিশকৃত ব্যক্তিদের মনোনয়ন দেওয়া। অনেক জায়গায় (সাবেক) জামাত শিবির ও বিএনপির লোক ও মনোনয়ন পেয়েছে। তৃনমুল কর্মীদের প্রার্থী পছন্দ না হওয়ায় এবং দলের দুঃসময়ে পাশে থাকা নেতারা বাদ পড়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর সৃষ্টি হয়েছে। দলের ভাবমুর্তি রক্ষায় আগামীতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন উন্মুক্ত করার আহ্বান জানান তিনি। এছাড়া মনোনয়ন পাওয়ার জন্য প্রতি ইউনিয়ন থেকে একাধিক দলীয় প্রার্থী আবেদন করে পেয়েছেন একজন। আর মনোনয়ন বঞ্চিতরা ক্ষুদ্ধ হয়ে মনোনীত প্রার্থীকে অযোগ্য প্রমান তথা দলীয় সিদ্ধান্ত ভুল ছিল সেটা প্রমানের জন্য আড়ালে স্বতন্ত্র প্রার্থী দাড় করিয়ে পদ হারানোর ভয়ে পরোক্ষভাবে ইন্ধন দিচ্ছে, যেন ধরি মাছ না ছুঁই পানি অবস্থা। যার ফলে দলীয় বিভক্তি হচ্ছে প্রকট, দল হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্থ এবং ভরাডুবি হচ্ছে প্রানের প্রতীক নৌকার। উন্মুক্ত নির্বাচন হলে দলীয় কোন্দল লোপ পেত। এছাড়া দলীয় মনোনয়ন নৌকা প্রতীক পেয়েই তৃণমূলের গুটি কয়েক নেতাকর্মী নিয়ে মোটরসাইকেলে সোডাউন দিয়েই চেয়ারম্যান হওয়া কে আটকায় এমন মনোভাব থাকায় সাধারণ ভোটাররা বিরক্ত ও ব্যাথিত হওয়ায় কয়েকেটি ইউনিয়নে ভোটের দৌড়ে পিছিয়ে রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সচেতন মহল। অভিজ্ঞ মহলের ধারনা ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নড়াইলের ১৩ টি ইউপি নির্বাচনে প্রশাসন ও সাংবাদিকদের কঠোর নজরদারীতে সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় নৌকার প্রার্থীদের চাপ অনেকটা বেড়ে গেছে। প্রথমাবস্থায় ভোটারদের কদর না থাকলেও বর্তমানে ইউনিয়নের আনাচে কানাচে চষে বেড়াচ্ছেন দলীয় প্রার্থীরা। এদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা শুরু থেকেই ভোটারদের মূল্যায়ন করায় তাদের পাল্লাটা এখনো ভারী রয়েছে বলে তাদের ধারনা। এ ক্ষেত্রে কালিয়ার ১২ টি ইউনিয়নে প্রচারনায় এগিয়ে থাকায় এবং ভোটারদের মূল্যায়নের কারণে জয়ের ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের আধিক্য বেশী হলে বিচিত্র হবার কিছুই থাকবেনা বলেও তারা মন্তব্য করেন। এছাড়া ইউপি নির্বাচন নিয়ে সরকারের মাথা ব্যাথা নেই এমন সংবাদ বিভিন্ন মিডিয়ায় সম্প্রচারিত হওয়ায় নড়েচড়ে বসেছে দলীয় প্রার্থীরা। এদিকে গত ১৫ নভেম্বের পুলিশ সুপারের উপস্থিতে উপজেলার কালিয়া ও নড়াগাতী থানায় ১২ ইউনিয়নের সকল প্রার্থীদের সাথে আইন-শৃংখলা বিষয়ক নির্বাচনী মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে উপস্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা দলীয় প্রার্থীর সমর্থকদের দ্বারা নির্বাচনী প্রচারকার্যে বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছেন অভিযোগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের যেন মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো না হয় বলে বক্তব্য রাখেন এবং প্রশাসন ও সাংবাদিকদের কঠোর নজরদারীতে একটি সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কামনা করেন।
জেলা পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় তাঁর বক্তব্যে বলেন, আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সে লক্ষ্যে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য হিসেবে প্রত্যেক পুলিশ সদস্য পেশাদারিত্বের সাথে নিজ নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি ও আনসার বাহিনী নিয়োজিত থাকবে। এ সময় তিনি সকলকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ও নির্বাচনী বিধিমালা মেনে পারস্পারিক সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রেখে নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণের জন্য আহ্বান জানান এবং আগামী ২৮ নভেম্বর একটি সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহারের আশ্বাস দেন।