শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৪ পূর্বাহ্ন
বিয়ে ভাঙ্গার খরচ দিতে না পারায় বড় বোনের স্বামীর ঘরে ছোটো বোনকে পাঠিয়ে দিয়েছে স্থানীয় শালিশদাররা।মধ্যযুগীয় এ ঘটনাটি ঘটেছে উজিরপুর উপজেলার হারতা ইউনিয়নের লাথারকান্দি এবং স্বরূপকাঠি উপজেলার বলদিয়া ইউপির ডুবি গ্রামের মধ্যে। সরজমিনে লাথারকান্দি গ্রামে গিয়ে জানা যায়, চার মাস পূর্বে লাথারকান্দি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনীর শিক্ষার্থীর সাথে স্বরূপকাঠি উপজেলার শাহাদৎ হোসেন ওরফে উকিলের ছেলে সৈকত (১৯) এর বিয়ে হয়। স্বরূপকাঠির বলদিয়া ইউপির ডুবি গ্রামের ফকির বাড়িতে গিয়ে জানা যায় কিছুদিন পূর্বে সৈকতের স্ত্রী বাপের বাড়িতে চলে যায়।চলতি মাসের২২ তারিখে সৈকতের বাবা ও ভগ্নীপতি হাচান ছেলের বউকে আনতে লাথারকান্দি বেয়াই বাড়িতে যায় বলে জানান সৈকতের মা। তিনি বলেন পরের দিন আমার স্বামী ও মেয়ে জামাই, বউকে না এনে লাথারকান্দি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেনীর শিক্ষার্থী ছোটো বোনকে সৈকতের বউ হিসাবে নিয়ে আসে।
এ ব্যাপারে মুঠো ফোনে সৈকতের বাবা বলেন, সৈকতের স্ত্রী (ছদ্ম নাম তানিয়া)আমার বাড়িতে আসতে অপরাগতা প্রকাশ করে। এসময় আমি উপস্থিত সকলের সামনে ৪ মাস পূর্বে ছেলের বিয়ের বাবদ খরচ হওয়া টাকা অথবা ছেলেকে পুনরায় বিয়ে দিয়ে দেয়ার দাবি করি মেয়ের পরিবারের কাছে।এসময় মেয়ের বাবা টাকা দিতে অপারগ হলে আমরা ছোটো মেয়েকে সৈকতের সাথে বিয়ে দেয়ার দাবী করি।তখন উপস্থিত শালিশদাররা আমাদের প্রস্তাবে রাজি হয়।পরদিন সকালে শালিশদারদের সিদ্ধান্ত অনুসারে ছোটো মেয়েকে নিয়ে স্বরূপকাঠি আমাদের বাড়িতে চলে আসি।একই কথা জানান মেয়ের বাবা ও মা তবে তারা যোগ করেন ছেলের বাবার দাবী অনুসারে টাকা দিতে পারলে ছোট মেয়েকে ওখানে পাঠিয়ে দেয়া দরকার হতোনা।আমরা গরীব মানুষ টাকা দিতে হলে আমার ঘর বিক্রি করতে হবে।তাই বসতঘর হারানোর ভয়ে টাকার পরিবর্তে ছোটো মেয়ে (রুমনা ছদ্ম নাম) কে সৈকতের বউ হিসাবে পাঠিয়ে দেই।
এ ব্যাপারে কথা হয় লাথারকান্দি গ্রামের মোহাম্মদ আলী ব্যাপারী বাড়ির শালিশদার রুহুলের সাথে। তিনি বলেন মেয়ের বাবা ও মায়ের কাছে সকলের সামনে ছেলের বাবা ও ভগ্নীপতি দাবী করেন টাকা দাও না হয় মেয়ে দাও।এ ব্যাপারটি আমার ভালো না লাগায় আমি ওই বৈঠক থেকে রাত ৯টার দিকে চলে আসি।
বৈঠকে উপস্থিত থাকা আরেক শালিশদার হুমায়ুনের স্ত্রী লুৎফা বলেন ছেলের বাবা শাহাদৎ ও বোন জামাই হাচান এক পর্যায়ে বলেন যদি সৈকতের বিয়ে বাবদ খরচ হওয়া টাকা না দেন তাহলে ছোটো মেয়েকে সৈকতের বউ হিসাবে দিয়া দেন।একথা বার বারই বলেছে সৈকতের বাবা শাহাদৎ। আমি এমন সিদ্ধান্তে রাজি হতে না পেরে চলে আসি।লুৎফা আরো বলেন ওখানে একই গ্রামের মোবারেক ডাকুয়া শালিশদার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। আমরা চলে আসলেও পরে জানতে পারি ওনাদের দাবীকৃত টাকা দিতে না পারায় সোমবার সকালে শাহাদৎ ও হাচান ক্লাস সেভেন পড়ুয়া ছোটো মেয়েকে বউ করে স্বরূপকাঠি নিয়া গেছে। এদিতে তথ্য নিতে শাহাদতের বাড়িতে হাজির হওয়ার পরপরই সৈকতের বর্তমান স্ত্রী সপ্তম শ্রেনী পড়ুয়া শিক্ষার্থীকে নাজিরপুর উপজেলা কলারদোনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পিয়ন মোজাম্মেলের বাসায় পাঠিয়ে দেয় সাহাদতের পরিবার। মোজাম্মেলের মুঠো ফোনের মাধ্যমে কথা হয় ওই শিক্ষার্থীর সাথে।
শিশুটি বলেন, আব্বা আম্মা আমাকে বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে দুলাভাই সৈকতের আব্বার সাথে দুলাভাই বাড়িতে পাঠায়। এ বাড়িতে এসে জানতে পারি আমার বড় বোন সৈকতের সাথে সংসার করবেনা এজন্য আমারে সৈকতের সাথে বিয়ে দেয়া হয়েছে। এদিকে খোজ নিয়ে জানা যায় ২৩ তারিখ ছোটো বোনকে বউ করে নিয়ে আসলেও বড় বোনের সাথে তালাক হয় ২৫ মে বিকেলে।
তালাক নামা লেখা কাজি হারতা ইউপির সত্তার মিয়া বলেন ২৫ তারিখে তালাকনামা আমার অফিসে বসে লেখা হয়। বিসয়টি নিয়ে কথা হয় পিরোজপুর জেলা কোর্ট আইনবীদ শহিদুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন একেতো উভয় বোন এবং ছেলে কারোরই বয়স হয়নি। আবার বড় বোন তালাক হওয়ার পুর্বেই ছোটোবোনকে বউ করে নিয়ে আসা ধর্ম ও আইন উভয়ের লঙ্গন। তবে এ ব্যাপারে জানার জন্য সৈকতের০১৯৮০৩৭৪৫৩৬ মোবাইল নম্বরে বারবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেনি।
