নড়াইলের কালিয়া উপজেলার নড়াগাতীতে ডি এফ রামনগর সরকারী প্রাইমারী স্কুলের ৪ কক্ষ বিশিষ্ট পরিত্যাক্ত সেমী পাঁকা ভবনের প্রায় ৩৫ হাজার ইট ও চালা অকশন ছাড়া হরিলুটের অভিযোগ উঠেছে ওই স্কুলের দপ্তরী কাম পাহারাদার ইউনুচ মোল্যা ও স্কুল কমিটির বিরুদ্ধে।
১৫ জুলাই (শুক্রবার) বিকেলে সরেজমিনে গেলে দেখা যায় সামান্য কিছু ইট সেখানে আছে এবং বাকী ইট স্কুলের উত্তর পাশে ইউনুচ মোল্যা ও তার দাদা মৃত বালা মোল্যার বাড়ীতে বিভিন্ন কাজে খাটানো হয়েছে। খড়ের পালা, মুরগীর বাক্সের নীচে গোসলখানা, ঘরের সামনে ও গোয়ালঘরেও বিছানো হয়েছে ওই স্কুলের আরএকে ও পিএমবি প্রতিকের ইট। এছাড়া ইউনুচ মোল্যা ওই ইট দিয়ে দেওয়াল গেথে প্লাষ্টার করে রেখেছেন এবং শুড়কি করে রেখেছেন তার উঠানে। বাড়ীর উত্তর-পশ্চিম কর্নারে স্তুপাকারে রয়েছে কয়েক হাজার ইট, যাহা স্কুলের ইট বলে প্রতীয়মান হয়। স্থাণীয়দের কাছে ওই ইটের মালিক সম্বন্ধে জানতে চাইলে জানেননা বলে জানান। ইউনুচ মোল্যা ডুমুরীয়া বাদামতলা গ্রামের বাচ্চু মোল্যার ছেলে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্থাণীয়রা জানান, প্রায় ৩/৪ বছর আগে পরিত্যাক্ত ভবনটি ভাঙ্গা হয়। ওই স্কুলের দপ্তরী কাম পাহারাদার ইউনুচ মোল্যার দায়িত্বে থাকে ঘরের মালামাল দেখাশোনার। কিন্তু সাবেক সভাপতি আমিনুর রহমান বুলু সম্পর্কে দাদা ও পোতা হওয়ায় স্থাণীয় প্রভাব খাটিয়ে দুজনের যোগসাজশে মালামালগুলো হরিলুট হয়েছে। টিনের চালা ও কাঠ নাকি ঝড়ে উড়ে গেছে বলে আজও তার কোন হদিস মেলেনি, স্কুলের রাস্তা ও শহীদ মিনারে ইট ব্যবহারের দোহাই দিয়ে সিংহভাগ তারা হাতিয়ে নিয়েছে এবং এ ছাড়া ওই স্কুলের আশে পাশে ৪০ টি বাড়ীতে রক্ষিত রয়েছে ওই ইট বলে তারা জানান।
ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি আমিনুর রহমান বুলু মোল্যা বলেন, ওই স্কুলের ৫৫ শতক জমি তার পিতা দান করেছেন। তার পিতা ও তার বড় ভাই সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন। অতঃপর তিনিও ওই স্কুলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন তিনি। তবে রাতের আঁধারে এলাকার অনেকে পরিত্যাক্ত স্কুলে ইট নিয়ে গেছে বলে তিনি জানান। এ বিষয়ে তিনি উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে বার বার বললেও তিনি কোন পদক্ষেপ নেননি।
এ বিষয়ে স্কুলে দপ্তরী কাম প্রহরী ইউনুচ মোল্যার সাথে তার মুঠোফোনে কথা হলে তিনি দায়িত্বে থাকা এবং স্কুলের ইট দিয়ে নিজের বাড়ীর দেওয়াল নির্মানের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, স্কুলে প্রবেশের রাস্তা ও শহীদ মিনার প্রস্তুতে ইট ব্যবহৃত হয়েছে বলে ফোনটি কেটে দেন এবং পরবর্তীতে তাকে বার বার ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেননি।
স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি খান জাহান জানান, এক বছর হলো তিনি সভাপতির দায়িত্ব নিয়েছেন। পরিত্যাক্ত স্কুলের ৫ হাজার ইট দিয়ে স্কুলে রাস্তা করা হয়েছে এবং শহীদ মিনারে হয়ত এক/দেড় হাজার ইট লাগতে পারে। এ ছাড়া অনেক দিন যাবত পরিত্যাক্ত থাকায় রাতের আঁধারে ঘরের ভাঙ্গা অংশ চুরি হয়েছে বলে তিনি জানান। দপ্তরী ইউনুচ মোল্যার বাড়ী ও বাদাম তলায় রক্ষিত ইটের বিষয়ে তিনি বলেন, স্কুলের ছেলে মেয়েদের অবাধ চলাফেরার জন্য ওখানে সরিয়ে রাখা হয়েছে।
প্রধান শিক্ষক আনন্দ কুমার মজুমদার বলেন, ২০১৮ সালের শেষদিকে তিনি ওই স্কুলে যোগদান করেছেন। ওই সময় শুধু ফ্লোর এবং অল্প কিছু ইট তিনি দেখতে পেয়েছেন। এ বিষয়ে তিনি উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে অকশন দেওয়ার জন্য বললে তিনি আসেন এবং স্কুলে কাঁদা হয়ে যাওয়ার ব্যপারে কথা বললে তিনি রেজুলেশন জমা দিয়ে রাস্তার কাজে ইট ব্যবহার করেছেন। এছাড়া অল্পকিছু ইট দিয়ে শহীদ মিনারের কাজ করা হচ্ছে, বাকী ইট পাশে রেখে দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
এ দিকে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বপন কুমার দাশ বলেন, এ বিষয়ে কোন রেজুলেশন আমি পাইনি এবং সরকারী ইট দিয়ে রাস্তা নির্মানের কোন অনুমতিও তিনি দেননি। এ ছাড়া এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আরিফুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে জানলাম। তদন্ত সপেক্ষে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।