রাকিব চৌধুরী, বিশেষ প্রতিবেদক
বর্ষার আগমনে ভোর হতেই শুরু পেরেক মারার খট খট শব্দ। কেউ নৌকার কাঠ কাটতে বা চেড়াই করতে ব্যস্ত কেউবা নৌকার কাঠের তলা বিছানো নিয়ে ব্যস্ত।
সকাল থেকেই নৌকা বানানোর কাজে মগ্ন থাকেন গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার জনপ্রিয় বাহন নৌকা তৈরির কারিগররা। তবে গতবছরের তুলনায় এ বছর নৌকা তৈরির কাঠ ও অন্যান্য সরঞ্জামের দাম দ্বিগুণ হওয়ায় নৌকা তৈরির কারখানার মালিকরা আর্থিকভাবে লাভবান না হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন।
বর্ষা মৌসুমে নিচু এলাকাগুলোতে উজানের পানিতে রাস্তা তলিয়ে যায় এতে করে নৌকার প্রয়োজন দেখা দেয়। নিচু এলাকাগুলোতে নৌকা ছাড়া চলাচলের কোনো উপায় থাকে না। নৌকাই তখন একমাত্র যাতায়াতের ভরসা হয়ে দাঁড়ায়।
টুঙ্গিপাড়ায় বর্ষার আগমনে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নৌকার চাহিদা বেড়েছে। চাহিদা বৃদ্ধির কারণে দিনভর আপন মনে কাজ করে চলেছে নৌকা তৈরির কারিগররা। কেউ করাত দিয়ে কাঠ কাটছে, কেউ বা হাতুড়ি দিয়ে নৌকায় পেরেক লাগাতে ব্যস্ত । রাতদিন একটানা কাজ করেও চাহিদা পূরণে হিমশিম খাচ্ছেন নৌকা তৈরির কারিগরেরা।
উপজেলার সোনাখালী,তারাইল, ভেন্নাবাড়ী,জোয়ারিয়া, গোপালপুর, পাথরঘাটা, বড় ডুমুরিয়াসহ বিভিন্ন জায়াগায় গড়ে উঠা কারখানায় নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে কারিগররা। তবে নৌকা তৈরির সরঞ্জামের দাম বাড়লেও বাড়েনি নৌকার দাম। এ ছাড়াও অনেকেই পুরাতন নৌকা মেরামত করে নিচ্ছেন ব্যবহারের উপযোগী করে তোলার জন্য।
নৌকা তৈরির কারিগর অলক টিকাদার জানান, বর্ষা মৌসুম আসায় নৌকা তৈরির কাজে ব্যস্ততা বেড়ে গিয়েছে। এইসময় নৌকার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আমরা অতিরিক্ত কিছু আয় করতে পারি। একটি ১৮ ফুটের নৌকা বানাতে দুইজন কারিগরের একদিন সময় লেগে যায় অথচ সে অনুযায়ী মজুরি পাই না। নৌকা ভেদে মজুরি ৫’শ থেকে ২ হাজার পর্যন্ত। তবে আমরা ৫’শ থেকে ৬’শ টাকার মজুরি পাই যা দিয়ে সংসার চালানো দায়। কাজ থাকলে পরিবারের জন্য কিছু বাজার করতে পারি যা দিয়ে কোনো রকম ভাবে চলা যায় আর কাজ না থাকলে পরিবারের জন্য খাবার সংগ্রহ করাই কঠিন হয়ে যায়।
এ বিষয়ে কারখানার মালিক মনজ বিশ্বাস (বলাই) জানান, নৌকা তৈরির সরঞ্জামের দাম দ্বিগুণ হওয়ায় আগের মতো বেশি লাভ হয় না। ডিঙি নৌকাগুলো কাঠ ও সরঞ্জামাদি ভেদে বিক্রি করা যায় ৪ হাজার থেকে ৯ হাজার টাকা। এত অল্প টাকায় নৌকা বিক্রি করে খুব একটা লাভের মুখ দেখা যায় না। পুর্ব পুরুষের ব্যবসা তার জন্য কোনো মতে ধরে আছি। তাছাড়া সরকারি ভাবে কোন রকম সুযোগ সুবিধা বা ঋণ পাই না।
এ বিষয়ে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার প্রকাশ চক্রবর্তী বলেন, আমাদের সমাজসেবা অফিস থেকে নৌকা তৈরির কারিগরদের জন্য কোনো সুযোগ সুবিধা নেই। তবে সমাজসেবা অফিস থেকে এদের জন্য সুদমুক্ত ঋণ দেওয়া হয়ে থাকে। যাতে করে তারা পেশার মান উন্নয়ন করে স্বাবলম্বী হতে পারে।