শরিফুল ইসলাম, স্টাফ রিপোর্টার, নড়াইল
নার্সারি ব্যবসা করে নিজের ও পরিবারের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন নড়াইলের লোহাগড়ার উজ্জ্বল শেখ। এক সময়ে অর্থকষ্টের মধ্য দিয়ে জীবন যাপন করলেও এখন স্ত্রী ও ছেলে মেয়ে নিয়ে সচ্ছলভাবে জীবন যাপন করছেন তিনি। বর্তমানে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে সবার পরিচিত মুখ তিনি। সে উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের ঈশানগাতী গ্রামের মো. তারা মিয়া শেখের ছেলে।
২০০৯ সালের দিকের উজ্জ্বল শেখের বয়স তখন ২৫ থেকে ২৬ বছর। তখন বাড়ির জমিতে গাছ লাগানোর জন্য স্থানীয় লোহাগড়া হাটে যান কিছু ফলদ ও বনজ গাছ কেনার জন্য। ৫০টি চারা দরদাম করার পর বিক্রেতা সবগুলো চারাগাছ তাকে অল্প দামে দিয়ে যান। উজ্জ্বল শেখ সেই চারা এক হাজার টাকায় বিক্রি করার পরও বাদ বাকি চারা বাড়িতে এনে রোপণ করেন। এরপর থেকে কিছু দিন অন্যের কাছ থেকে চারা গাছ কিনে এনে বিক্রি করতে থাকেন। আর ফাঁকে ফাঁকে জেনে নেন নার্সারি করার নিয়ম-কানুন। তিনি নিজ গ্রাম ঈশানগাতীতে এক একর জমিতে শুরু করেন নার্সারি ব্যবসা। এরপর আর উজ্জ্বল শেখকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একে একে তিনি এখন ৩টা নার্সারির মালিক। এর মধ্যে উপজেলার জয়পুর চোরখালী গ্রামে দেড় একর জমির ওপর আরও একটি বড় নার্সারি রয়েছে। ১৫ বছর ধরে নিজের হাতে চারা তৈরি করে সরবরাহ করছেন লোহাগড়া উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায়। অনেকেই মুগ্ধ হয়েছেন তার হাতে গড়া সবুজের সমারোহ দেখে। আবার কেউ কেউ মো. উজ্জ্বল শেখের মতো নার্সারি করে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছেন।
নার্সারির মালিক উজ্জ্বল শেখ জানান, নার্সারির পরির্চযা করার জন্য ৩/৪ জন কর্মচারি রয়েছে। বীজ থেকে চারা তৈরির ক্ষেত্রে প্রথমে পলিব্যাগে মাটি প্রস্তুত করে বীজ অথবা চারা রোপণ করতে হয়। এ জন্য মাটিতে পরিমিত টিএসপি, গোবর, পটাস, খৈল দিয়ে এক সপ্তাহ রাখতে হয়। সাধারণত ফুল, ফল ও পাতাবাহার গাছ ২০ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে বিক্রির উপযোগী হয়ে ওঠে। ছোট, মাঝারি ও বড় সব ধরনের গাছের চারাই এখানে পাওয়া যায়। তার নার্সারিতে বীজের মাধ্যমে ও কলমের মাধ্যমে দুভাবেই চারা উৎপাদিত হয়ে থাকে। প্রতি বছর প্রায় ৩ লাখ চারা উৎপাদন করে বিক্রি করা হয়। নার্সারিতে বর্তমানে রয়েছে আম, জাম, লিচু, জামরুল, আমড়া, পেয়ারা, জলপাই, কতবেল, আমলকী, লেবু, মাল্টা, বরই, কামরাঙ্গা, ডালিম ইত্যাদি ফলের চারা। এছাড়া ফুলের মধ্যে রয়েছে গোলাপ, রজনীগন্ধা, বেলি, হাসনাহেনা, বকুল, শিউলি, গাঁদা, গন্ধরাজ, মোসেন্ডা, টগর, জুঁই, কচমু, সিলপিয়া ও ডালিয়া। বনজ গাছের মধ্যে রেইনট্রি, মেহগনি, আকাশমণি, চাম্মুল, নারকেল, সুপারি, লাম্মু ইত্যাদি। নার্সারি ব্যবসায় আয়-ব্যয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নার্সারি ব্যবসায় কোনো দিন পাঁচ হাজার আবার কোনো দিন তিন হাজার টাকা বিক্রি হয়। বিদ্যুৎ পানি বিল এবং অন্যান্য খরচ বাদে মাসে গড়ে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা আয় হয়। তবে মৌসুমের সময় একটু বেশি আয় হয়।
লোহাগড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা আক্তার বলেন, উজ্জ্বল শেখের নার্সারিতে উৎপাদিত চারার বেশ সুনাম রয়েছে। এ ধরনের উদ্যোক্তারা যাতে করে ব্যবসায়ী হিসেবে টিকে থাকতে পারেন এবং দেশের বনায়নে ভূমিকা রাখতে পারেন সে জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।