যবিপ্রবি প্রতিনিধি, রায়হান আহমদ
ঈদ মানেই আনন্দ-উৎসব আর পরিবার-পরিজনের সঙ্গে সময় কাটানোর মুহূর্ত। তবে কিছু মানুষ আছেন যাদের জন্য ঈদের ছুটি মানে বাড়ি ফেরা নয় বরং দায়িত্ব আরও কঠোরভাবে পালন করা। তেমনি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যদের জন্য প্রতিবারের মতো এবারের ঈদও কাটবে কর্মস্থলে, বিশ্ববিদ্যালয় পাহারায়।
যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আপনজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপনে ব্যস্ত থাকবেন তখন এই আনসার সদস্যরা নিরলসভাবে নিরাপত্তার অতন্ত্র প্রহরীরূপে দায়িত্ব পালন করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্ব তাদের হাতে। ক্যাম্পাস যখন জনশূন্য হয়ে পড়ে, তখন তারাই হয়ে ওঠেন এর একমাত্র রক্ষক। ঈদ কিংবা অন্য কোনো উৎসব তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব থেকে মুক্তি দেয় না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দায়িত্বে থাকা প্লাটুন কমান্ডার মো. মুকুল হোসেন নের্তৃত্বে বর্তমানে মোট ৪৮ জন পুরুষ আনসার সদস্য রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৯ জন ঈদের ছুটিতে থাকবেন, বাকি ৩৯ জন আনসার সদস্য ক্যাম্পাস পাহারায় নিয়োজিত থাকবেন।
ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার সার্বিক দায়িত্বে থাকা প্লাটুন কমান্ডার মো. মুকুল হোসেন বলেন, “আমাদের দায়িত্বটাই এমন, যেখানে নিজের ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার চেয়ে দায়িত্বটাই বড় হয়ে ওঠে। ঈদের সময় সবার মনেই বাড়ি ফেরার ইচ্ছে থাকে, কিন্তু নিরাপত্তার দায়িত্ব আমাদেরকেই পালন করতে হবে। ক্যাম্পাস ফাঁকা থাকলেও আমাদের সতর্ক থাকতে হয়, যেন কোন ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের টিমের সদস্যরা কঠোর পরিশ্রম করছেন। তারা পরিবার থেকে দূরে থাকলেও তাদের কাজে কোন গাফিলতি নেই। আমি গর্বিত যে, আমাদের টিম নিজেদের দায়িত্বের প্রতি অনেক আন্তরিক। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীরা আমাদের পাশে থাকলে এই ত্যাগ কিছুটা হলেও স্বার্থক মনে হবে।”
ঈদের দিন যখন শিক্ষার্থীরা নতুন পোশাকে আনন্দে মেতে থাকবেন, তখন এই আনসার সদস্যরা তাদের চেনা পোশাকেই ক্যাম্পাস পাহারা দেবেন। তাদের এই দায়িত্ব পালন শুধু পেশাগত নয় বরং এটি তাদের এক অদৃশ্য ত্যাগ, যা অনেকের চোখে পড়ে না। ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গিয়ে তাদের ব্যক্তিগত ঈদ আনন্দ অনেকাংশেই ম্লান হয়ে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের উচিৎ তাদের এই ত্যাগের স্বীকৃতি দেওয়া। তাদের জন্য ঈদের দিনে বিশেষ খাবারের আয়োজন করা যেতে পারে, যাতে অন্তত কিছুটা ঈদের আনন্দ তাদের মাঝেও ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি একটি আন্তরিক শুভেচ্ছা বা হাসিমুখের শুভেচ্ছাবাণীও তাদের মন ভরিয়ে দিতে পারে।
ঈদ মানেই শুধু নিজের আনন্দ নয়, বরং অন্যের ত্যাগের প্রতি সম্মান দেখানোরও সময়। যারা আমাদের নিরাপত্তার জন্য নিজেদের আনন্দ বিসর্জন দেন, তাদের অবদান কখনও ভোলার নয়। ঈদের দিনে আমরা যখন পরিবার-পরিজনের সঙ্গে খুশির মুহূর্ত কাটাব, তখন অন্তত একবার তাদের কথাও মনে করা উচিত, যারা ক্যাম্পাস পাহারা দিয়ে আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছেন।