মোছাঃ কাবা কাকলী, কবি নজরুল সরকারি কলেজঃ
বাংলাদেশের প্রাচীনতম ও ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কবি নজরুল সরকারি কলেজ। ১৮৭৪ সালের ১৬ মার্চ তৎকালীন ঢাকা মাদ্রাসা নামে কলেজটির কার্যক্রম শুরু হয়। চার বার নাম পরিবর্তন হয়ে আজকের এই কবি নজরুল সরকারি কলেজ এবার ১৫১ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
কলেজের অধ্যক্ষ ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠার এত বছর পরও কলেজটিতে নানান ধরনের সমস্যা ও সংকট বিদ্যমান রয়েছে। এরমধ্যে চরম পর্যায়ে রয়েছে শ্রেণিকক্ষ সংকট। শ্রেণিকক্ষের অভাবে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ক্লাস করতে পারে না। কোনও কোনও ডিপার্টমেন্টের রয়েছে মাত্র একটি ক্লাস রুম। ক্লাসরুম সংকটের কারণে শিক্ষার্থীরা মাঝেমধ্যে বাইরের ফ্লোরে বসেও ক্লাস করে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা, অপর্যাপ্ত পরিবহন ব্যবস্থা, কলেজের জায়গা দখলসহ নানান সমস্যায় জর্জরিত ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
কবি নজরুল কলেজের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সামিয়া আক্তার বলেন, ‘প্রতিষ্ঠার ১৫১ বছর পরেও সংকট ও সমস্যায় জর্জরিত কবি নজরুল কলেজ। এই কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই শুনে আসছি— সমস্যাগুলোর সমাধান শিগগিরই হবে। কিন্তু সমস্যা সমাধানে আদৌ কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। খুবই দুঃখ লাগে যখন আমরা নিজেরাই শ্রেণিকক্ষের অভাবে ক্লাস করতে পারি না। রুম সংকটের কারণে আমাদের ক্লাস বাতিল হয়ে যায়। ইনকোর্স পরীক্ষার সময় রুমের অভাবে পরীক্ষার সময়সূচি পরিবর্তন করা হয়। অনাথের মতো এক রুম থেকে আরেক রুমে দৌড়াদৌড়ি করা লাগে।’
তিনি বলেন, ‘এত শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র দুটি বাস চালু আছে। তাও জুনিয়র শিক্ষার্থীদের কারণে বাসে ওঠা যায় না। নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নেই কোনও আবাসন সুবিধা।’
জানা গেছে, ছাত্রদের জন্য একটা হল থাকলেও কলেজ প্রশাসনের অবহেলায় সেটার খুবই বাজে অবস্থা। কলেজ ক্যাম্পাসে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নেই কোনও নামাজ পড়ার স্থান। ছোট একটা কমনরুমেই তাদের সবকিছু করতে হয়। এই কলেজে নেই কোনও ডে কেয়ার সেন্টার নেই। স্নাতকের অনেক শিক্ষার্থী ও অনেক শিক্ষক ও তাদের ছোট বাচ্চা নিয়ে ক্যাম্পাসে আসেন। ডে কেয়ার সেন্টার না থাকায় তাদের বিপাকে পড়তে হয়। এছাড়া ওয়াসরুমে স্যানিটাইজেশনের কোনও ব্যবস্থা নেই। সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠার এত বছর পরেও এই কলেজে শুধু নেই আর নেই অবস্থা।
সংকট ও সমস্যা নিরসনের বিষয়ে ২০১৯ সালের ৪ ডিসেম্বর শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি কবি নজরুল কলেজে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ভাস্কর্য ‘মুক্তির সোপান’ এর উদ্ধোধন করেন। সেদিন কলেজে শিক্ষক সংকট, অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণ, পরিবহন ও আবাসনসহ সব সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দেন। শিক্ষামন্ত্রীর এমন আশ্বাসের পর শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আনন্দে উদ্বেলিত হলেও আদতে এ পর্যন্ত এর কোনও সমাধান হয়নি।
শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, ‘কলেজের পাশে পড়ে থাকা পরিত্যক্ত ডাফরিন হলের জায়গায় বহুতল ভবন নির্মাণ করে থানা শিক্ষা অফিসকে দুটি এবং বাকি ফ্লোরগুলো কবি নজরুল কলেজকে দেওয়া হবে। এছাড়া কলেজে ১০ তলা ভবন নির্মাণের জটিলতা নিরসন করে দ্রুত কাজ শুরু হবে। এর বাইরে কলেজের পাশে পড়ে থাকা পরিত্যক্ত জায়গায়গুলোতেও অ্যাকাডেমিক ভবন বা হল নির্মাণ হবে। তিনি আরও বলেন, কবি নজরুল সরকারি কলেজের শহীদ শামসুল আলম ছাত্রাবাসটিকে সংস্কার এবং দখল হয়ে যাওয়া জায়গাগুলো পুনরুদ্ধার করে বহুতল হল নির্মাণ করা হবে।’ এসময় কলেজের শিক্ষার্থীদের যাতায়াত সমস্যা সমাধানে পরিবহন সংকট নিরসনের আশ্বাস দেন তিনি।
সংকট ও সমস্যা নিরসনের বিষয়ে কবি নজরুল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘কলেজের যেসব সংকট রয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ শ্রেণিকক্ষ সংকট। এর আগে যখন ছয় তলা ভবনের কাজ এসেছিল, তখন এটা তৎকালীন অধ্যক্ষ রিজেক্ট করে দিয়েছিলেন। আমি হলে অন্তত তা করতাম না। কারণ, ছয় তলা ভবনটা হলে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষের সমস্যা কিছুটা হলেও লাঘব হতো। এখন আমরা নতুন ভবনের জন্য বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছি।’
অধ্যক্ষ বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের পরিবহন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে আমাদের অলরেডি দুটি ডাবল ডেকের বাস চলমান রয়েছে। আরও কিছু বাস হলে পরিবহন সমস্যা পুরোপুরি সমাধান হতো।’ তিনি জানান, শিক্ষার্থীদের আবাসনের বিষয়টি কলেজ কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।