মোঃ জিহাদুল ইসলাম, কালিয়া (নড়াইল) প্রতিনিধিঃ
নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পহরডাঙ্গা ইউনিয়নে সরকারি ঘর বারাদ্দে ইউনিয়ন উপ-সহকারী (ভুমি) কর্মকর্তা মাহামুদ মোল্যার অনিয়ম ও দুর্ণীতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত হয়েছে। বিগত ২৫ মে/২১ তারিখে এলাকাবাসীর পক্ষে জেলা প্রশাসক বরাবর ঘর বারাদ্দে অনিয়ম ও দুর্ণীতি অভিযোগ দাখিল করেন পহরডাঙ্গা ইউনিয়নের সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি ও চাপাইল গ্রামের গোলাম কবির তপন। ১৩ জুন (রবিবার) উপজেলা সহকারী কমিশনার ভুমি মোঃ জহুরুল ইসলাম এ তদন্ত করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইউনিয়নের চেয়াম্যান মোকাররম হোসেন হিরু, ইউপি সদস্য ও অভিযোগকারী এলাকাবাসী। এলাকাবাসীরা জানান, প্রতিটি ঘরেই ইউনিয়ন উপ-সহকারী (ভুমি) কর্মকর্তা মাহামুদ মোল্যা অনিয়ম ও দুর্ণীতির করেছে, তবে তিনটি ঘর বরাদ্দ হয়েছে একেবারেই নিয়মবহির্ভূত ভাবে। চরসিংগাতী গ্রামের জিহাদ চৌধুরীর স্ত্রী নারগিস বেগমের নামে ঘর বরাদ্দ হয় কোন নিয়মে? তার স্বামী মার্ডার কেসে জেলে আছে, প্রতিপক্ষের লোকজন তাদের বসতবাড়ি ভেঙ্গে দিয়েছে। এখন ছাপড়া উঠিয়ে আছে। কিন্তু তাদের আড়াই বিঘা জমি এখনো আছে, কি করে তারা ভুমিহীন হয়? আর এখানে অনেক ভুমিহীন থাকা সত্ত্বেও অন্য এলাকার লোক কি করে ঘর পায়? চাপািইল গ্রামের মৃত হাকিম শেখের মেয়ে খুশী বেগম, স্বামীর বাড়ী ঢাকার বিক্রমপুরে। অথচ এখানে তার নামে ঘর বরাদ্দ হয়েছে। এলাকাবসী আরো জানান, মাহামুদ মোল্যা স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীদের হাতে রেখে এ দুর্ণীতি করে যাচ্ছে এবং তদন্তকালে তারাই বড় কথা বলে অনিয়ম ও দুর্ণীতি ঢাক দেওয়ার অপচেষ্টা করছে। চাপাইল গ্রামের বৃদ্ধ মজিবর রহমান মোল্যা (৭১) বলেন, রকিব বিশ্বাসের ছেলে দিদার বিশ্বাস কি করে ভুমিহীনের ঘর পায়? সে পাঁকা ঘরে বাস করে, ওরা ৪ ভাই, বসতভিটায় ওদের ২৬ শতক জমি আছে এবং এই গ্রামেই চাষযোগ্য সাড়ে তিন বিঘা জমি আছে ওদের। তাছাড়া নলামারা গ্রামেও ওদের জমি আছে। এরা কি করে ভুমিহীনের ঘর পেল আমার বুঝে আসেনা।
ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি গোলাম কবির বলেন, মার্ডার কেসের আসামী আড়াই বিঘা জমি থাকলেও মুজিব বর্ষের উপহার প্রধানমন্ত্রীর ঘর বরাদ্দ পায়, বসতভিটায় ২৬ শতকের ওপর পাঁকাঘর, ডাঙ্গায় জমি সাড়ে তিন বিঘা এরাও ভুমিহীন, ঘর পাচ্ছে দলিলও হচ্ছে। এটা সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূত। কোন আইনে এদের নামে ঘর বরাদ্দ ও দলিল হয়? ভুমি সহকারী মাহামুদ মোল্যার বিরুদ্ধে আগেও নারী কেলেঙ্কারী, খাজনার রশিদে কম টাকা উঠিয়ে বেশী টাকা নেওয়া, ভাড়া বাসায় অফিসের ল্যাবটব রেখে কাজ করা, অর্থের বিনিময়ে সরকারি ঘর বরাদ্দসহ নানা দুর্ণীতির বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দাখিল হয়েছে এবং বিভিন্ন মিডিয়ায় তা প্রকাশিতও হয়েছে। একেরপর এক দুর্ণীতি করেই যাচ্ছে অথচ ম্যানেজ করে ঠিকই তার কৃতকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে, এটা দুঃখজনক। সাধারণ জনগন ক্ষেপে গেলে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটতে পারে বলে তিনি জানান।
অভিযুক্তদের নামে বরাদ্দকৃত ঘর দলিল হবে কিনা? জানতে চাইলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) জহুরুল ইসলাম বলেন, অভিযোগের তদন্ত হয়েছে, অভিযুক্তদের কাগজ পত্র দাখিল করতে বলেছি। বরাদ্দকৃতদের নামে ১৪ জুন দলিল সম্পাদন হবে এবং ২০ জুন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উদ্ভোধন করবেন। তবে তদন্ত রিপোর্ট তাদের বিপক্ষে গেলে তাদের বরাদ্দ ও দলিল বাতিল করা হবে।