কবির হোসেন, আলফাডাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় শিক্ষার্থীদের উত্ত্যক্ত করা ও প্রকাশ্যে আড্ডা দেওয়ার অভিযোগে বেশ কয়েকজন বখাটেকে আটক করেছে উপজেলা প্রশাসন। বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫) দুপুরে আলফাডাঙ্গার আরিফুজ্জামান সরকারি (মডেল) উচ্চ বিদ্যালয় ও আসাদুজ্জামান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের গেটের সামনে কিনবা দোকানগুলি থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেল ইকবালের নেতৃত্বে এই অভিযান চালানো হয়। আটককৃতদের পরে তাদের অভিভাবক ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে নিয়ে গিয়ে কারণ দর্শানোর ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বখাটেদের আচরণ সংশোধিত না হলে তাদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ আসছিল যে, এই দুটি বিদ্যালয়ের সামনে একদল বখাটে ছেলে অযাচিতভাবে আড্ডা দেয়, মেয়ে শিক্ষার্থীদের টিজ করে এবং এলাকার পরিবেশ নষ্ট করে। এতে করে শিক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করতে পারছিল না এবং অভিভাবকদের মধ্যেও এক ধরনের উদ্বেগ ছিল। এমন পরিস্থিতিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল ইকবাল নিজে সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে এই অভিযান পরিচালনা করেন। আটককৃতদের ধরে তাদের অভিভাবকদের ডেকে আনা হয়। ইউএনও রাসেল ইকবাল তাদের সামনে বখাটেদের অপকর্মের কথা তুলে ধরেন এবং এর পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করেন।
তিনি বলেন, “শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বরদাশত করা হবে না। আজ আমরা তাদের অভিভাবক ও শিক্ষকদের কাছে এনেছি যাতে তারা তাদের সন্তানদের বোঝান। কিন্তু এরপরও যদি তাদের আচরণে পরিবর্তন না আসে, তাহলে আমরা আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবো।” তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সুস্থ পরিবেশে বেড়ে উঠুক। কোনোভাবেই তাদের লেখাপড়া কিংবা নিরাপত্তা ব্যাহত হোক, এটা আমরা চাই না।” আটক হওয়া এক কিশোরের বাবা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমার ছেলে যে এমন কাজ করে, তা আমি জানতাম না। ইউএনও স্যারের এই উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাই। ভবিষ্যতে আমি আমার ছেলের দিকে আরও বেশি নজর রাখব।”
আরেক অভিভাবক বলেন, “আজ আমাদের অনেক বড় শিক্ষা হলো। সমাজের সবাই যদি এভাবে সচেতন হয়, তাহলে এমন ঘটনা কমে আসবে।” এলাকার বিশিষ্ট সমাজসেবক ও শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, “শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের সবার দায়িত্ব। এই বখাটেপনার কারণে অনেক সময় মেধাবী শিক্ষার্থীরাও ঝরে পড়ে। ইউএনও সাহেবের এই সাহসী পদক্ষেপ একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আশা করি, এতে অন্যরাও অনুপ্রাণিত হবে এবং নিজেদের সন্তানদের ব্যাপারে আরও সচেতন হবে।” উপজেলা প্রশাসনের এই পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়েছে স্থানীয় জনগণ ও শিক্ষকমহল। তারা মনে করছেন, এমন ধারাবাহিক অভিযান চললে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনের পরিবেশ আরও নিরাপদ হবে।