গিয়াস উদ্দিন মিয়া, গৌরনদী (বরিশাল) প্রতিনিধি
লিবিয়া থেকে অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে লিবিয়ার কোস্টগার্ডের হাতে আটককৃত বরিশালের গৌরনদী উপজেলার ৬০ জন এবং আগৈলঝাড়া উপজেলার ১০ জন যুবককে ছাড়িয়ে আনার দাবিতে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা মানবপাচারকারী দালালের বাড়িতে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন।
শনিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ডুমুরিয়া গ্রামের ইতালি প্রবাসী ও মানব পাচারকারী চক্রের দালাল জাকির মোল্লার বাড়িতে অবস্থান করে বিক্ষুব্ধ অভিভাবকরা।
জানা গেছে, লিবিয়ার কোস্টগার্ডের হাতে ৩টি স্পিডবোর্ড থেকে আটককৃত ১০৮ বাংলাদেশীর মধ্যে ৭০ জন বরিশাল জেলার গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলার বাসিন্দা। বাকিরা ঢাকা, মাদারীপুর, সিরাজগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলার।
দালালের বাড়িতে অবস্থানের খবর পেয়ে মানবপাচার চক্রের সদস্যরা লিবিয়া থেকে গৌরনদীর ২০ যুবককে রবিবার ছাড়িয়ে আনার খবর দিয়েছে। সোমবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন মুক্তিপ্রাপ্ত কয়েকজন যুবকের অভিভাবক — বার্থী গ্রামের লাদেন প্যাদার মা নাছিমা বেগম ও সবুজ মোল্লার পিতা ফারুক মোল্লা।
ভুক্তভোগীদের অভিভাবকরা জানান, ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় ঋণ, ধারদেনা ও জমি বিক্রি করে গৌরনদীর জাকির মোল্লা, বগুড়ার সাজু, কুষ্টিয়ার লিটনসহ পাঁচ দালালের কাছে ১৫ থেকে ১৮ লাখ টাকা করে প্রদান করে তাদের সন্তানরা ইতালি যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়।
দালাল জাকির তার লিবিয়ান সহযোগীদের মাধ্যমে গত ৮ সেপ্টেম্বর রাত ১২টার দিকে লিবিয়ার বেনগাজি থেকে প্রথম দল হিসেবে গৌরনদীর ৩৮ যুবককে স্পিডবোর্ডে করে ইতালির উদ্দেশ্যে পাঠায়।
পরের দিন রাত ১টার দিকে দ্বিতীয় বোর্ডে আরও ৩২ জনকে পাঠানো হয়।
কিন্তু কয়েক ঘণ্টা যাত্রার পর লিবিয়া কোস্টগার্ড ওই দুই স্পিডবোর্ড আটক করে, এতে গৌরনদীর ৫৮ যুবকসহ মোট ৭০ বাংলাদেশী ধরা পড়ে।
পরবর্তীতে জানা যায়, তৃতীয় স্পিডবোর্ডটিও ২৩ সেপ্টেম্বর আটক হয় এবং যাত্রীদের লিবিয়ার বাংকিনা কারাগারের পাশে একটি গোডাউনে রাখা হয়।
দালাল জাকির ও তার সহযোগীরা পরে খবর পান, আটককৃত সবাইকে গাম্মুদা কারাগারে হস্তান্তর করা হয়েছে।
আটক যুবকদের কয়েকজন ইমো অ্যাপের মাধ্যমে চিরকুট পাঠিয়ে পরিবারকে জানায় যে তারা এখন বাংকিনা কারাগারের পাশের একটি গোডাউনে বন্দি অবস্থায় আছে।
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে অভিভাবকরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন এবং শনিবার থেকে দালাল জাকিরের বাড়িতে অবস্থান নিয়ে তার মা ও বোনকে গৃহবন্দি করে রাখেন, দরজার সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
দালাল জাকিরের মা মোসাঃ নুরজাহান বলেন,
“আমার ছেলে জাকির তার মনোনীত দুই লিবিয়ানকে দিয়ে রবিবার রাতে গৌরনদীর ২০ যুবককে ছাড়িয়ে এনেছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে বাকি যুবকদেরও বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে নিরাপদ স্থানে রাখার ব্যবস্থা করবে।”
এদিকে, ঘটনার পর থেকেই জাকির মোল্লার বাবা জামাল মোল্লা, ইউপি সদস্য হাবুল বেপারী, এবং জাকিরের স্ত্রী-শ্বশুরসহ স্বজনরা বাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে চলে গেছে।