শামসুল হক ভূঁইয়া,গাজীপুর
গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (গাকৃবি) কৃষিতত্ত্ব বিভাগের প্রখ্যাত দুই কৃষি বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. এম. ময়নুল হক ও প্রফেসর ড. মো. মসিউল ইসলামের নেতৃত্বে উদ্ভাবিত হয়েছে উচ্চ লবণ সহিষ্ণু একটি নতুন গমের জাত—‘জিএইউ গম ১’। এটি দেশের প্রথম লবণাক্ততা সহনশীল (১২ ডিএস/এম) গমের জাত, যা দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত অঞ্চলে চাষাবাদের জন্য বিশেষ উপযোগী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
গবেষণা মাঠ ও কৃষকের জমিতে ২০২১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত পরীক্ষার পর এই জাতটি উচ্চফলনশীল ও লবণসহিষ্ণু হিসেবে প্রমাণিত হয়। পরবর্তীতে দেশের ছয়টি স্থানে মাঠ মূল্যায়নে সন্তোষজনক ফলাফল পাওয়ার প্রেক্ষিতে জাতীয় বীজ বোর্ড ১৭ জুন ২০২৫ তারিখে এর চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়।
উল্লেখযোগ্যভাবে, ‘জিএইউ গম ১’ জাতটি হেক্টরপ্রতি স্বাভাবিক মাটিতে ৪.৫ টন এবং লবণাক্ত মাটিতে ৩.৭৫ টন পর্যন্ত ফলন দিতে পারে। এতে রয়েছে উচ্চমাত্রার প্রোটিন ও গ্লুটেনিন, যা শরীর গঠনে, রোগ প্রতিরোধে এবং পুষ্টি শোষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ডিইউএস বিশ্লেষণে এ জাতের ১৩টি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য নিশ্চিত করা হয়েছে। দানাগুলো তামাটে ও চকচকে, গাছের কান্ড মোটা এবং খড় উৎপাদনের দিক থেকেও এটি উপযোগী।
উদ্ভাবক প্রফেসর ড. মো. মসিউল ইসলাম বলেন, “জিএইউ গম ১ আমাদের দীর্ঘ গবেষণা ও মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতার ফল। লবণাক্ত এলাকায় কৃষকেরা যাতে গম চাষে ভালো ফলন পান এবং লাভবান হন, সেই লক্ষ্যেই এই জাতটি উদ্ভাবন করা হয়েছে।”
গাকৃবি উপাচার্য প্রফেসর ড. জিকেএম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “এই জাতটি শুধু গাকৃবির নয়, গোটা দেশের কৃষির জন্য এক বড় অর্জন। এটি দেশের টেকসই কৃষির প্রতীক হয়ে উঠবে এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
এই উদ্ভাবনের মাধ্যমে গাকৃবির উদ্ভাবিত জাতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৯১টি। নতুন এ গম জাত দেশের কৃষিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।