টুঙ্গিপাড়ায় সাধারণ মানুষের মনে স্থান করে নেওয়া ইউএনও একেএম হেদায়েতুল ইসলাম পদোন্নতি পেয়ে গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করবেন আগামীকাল মঙ্গলবার।
আজ তিনি টুঙ্গিপাড়ায় নির্বাহী অফিসার হিসেবে শেষ কর্মদিবসে শুভেচ্ছা, সংবর্ধনা ও ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে অতিবাহিত করেছেন।
এ সময় উপজেলার সকল দপ্তরের ফাইলে স্বাক্ষর করেও ব্যস্ত সময় পার করেছেন তিনি।
একেএম হেদায়েতুল ইসলাম ২০১৩ সালে ৩১ তম বিসিএস (প্রশাসন) এর একজন কর্মকর্তা হিসেবে চাকরীতে পদার্পন করেন। টুঙ্গিপাড়া উপজেলাতে নির্বাহি অফিসার হিসেবে যোগদানের পূর্বে তিনি বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহি অফিসার ছিলেন। এর আগে তিনি তথ্য কমিশনারের একান্ত সচিব হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
চাকুরী কালীন সময়ে তিনি মালয়েশিয়া, ভুটান, ইন্দোনেশিয়ায় বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেছেন। হেদায়েতুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ইন লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং, এমবিএ (মার্কেটিং) ডিগ্রী লাভ করেন। তার জন্মস্থান দিনাজপুর জেলায়। ব্যক্তি জীবনে তিনি এক সন্তানের জনক। তার স্ত্রী একজন চিকিৎসক।
১ বছর ৬ মাস টুঙ্গিপাড়ায় ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এই মানবিক মানুষটি। তার সময়ে করোনার প্রাদুর্ভাব থাকায় বেশিরভাগ সময়ই করোনা সংশ্লিষ্ট বিষয় ও ত্রাণ কার্যক্রমে অতিবাহিত করেছেন। টুঙ্গিপাড়ায় ইউএনও হিসেবে তার সফলতার পাল্লা ভারী হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যর্থতাও চোখে পড়ে।
• মুজিব বর্ষের অনুষ্ঠান মালার মূল পর্ব টুঙ্গিপাড়ায় অনুষ্ঠিত হয়েছে যা তিনি বিচক্ষণতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছেন।
• জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ টুঙ্গিপাড়ায় হওয়ায় তাকে দিনের বেশিরভাগ সময় ব্যস্ত থাকতে হয়েছে ভিআইপিদের প্রটোকল দিতে। যা তিনি শতভাগ সফলতার সঙ্গে সম্পাদন করেছেন।
• টুঙ্গিপাড়ায় রাজনৈতিক গ্রুপিং লবিং থাকায় সকল পক্ষের সঙ্গে তিনি চতুরতার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছেন।
• মুজিববর্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের ঘর তিনি পূর্বের অনিয়ম ও ঘুষ বাণিজ্য বন্ধ করে সততার সঙ্গে যোগ্য দাবিদার দের ঘর প্রদান করেছেন যা তার আরো একটি বড় সাফল্য।
• তিনি স্থবির হয়ে যাওয়া শিল্পকলা একাডেমি কে পুনর্গঠন করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছেন।
• অসংখ্য হুমকি থাকা সত্ত্বেও তিনি টুঙ্গিপাড়ায় বেশ কয়েকটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন।
• তিনি টুঙ্গিপাড়ায় ক্রিকেট একাডেমি গঠন করে মাঠে খেলাধুলা ফিরিয়ে এনেছেন। খেলার মাঠে তার উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
• টুঙ্গিপাড়ায় তিনি প্রথমবারের মতো শিশুদের জন্য আর্ট স্কুল চালু করেছেন।
আরো পড়ুনঃ
• তিনি শিক্ষার্থীদের প্রতিভা অন্বেষণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। তার সময়ে স্কাউটের কার্যক্রম ছিল চোখে পড়ার মতো।
• যোগ্যতম লোককে খুঁজে সংশ্লিষ্ট কাজে তাকে ব্যবহার করে হেদায়েতুল ইসলাম তার মেধার প্রকাশ ঘটিয়েছেন।
• খুব সহজেই টুঙ্গিপাড়ার স্থানীয় মানুষের সাথে মিশে গিয়েছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হেদায়েতুল ইসলাম।
• টুঙ্গিপাড়ায় বিভিন্ন নদীতে প্রভাবশালীদের অবৈধ ১০ টি বালু উত্তোলন করা ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা বন্ধ করতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন।
• টুঙ্গিপাড়ার শিক্ষাঙ্গনে যথাযথভাবে পাঠদান না করা, শিক্ষকদের বিভিন্ন অনিয়ম রুখতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন।
• টুঙ্গিপাড়ার প্রাণকেন্দ্র পাটগাতি বাজারের ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন অনিয়ম যেমন সোয়াবিন তেল মজুদ করে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি, অবৈধ পলিথিন বিক্রি সহ বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে তিনি কোনো রকম অভিযান পরিচালনা করেন নি। দু’একটি নামমাত্র অভিযান পরিচালনা করলেও সে ক্ষেত্রে জেল জরিমানা করেন নি।
• সারাদেশে ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলোতে অভিযান পরিচালনা করলেও টুঙ্গিপাড়ায় তিনি কোন প্রকার অভিযান পরিচালনা করেন নি।
মাঠে, মঞ্চে, অফিসে সমান পারদর্শী মানবিক এই মানুষটি সবাইকে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখতে বলেছেন। সেই মানুষটি একদিন হিমালয় স্পর্শ করবে এমনটি মনে করে টুঙ্গিপাড়ার সাধারণ মানুষ।
সততার চর্চা করা এই মানুষটির সফলতা, দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা করে নবধারা পরিবার।
নবধারা/বিএস