
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া বঙ্গবন্ধু দারিদ্য বিমোচন ও পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বাপার্ড) দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে। হাজার হাজার উদ্যোক্তা সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের বিশাল জনগোষ্ঠির কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এই একাডেমি।
আগামী ১৬ জুন বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ভাচুর্য়াল প্লাটফর্মে যুক্ত হয়ে বাপার্ড উদ্বোধন করবেন।
এ উপলক্ষ্যে পুরো একাডেমি বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। করা হয়েছে আলোক সজ্জা। সেখানে উৎসব মুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
এটি একটি আন্র্Íজাতিক মানের প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমি। প্রতিষ্ঠানটি দেশের ক্ষুধা-দারিদ্রতা দূর করবে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশাল জনগোষ্ঠির কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে জীবন মান উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। সৃষ্টি করবে দক্ষ মানব সম্পদ। এ অঞ্চলের অর্থনীতির চাকা আরো গতিশীল করবে বাপার্ড। বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশের কাতারে সামিল করতে এই একাডেমি ব্যাপক ভ্থমিকা রাখবে। এই একাডেমিতে জাতীয়,আন্তর্জাতিক সভা, সেমিনার, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কার্যক্রমের ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে এখান থেকে বৈদেশিক মূদ্রা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজ নির্বাচনী এলাকা। ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও জীবনমান উন্নয়নে কোটালীপাড়ায় বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্য বিমোচন প্রশিক্ষণ কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা করেন।
২০০১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রচেষ্টায় কোটালীপাড়ায় বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্য বিমোচন প্রশিক্ষণ কমপ্লেক্সে যাত্রা শুরু করে। পরে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে এটির কার্যক্রম প্রায় বন্ধ করে দেয়। শত বঁাধা পেড়িয়ে প্রতিষ্ঠানটি এপর্যন্ত দক্ষিণ-পডশ্চিমাঞ্চল সহ দেশের বিভিন্ন জেলার ৩০ হাজার মানুষকে কৃষি কাজ, সবজি, মৎস্য চাষ, হাঁস, মুরগি, গরু,ছাগল পালন, সেলাই, কম্পিউটার সহ বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। তাদের উপকরন ও অর্থিক সহায়তা ও ব্যাংক ঋনের ব্যবস্থা করে আত্ম কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে দিয়েছে। এতে লক্ষাধিক মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটেছে। দেশে দারিদ্র্যতা হ্রাসে ভূমিকা রেখেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালে এটিকে বঙ্গবন্ধু দারিদ্য্র বিমোচন ও পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বাপার্ড) প্রকল্প হিসেবে গ্রহন করেন।
স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডি ২ শ’ ৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪০ একর জমির ওপর বাপার্ড বাস্তবায়ন করেছে। এখানে রয়েছে ২টি ১০ তলা ভবন, অত্যাধুনিক প্রশাসনিক, হোস্টেল ভবন। রয়েছে পোল্ট্রি, হ্যাচারীসহ বিভিন্ন সেড। একাডেমির সব পুকুর নতুন করে সাজানো হয়েছে। এছাড়া পুরনো সব স্থাপনা অধুনিকায়ন করা হয়েছে। একাডেমির সৌন্দর্য বর্ধণ করা হয়েছে । উদ্বোধনের পর বাপার্ড নতুন আঙ্গিকে একটি আন্তর্জাতিক মানের একাডেমি হিসেবে কাজ শুরু করবে।
গোপালগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ এহসানুল হক বলেন, বাপার্ডের নির্মাণ কাজ শেষে হয়েছে। আগামী ১৬ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাপার্ড উদ্বোধন করবেন। এরপরই ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন হবে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের দিন বদলে বাপার্ড ও পদ্মা সেতু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বাপার্ডকে আন্তর্জাতিক মানের একটি প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমি হিসেবে আমরা নির্মাণ করে দিয়েছি।
বাপার্ডের মহাপরিচালক সৈয়দ রবিউল আলম বলেন, ঢাকার কাছের জেলা গোপালগঞ্জ। কিন্তু পদ্মা নদীর কারণে এ জেলার সাথে রাজধানীর সাথে সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল না। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের এ জেলার সাথে দেশের সব জেলার যোগাযোগ স্থাপতি হবে। সেই সাথে বাপার্ড প্রশিক্ষণ দিয়ে দেশের দুস্থ, প্রতিবন্ধী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠির কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে। বিশেষ করে দারিদ্র বিমোচনে আমরা বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারব। পদ্মা সেতুর কারণে এ অঞ্চলের প্রবৃদ্ধি বাড়বে। এছাড়া দক্ষ মানব সম্পদ গড়বে এই একাডেমি। সারাদেশের ক্ষুধা-দারিদ্রতা দূর করতে আমরা ভূমিকা রাখতে পারব। গবেষণা ও গবেষণার ফলাফল বাস্তবায়ন করে আমরা মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন করতে সক্ষম হব। আন্তর্জাতিক মানের এই একাডেমিতে ইন্টারন্যাশনাল সভা, সেমিনার, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কার্যক্রম আয়োজনের সুযোগ রয়েছে। এখান থেকেও বৈদেশিক মূদ্রা আয় করা যাবে। এসব সুযোগ সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠিকে উন্নয়নের মূল শ্রোত ধারায় নিয়ে আসতে পারব। দেশ উন্নত দেশের মতই উন্নত ও সমৃদ্ধশালী হবে বলে আমি আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
বাপার্ডের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ তোজাম্মেল হক বলেন, প্রতিষ্ঠানটি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে আগে থেকেই কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে নতুন আঙ্গিকে আন্তর্জাতিক মানের একাডেমি হিসেবে এটি যাত্রা শুরু করবে। এতে মানুষের নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। দক্ষ মানব সম্পদ দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ ও গতিশীল করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাবে। অবশ্যই আমদের দেশ উন্নত ও সমৃদ্ধশালী হবে। এখান থেকে ক্ষুধা ও দারিদ্রতা চিরতরে বিদায় নেবে।