সত্যজিৎ সাহা, বিশেষ প্রতিনিধি :
কোটালীপাড়া হতে ফিরেঃ
দরিদ্রতার দানবকে জয় করে মেডিকেল পরীক্ষায় উত্তীর্ন হয়েছেন গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার রামশীল গ্রামের চয়ন অধিকারী। কৃষক বাবার দুই ছেলের মধ্যে ছোট ছেলে চয়ন অধিকারী এ বছরের চট্রগ্রাম কলেজে সম্মানের সাথে উত্তীর্ন হয়েছেন। এমন একটি অসচ্ছল পরিবার থেকে মেডিকেল কলেজে চান্স পাওয়াটা ছিলো স্বপ্নের মতো। চয়ন অধিকারীর মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগের খবরে আনন্দের জোয়ার বইছে পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের মাঝে।
রামশীল গ্রামের কৃষক মনীন্দ্রনাথ অধিকারী স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে কৃষি কাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করতেন। ছোটবেলা থেকেই চয়ন অধিকারী পড়াশোনায় খুবই আগ্রহী ছিলেন। আর্থিক অসচ্ছলতাকে উপেক্ষা করেই অদম্য ইচ্ছাশক্তিতে ২০১৮ সালে পূর্ব কোটালীপাড়া ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এস.এস.সি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ন হয়। এরপরে নিজ গ্রামের রামশীল কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়ে এইচ.এস.সি পরীক্ষাতে ও জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ন হয়। অদম্য মেধাবী চয়ন অধিকারীর ছোটবেলা স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হওয়ার, এইচ.এস.সি পরীক্ষায় উত্তীর্ন হয়েই প্রস্তুতি নিতে থাকে মেডিকেলে পরীক্ষা দিতে। পরবর্তীতে অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল হিসেবে চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজে এম.বি.বি.এস এ চান্স পায় চয়ন অধিকারী।
চয়নের এই সাফল্য অর্জনে আনন্দিত হয়ে তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রামশীল কলেজের অধ্যক্ষ জয়দেব চন্দ্র বালা নবধারা কে বলেন, ছেলেটা যখন এস.এস.সি পাশ করে আমার কাছে আসে তখনই ওর মধ্যে আমি আলাদা কিছু অনুভব করেছিলো, বুঝতে পেরেছিলাম এই ছেলেটার বড় কিছু হওয়ার অদম্য ইচ্ছাশক্তি আছে। এরপর থেকেই আমি এবং আমার কলেজের প্রতিটি শিক্ষকই সন্তানের মতোই ওকে পরিচর্যা করেছি এমনকি আমার কলেজে পড়াশোনার জন্য একটি অর্থও চয়নের কাছ থেকে নেইনি আমরা। আমি চয়নকে আরও বলেছি যে, মেডিকেলে পড়ার সময়েও যদি কখনো কোন সহযোগিতা প্রয়োজন হয় তবে আমি সর্বদাই ওর পাশে আছি।
চয়নের বাবা মনীন্দ্রনাথ অধিকারী আবেগঘন কন্ঠে নবধারা কে জানান, আমার ছেলে মেডিকেলে চান্স পেয়েছে এটা আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় খুশির খবর। আমার ছেলেটা ছোটবেলা থেকেই চাইতো জীবনে বড় হয়ে মানুষের সেবা করতে আজ সেই পথে আরও অনেকদূরে এগিয়ে গেল। আসলে আমার ছেলেকে যে পরিবেশ দেয়া উচিৎ ছিলো আর্থিক অসচ্ছলতার কারনে আমি দিতে পারেনি তবুও ওর অদম্য ইচ্ছেতে আজ সে সাফল্য অর্জন করতে পেরেছে আমি চয়নের ভবিষ্যৎ মঙ্গল কামনা করছি।
এই বিষয়ে চয়ন অধিকারীর কাছে তার অনুভুতির কথা জানতে চাইলে তিনি নবধারা কে বলেন, আমি ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় ১১১৩ তম মেধাক্রমে চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছি, আমি ধন্যবাদ দিতে চাই যাদের উদ্দীপনা অনুপ্রেরণা উৎসাহ বিশেষ করে আমার পরিবার ও প্রাইমারি থেকে শুরু করে উচ্চ বিদ্যালয়, কলেজসহ আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক ও শিক্ষিকা বৃন্দকে। আমি আলাদাভাবে একটু বলতে চাই গোপালগঞ্জ জেলার একটি স্বনামধন্য ও কোটালীপাড়া উপজেলার এ বছরের শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে রামশীল কলেজ। আমাদের অধ্যক্ষ মহোদয় জয়দেব চন্দ্র বালা তিনি অত্যন্ত সৎ নিষ্ঠা ও দায়িত্বের সহিত কলেজের সকল কার্যক্রম সুন্দরভাবে পরিচালনা করেন। আমরা গর্বিত এরকম একজন অধ্যক্ষ মহোদয় পেয়ে। আমি বিশেষভাবে ধন্যবাদ দিতে চাই বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক শেখর চন্দ্র পাল স্যার কে, তিনি আমাকে সব সময় অনুপ্রেরণা জুগিয়ে ছিলেন। সর্বশেষ আমি সবার কাছে আশীর্বাদ কামনা করছি আমি যেন অত্যন্ত সফলতার সহিত মেডিকেল পড়া শেষ করে এই মহান পেশায় নিজেকে সমর্পিতকরে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে অবদান রাখতে পারি ।