শেখ শাহিনুর ইসলাম শাহিন, বাগেরহাট (মোল্লাহাট)প্রতিনিধিঃ
বাগেরহাটের মোল্লাহাটে অনাবৃষ্টি ও খরাতে সাদা সোনাখ্যাত চিংড়ি শিল্পের উপর বিরুপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। প্রচন্ড খরার প্রভাবে ঘেরের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে কয়েক হাজার ঘেরের চিংড়ি মাছ। মোল্লাহাটে সাধারনত ধান এবং চিংড়ি মাছ একই সাথে চাষাবাদ করা হয়। শীতকালে ধান লাগানোর সময় ঘেরের পানি কমিয়ে ক্যানেলে নামিয়ে রাখা হয়। কিন্তু চলমান অনাবৃষ্টি ও খরার প্রভাবে তাপ মাত্রা বৃদ্ধির ফলে ক্যানেলের পানি শুকিয়ে মাছের ঘনত্ব বেড়ে যাচ্ছে। ফলে প্রচন্ড তাপমাত্রার বৃদ্ধির প্রভাবে পানিতে অক্সিজেনের পরিমান কমে যাচ্ছে। এতে চিংড়ি মাছসহ অন্যান্য মাছ মারা যাচ্ছে।
সব মিলিয়ে তাপদাহ ও বৃষ্টিপাত না হওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন এখানকার বিশাল জনগোষ্ঠী। এখন একমাত্র বৃষ্টি ছাড়া যেন উপায় নেই মোল্লাহাটের বাসিন্দাদের।
উপজেলা মৎস্য অফিসের তথ্য মতে- এ উপজেলায় ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ১২ হাজার ৭ শত ৪০টিরও বেশি চিংড়ি ঘের রয়েছে। বাগদা চিংড়ির চাষ হয় ৪৬২৩.৪৪ হেক্টর জমিতে এবং গলদা চিংড়ি চাষ হয় ২৪০.৬৬ হেক্টর জমিতে। ২০২০-২১ অর্থ বছরে এ উপজেলায় বাগদা চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে ২২০ মেট্রিক টন এবং গলদা চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে ২৭১.৫ । তবে চলমান অনাবৃষ্টি ও খরার কারণে সেই চিংড়ি শিল্প এখন চরম ঝুঁকিতে পড়েছে। প্রচন্ড রোদে ঘেরের পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে কিছু ঘেরের পানিতে লবণাক্ততাও দিনকে দিন বাড়ছে। লবণ ও তাপমাত্রা বাড়ায় মারা যাচ্ছে চিংড়ি মাছ। তাই দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চিংড়ি চাষীরা। এছাড়া জলাশয় শুকিয়ে যাওয়ায় মানুষ ও গবাদী পশুর গোসলের পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। প্রচন্ড খরার প্রভাবে এপ্রিল-মে মাসে গলদা চিংড়ি মজুদ করতে পারছেনা চাষীরা।
এদিকে চিংড়ি পোনা ও পানি সংকটে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন এ অঞ্চলের চাষিরা। একদিকে ঘেরে পানি নেই, অন্য দিকে অতিরিক্ত টাকা দিয়েও তারা চাহিদা মোতাবেক পোনা পাচ্ছেন না তারা। এ অবস্থায় এক ধরনের অনিশ্চিয়তার মধ্যে পড়েছেন চাষিরা। তারা বলছেন এ অবস্থা চলতে থাকলে চিংড়ি উৎপাদনে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
উপজেলার চাকদাহ গ্রামের চিংড়ি চাষি মিল্টন বিশ্বাস বলেন- এ বছর অনাবৃষ্টি ও খরার প্রভাবে মাছ মোরে আমার ঘেরের চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ মিলে প্রায় লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে। অনাবৃষ্টি ও খরার প্রভাবে ঘের রেডি করেও নতুন পোনা ছাড়তে পারছিনা পানির অভাবে। আবার পোনা সংকট থাকায় দামও অনেক বেশী এবং পোনা ছাড়লেও বেশীর ভাগ পোনা প্রচন্ড গরমে মারা যাচ্ছে।
উপজেলার গাংনী সরকার পাড়া গ্রামের চিংড়ি চাষি মোঃ নুর ইসলাম বলেন- প্রচন্ড খরার প্রভাবে আমার মজুদকৃত চিংড়ি মাছ হিট স্টোক করে মারা যাচ্ছে। নতুন করে এখনো পোনা ছাড়তে পারছিনা। এদিকে করোনা পরিস্থিতি ও লকডাউনের কারণে (এনজিও) গুলো বন্ধ থাকার কারণে নতুন করে ঋন নিয়ে রেণু পোনা ছাড়বো তাও পারছিনা।
উপজেলার নাশুখালী একতা মৎস্য ভান্ডারের পোনা ব্যবসায়ী ডালিম শেখ নবধারা কে বলেন- বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি ও লকডাউনের কারণে গাড়ি বন্ধ থানায় রেণু পোনা আসতে সমস্যা হচ্ছে ফলে পোনার সংকট দেখা দিয়েছে। কুয়াকাটা, কক্সবাজার থেকে হ্যাচারীর পোনা আসতেছে প্রতি হাজার পোনার দাম ২৮ থেকে ২৯ শত টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পোনার চাহিদা থাকলেও আমরা পোনা না পাওয়ার কারণে চাষিদের কাছে বিক্রয় করতে পারছিনা।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ মাছুম খান নবধারা কে বলেন- আমরা মৎস্য বিভাগ থেকে চাষীদের বিভিন্ন পরামর্শ যেমন খরার মধ্যে চিংড়ি ঘেরের পানি ওঠানামা করানো, ছায়ার ব্যাবস্থা করা, ঘেরে পর্যাপ্ত পানি রাখা, ম্যাক্সিলাইট, জিওলাইট, গ্যাসোনেক্স প্লাস,বা গ্যাসোনি পানিতে ছেটানোসহ নানা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। মৎস্য বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী মৎসে যে পানির ব্যবহারের তাগিদ দেয়া হয়েছে সেই পানি সংকটই চলছে চলমান তাপদাহের কারণে। এ থেকে পরিত্রাণ মিলবে হয়তো বৃষ্টি হলেই। এখন সকলেরই অপেক্ষা বৃষ্টি কখন হবে। নতুবা চলমান এ অবস্থা আরো প্রকট আকার ধারণ করবে।