মোঃ আসাদুজ্জামান আসাদ
উপজেলার সন্ধ্যা নদীর আধা কিলোমিটারের মধ্যে তিনটি খেয়া ও একটি ফেরি থাকলেও কমছেনা জনদুর্ভোগ।প্রতিনিয়ত হয়রানীর মধ্যেই খেয়া পাড় হচ্ছেন যাত্রীরা বলে অভিযোগ করেন একাধিক ভুক্তভোগী।সরজমিনে নদীর পশ্চিমপাড়ে ফেরিঘাটে দেখা যায় প্রতি ২ ঘন্টা পর পর ফেরি এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যায়।যা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই নগন্য।প্রতি ২ ঘন্টা পর পর একপার থেকে ছেরে যাওয়া একটি মাত্র ফেরি প্রত্যাশা পুরন করতে পারছেনা এ উপজেলাবাসির।
নদীর পশ্চিম পাড়ে একমাত্র সরকারি কলেজ আবার পূর্ব পাড়ে একমাত্র সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সন্ধ্যা নদীর অন্য তিনটি খেয়ার গুরুত্ব করেছে অপরিসীম।শুধু শিক্ষা খাতে নয় এ নদীর পশ্চিম পাড়ে ৬টি ইউনিয়ন। মিয়ারহাট ইন্দুরহাট সহ দুইটি বন্দর ব্যবসায় সমৃদ্ধ একাধিক হাটবাজার ও পিরোজপুর জেলার একমাত্র বিসিক শিল্প নগরী পশ্চিম পাড়ে হওয়ায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ব্যাবসায়ীদের পূর্বপাড়ে বাসস্টান্ডে নেমে এ খেয়ার উপর নির্ভর করতে হয়।আবার পশ্চিম পাড়ের বাসিন্দাদের উপজেলা বা থানা সংক্রান্ত যে কোনো কার্যের জন্য এ খেয়া পার হতে হয়।অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করার কারনেই এখানে আধা কিলোমিটারে চারটি পারাপারের ব্যবস্থা থাকলেও সরজমিনে দেখা যায় যাত্রীদের দুর্ভোগ।যেমনি রয়েছে সময়ের অপচয় তেমনী রয়েছে ভাড়ার বৈষম্য।
সরজমিনে উত্তর কৌরিখাড়া থেকে ছারছিনা খেয়া ঘাটঃ এখানে একজন যাত্রী পারাপারের জন্য নেয়া হয় ৫ টাকা।দুজন যাত্রী সহ একটি মটর সাইকেল পারাপারের জন্য নেয়া হয় ৪০ টাকা। দিনে এ ঘাটে ১০০ থেকে ১২০টি মটর সাইকেল পারাপার হয়।সরকারি ইজারামুক্ত এঘাটে ১৬টি নৌকা চলে সকাল ৫টা থেকে রাত ১১টা।ঘাটের মাঝি জাকির জানান সরকারি ইজারা না থাকলেও প্রতিমাসে আমরা ১৬ জন মাঝি ছারছিনা মাদ্রাসায় ৮হাজার এবং ঘাট সংলগ্ন উত্তর কৌরিখাড়া জামে মসজিদে ৬ হাজার ৪০০ টাকা দেই।একাধিক মাঝি জানান প্রতিদিন একজন মাঝি এ ঘাট থেকে ৬০০/৭০০টাকা আয় করে।দুই ঘন্টা পর পর সরকারি ফেরি চলাচলের কারনে মটর সাইকেল আরোহীরা সময় বাচানোর জন্য এ ঘাটেই সাচ্ছন্দবোধ করে।
উত্তর কৌরিখাড়া ফজিলা রহমান মহিলা কলেজ ঘাট থেকে স্বরূপকাঠী বাস স্টান্ড খেয়া ঘাটঃ সবচাইতে বেশি যাত্রী পারাপার হয় এ ঘাট থেকে।প্রতিদিন সকাল ৬টা ৫০ মিনিট থেকে রাত্র ৮টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত ট্রলার চলে এখানে।প্রতি ঘন্টায় দুইপাড় দিয়ে যাওয়া আসা করে আটটি ট্রলার।দুই পারে ১১০ টি ট্রিপ হয় দিনে।প্রতিটি ট্রলারে গড়ে ৫০ জন হিসেবে দিনে ৫৫০০ যাত্রী পারাপার হয়।যাত্রী প্রতি এখানে ৮ টাকা করে নেয়া হয়।সে হিসাবে বছরে খরচ বাদে কোটি টাকার উপর আর্য়ে এ ঘাট থেকে।দিনে মোট ছয়টি ট্রলার চলে।প্রতি ট্রলারে ১৫০০ টাকা করে ৬টি ট্রলারের মাধ্যমে বিপুল অংকের অর্থ আয় হলেও এ ঘাটে যাত্রী ভোগান্তী চরমে।রাতে এ ঘাটে যাত্রী প্রতি ১০০/২০০ টাকা দিতে বাধ্য করা হয় বলে অভিযোগ করেন একাধিক ভুক্তভোগী।উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রনী দত্ত জয় বলেন এ ঘাটের ইজারা দেয়ার জন্য দরপত্র আহ্বান করেছিলো উপজেলা প্রশাসন।অনেকে দরপত্র কেনার পরও অজানা কারনে প্রশাসন টেন্ডার প্রদান স্থগিত রাখে।ফলে বিগত বছরগুলোর মতো উপজেলা প্রশাসনই এর আয় ব্যায় ভোগ করে।
আওয়ামীলীগের সন্মানীত সদস্য রহমত উল্লাহ জানান রাতে এ ঘাটের ভোগান্তি শব্দ ব্যাবহারে প্রকাশযোগ্য নয়।
দক্ষিন কৌরিখাড়া টু স্বরূপকাঠী থানা খেয়াঘাট।এখানে ট্রলার চলার কথা তিনটি।বর্তমানে চলে ২টি।১৫ মিনিট পর পর ছারার কথা থাকলেও কৌশলে এ ট্রলার ছারা হয় নিজেদের ইচ্ছামত।গড়ে এ সব ট্রলারে জনপ্রতি ভাড়া ৬ টাকা।ঘাটের ৬ টাকা দিয়ে প্রাইভেটে দিতে হয় ৫ টাকা। যাত্রী ছারা প্রাইভেট চলে ২০টি।জেলা পরিষদের মাধ্যমে এ ঘাটের আয় ব্যায় রক্ষনাবেক্ষন হলেও প্রকৃত ১১ টাকা ছারা এ ঘাটে মাত্র ৫% লোক পারাপার হতে পারে।এখানে যাত্রীদের হয়রানী করার জন্য একটা বড় সিন্ডিকেট কাজ করে বলে জানান ঘাট সংলগ্ন ব্যবসায়ী এমাম।সরজমিনে ঘাটের প্রাইভেট মাঝি আবুল জানান এখানে সাধারন যাত্রীরা এক প্রকার জিম্মি আমাদের কাছে। ইজারাদারের খেয়ার ট্রলার ছারার সময় হওয়ার দু চার মিনিট আগেই আমাদেরকে ওই ট্রলারের সাথে ট্রলার লাগানোর নির্দেশ আছে।যেহেতু যাত্রী আগেই ঘাটের ৬টাকা ইজারাদারকে দিয়ে ট্রলারে বসে সেহেতু তারা এক প্রকার বাধ্য হয়েই আমাদের প্রাইভেট ট্রলারে ওঠে এবং বাড়তি ৫ টাকা দিতে বাধ্য হয়।তিনি জানান এতে ঠিকাদারের ট্রলার কম চলে এবং তাদের অর্থ বেচে যায়।
স্বরূপকাঠী উপজেলা আওয়ামীলীগের সন্মানীত সদস্য রহমত উল্লাহ জানান আমি সারা জীবনে দুইবার সরকারি ট্রলারে এ ঘাট থেকে পার হতে পেরেছি।বাকি সময়গুলোতে দক্ষিন কৌরিখাড়া খেয়াঘাট থেকে প্রাইভেটভাবেই পার হতে হয়েছে।রহমত জানান মাত্র ৫ মিনিটের হাটা পথে তিন ধরনের এই ভাড়া মেনে নেয়া যায়না।তিনি আরো বলেন বেসরকারি ঘাটে যেখানে ভাড়া বেশি হওয়ার কথা সেখানে স্বরূপকাঠীতে সরকারি তদারকীতে ভাড়া বেশি নেয়া হয়।এটা জনগনের উপর জুলুম। এটা বন্ধ হওয়া উচিৎ।তিনি বলেন যেহেতু উত্তর কৌরিখাড়া টু বাসন্টান্ড খেয়াঘাটে সরকারি ডাক হয়না সেহেতু বাৎসরিক আয়ব্যায়ের হিসাব জনগনকে জানানো প্রয়োজন।
৫ টাকা,৮ টাকা ও ৬ টাকা পাশাপশি তিনটি খেয়ার
ভাড়ার এই বৈষম্য,রাতে যাত্রীদের জিম্মি করে ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় এসব নিয়ে কথা হয় উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল হকের সাথে।তিনি জানান প্লাস ঘাট ছারা অন্য ঘাটগুলো থেকে আমার কখনও যাতায়াত করা হয়না তাই ভালো জানিনা।ভাড়ার বৈষম্য ও যাত্রী হয়রানীর ব্যাপারে তিনি বলেন সামনের উপজেলা মিটিংয়ে আমি এটা তুলবো।
পিরোজপুর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক স্বরূপকাঠীর বাসিন্দা এডভোকেট কানাইলাল বিশ্বাস বলেন অনেকেই এ ব্যাপারে আমাকে বলেছে।আমি চেষ্টা করবো জনস্বার্থে দ্রুত এর সমাধান করার।
এ ব্যাপারে কথা হয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তরের পিরোজপুর জেলা সহকারি পরিচালক দেবাশিষ রায়ের সাথে।তিনি বলেন ভোক্তা অধিকার আইন অনুসারে যেটা আসে আমরা সেটার মধ্যে থেকে ভোক্তাদের উন্নয়নে দ্রুত কাজ করবো ।