1. nabadhara@gmail.com : Nabadhara : Nabadhara ADMIN
  2. bayzidnews@gmail.com : Bayzid Saad : Bayzid Saad
  3. bayzid.bd255@gmail.com : Bayzid Saad : Bayzid Saad
  4. mehadi.news@gmail.com : MEHADI HASAN : MEHADI HASAN
  5. jmitsolution24@gmail.com : support :
  6. mejbasupto@gmail.com : Mejba Rahman : Mejba Rahman
বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫, ০৯:৪০ পূর্বাহ্ন

আমরা তোমাদের ভুলবোনা বলে আমরা যাকে মনে রাখতে পারিনি/ মুক্তকলাম

আবিদ হোসেন (সাহিত্যিক ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট)
  • প্রকাশিতঃ রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ১৫২ জন নিউজটি পড়েছেন।
আবিদ হোসেন (সাহিত্যিক ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট)
আমরা যারা বাঙলাদেশের নাগরিক তারা শুধুমাত্র যখন যে দল ক্ষমতায় থেকেছে সেই সব দলের কৃতি লোকগুলোর বীরত্বের ইতিহাসই জানতে পেরেছি ।
বই পুস্তক,পত্র পত্রিকায় এ যাবত শুধু তাদের কথাই জেনেছি ।
কিন্তু এইসব বীরদের বাইরেও কিছু লোক ছিলো যাদের
আপাদমস্তক মোড়ানো ছিলো বাঙালীয়ানা,যাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছিলো দেশপ্রেম, যাদের ধমনীতে প্রবাহিত হতো
মাটি ও মানুষের ঘ্রাণ ।
এইসব মানুষদের কথা আমরা কোনোদিন বই পুস্তকে পাইনি,পেলেও এক বা দুই লাইনেই শেষ!
ফলে জাতিগতভাবে আমাদের ভক্তি ও শ্রদ্ধার স্থানগুলো কিছু নির্দিষ্ট মানুষ দখল করে আছে দীর্ঘদিন ধরে !
চলেন আজকে এমন একজন মানুষ সম্পর্কে জানি ,
যার প্রতি প্রাপ্য সম্মান, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা আমরা কখনোই দেখাতে পারিনি,যার আলোচনা কখনোই এই জাতির কাছে মূখ্য হয়ে উঠতে পারেনি,সেই চির অবহেলিত খাঁটি বাঙালী মানুষটার কথা আজ আপনাদের শোনাবো-
তাঁর জন্ম ব্রিটিশ ভারতে ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দের ২রা নভেম্বর আর মৃত্যু বাঙলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার কয়েকদিন পরেই- ১৪ এপ্রিল ,১৯৭১ ।
১.
১৯৪৬ সালের নির্বাচনে তিনি কংগ্রেস দলের টিকিটে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নির্বাচিত হন।
পাকিস্তানের সংবিধান রচনার জন্য ঐ বছর
ডিসেম্বরে পূর্ববঙ্গ হতে তিনি পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৪৭ সালের পর একজন অসাম্প্রদায়িক
রাজনীতিক হিসেবে পাকিস্তানের রাজনীতিতে
সক্রিয় অংশ গ্রহণ করেন।
সেই থেকে বাঙলা ভাষা, বাঙলার মাটি, বাঙলার ফুল,বাঙলার জল,বাঙলার মানুষ,বাঙলার সবকিছুর একচ্ছত্র প্রতিনিধি হয়ে যান তিনি, পাকিস্তানি শাসকদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে চোখে চোখ রেখে তিনি বাঙলার স্বার্থে চিৎকার করেছেন ভয়ডরহীন।
শুরুটা ১৯৪৮ সালেই শুরু হয়।
সে বছর ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে আইনসভার অধিবেশন চলাকালীন ২৩ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষার প্রসঙ্গ আনা হয়েছিলো ।
অধিবেশন চলাকালে সবাই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দু করার জন্য সম্মতি দিয়েছিলো কিন্তু একজন লোক মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে না বলেছিলো ।
তিনি বলেছিলেন –
‘”পূর্ব পাকিস্তানের ৬ কোটি ৯০ লাখ মানুষের মধ্যে ৪ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাংলায় কথা বলে, তাই আমার বিবেচনায় বাংলা হওয়া উচিত রাষ্ট্রভাষা।”
“What should be the State Language of the State? The State Language of the Sate should be the Language which is used by the majority of the people of the State.”
তাঁর এই দাবি পাকিস্তান পার্লামেন্টে
প্রত্যাখ্যাত হয়।
তারপরই মূলত ভাষা আন্দোলনের সূচনা ঘটে।
কিন্তু তাঁর এই কথাগুলো বীরত্বের সাথে কোনদিন কি আমরা পাঠ্যসূচিতে পেয়েছি? কোথাও জেনেছি? কোথাও কারো বক্তব্যে তাঁর কথা অবলীলায় প্রকাশ করতে শুনেছি?
অথচ ভাষা আন্দোলনে আমরা শুধুমাত্র সেই নামগুলোই বছরের পর বছর ধরে স্মরণ করে এসেছি যা আমাদের মূখস্থ করানো হয়েছে।
কিন্তু যে মানুষটা অতোগুলো মানুষের মধ্যে বাঙলাকে রাষ্ট্রভাষা করার কথা উচ্চারিত করেছিলো তাঁর কথা কেউ মনে রাখিনি !
উনার কথার প্রেক্ষিতেই মূলত ভাষার জন্য আন্দোলন শুরু হয়েছিলো আর সেই আন্দোলনই ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে এসে পূর্ণতা পেয়েছিলো।
তিনি বাঙলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি তখনো সমানতালে করে গেছেন।
সে বছর অর্থাৎ ১৯৫২ সালে পাকিস্তান সংসদে তিনি মহান ভাষা আন্দোলনের পক্ষে জোরলো সমর্থন জানান।
পাকিস্তানের শাসকেরা তাঁর কথায় দাঁত খিটমিট করতো রাগে, ক্ষোভে আর যন্ত্রণায় ।
তাকে সরানোটাই পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীর মূল উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়ায়।
২.
১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিপুল
বিজয়ের কারণে মুসলিম লীগের ভরাডুবি হয়।
ওই বছর তিনি আবার পাকিস্তান আইন সভার
সদস্য নির্বাচিত হন ।
১৯৫৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর বিশেষ অনুরোধে পূর্ব
পাকিস্তানে যুক্তফ্রন্ট সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর
দায়িত্ব নেন তিনি এবং ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর
পর্যন্ত তিনি সেই মন্ত্রিসভায় ছিলেন।
১৯৬০ সালে সামরিক শাসনের সময় দেশের
জাতীয় নেতৃবৃন্দের সাথে তাঁর
উপরেও ‘এবডো’ (Abdo Law) আইন প্রয়োগ করা হয়।
এবডো আইন বলতে সাধারণত কোনো ব্যক্তি বা সংস্থাকে সমাজ বা আইনি ব্যবস্থার বাইরে রাখা বা তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার প্রক্রিয়াকে বোঝানো হয়।
তাঁর বিরুদ্ধে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর ছিলো তীব্র ঘৃণা ।
 ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তান সরকার তাঁকে গৃহবন্দি করে রাখে।
কিন্তু তিনি দমে যাননি কখনো, আপাদমস্তক বাঙালীয়ানা এই মানুষটি ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৭১ সালের ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে লড়াকু সৈনিকের ভূমিকা পালন করেন।
স্বাধীন বাঙলাদেশের প্রতি তাঁর ছিলো অকুণ্ঠ সমার্থন।
বাঙলাদেশের মানুষের স্বার্থের বাইরে তিনি কখনোই কিছু চিন্তা করতেন না ।
কিন্তু বাঙলাদেশের বর্তমান মানুষ কি তাকে মনে রেখেছে,এই অমূল্য রত্নকে আমরা ভুলে গেলেও পাকিস্তানিরা কখনো ভোলেনি।
তাঁর প্রতি তাদের তীব্র ঘৃণা, বিদ্বেষ,রাগ, রোষানল জন্মেছিল সেই ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকেই যেদিন তিনি পাকিস্তান পার্লামেন্টের সবার সামনে উর্দুকে প্রত্যাখ্যান করে বাঙলাকে রাষ্ট্রভাষা করার কথা বলেছিলেন।
৩।
পাকিস্তানিদের টার্গেটে তিনি সবসময় ছিলেন ।
সেই সুযোগ পাকিস্তানিরা পেয়ে যায় ১৯৭১ সালেই !
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ। গভীর রাত তখন।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। দেশব্যাপী গণহত্যা চালায়।
সকল মানুষ অনুভূতিহীন হয়ে পড়ে।
কারো বুঝতে অসুবিধে হল না যে,
পাকিস্তানিরা বাঙালীকে কোনো অধিকার দিবে না, বরং আন্দোলন –সংগ্রামকারীদের নিশ্চিহ্ন করার জন্য ওরা হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছে। তারপরও থেকেই শুরু হলো প্রতিরোধের পালা।
তখন তাকে দেশত্যাগ করে ভারতে যাওয়ার জন্য
বিভিন্ন মহল পরামর্শ দেয়।
কিন্তু তিনি নাছোড়বান্দা।
আপাদমস্তক বাঙালী এই মানুষটি কোনোভাবেই নিজের দেশ ছেড়ে কোথাও যেতে চায়নি ।
দেশ মাতৃকাকে ছেড়ে যাবেন না, এ কথা সবাইকে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন এবং ভাবতে শুরু করলেন দেশের
এই সংকটময় মুহূর্তে কি করা যায়, এ সব কথা।
কয়েক জনের সাথে আলাপও করেছিলেন তিনি ।
এ খবর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কানে চলে গেলে
তারা এবার তাদের পুরোনো শত্রুকে পুরোপুরি খতম করে দেওয়ার পরিকল্পনা করে !
পাকিস্তানি শাসকদের সরাসরি নির্দেশ ছিলো এই দেশপ্রেমিক লোকটাকে হত্যার জন্য।
অবশেষে ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ রাতে পাকিস্তানি
নরপশু হানাদার বাহিনী ৮৫ বছর বয়স্ক বৃদ্ধ লোকটিকে কে ও তাঁর ছোট ছেলেকে বাসা থেকে টেনে হেঁচড়ে ধরে নিয়ে যায় কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসে !
এই আপাদমস্তক বাঙালী মানুষটার প্রতি তারা ন্যূনতম দয়া প্রদর্শন করেনি, বৃদ্ধ মানুষটির হাত-পা ভে’ঙ্গে প’ঙ্গু করে দিয়েছিলো !
শুধু কি তাই ! দুই চোখে কলম ঢুকিয়ে অন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল তাকে ।
নির্মম নির্যাতন চালানো হয় তাঁর উপর ।
১৯৭১ সালের বাঙলা নববর্ষের দিন অর্থাৎ
১৪ এপ্রিল তাকে হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী !
তাঁর উপর দীর্ঘদিনের ক্ষোভ মেটাতে তারা ভুল করেনি।
নৃশংস উপায়ে তাকে হত্যা করার পরও তারা ক্ষান্ত হয়নি ।
থু থু ছিটানোর জন্য তাঁর লাশকে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছিলো!
এই মানুষটির কথা কোনদিন শুনেছেন?
আওয়ামী লীগের পাকিস্তানের প্রতি এতো ঘৃণা,এতো সনাতন প্রীতি তাদের তারপরও কি আমরা তাদের আমলে এই লোকটার সম্পর্কে খুব একটা জানতে পেরেছি !
কেউ তাঁর আত্মত্যাগের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছে কোনোদিন?
কোনোদিন কোনো বাঙলাদেশী করেনি,আর করবেওনা হয়তো !
তাঁর নাম শ্রী ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত।
তাঁর এতো বড় বীরত্বের কথা কোনদিন কোনো বইতে পাইনি,
জাতীয় দিবসগুলোতে পত্র পত্রিকায় কত লেখালেখি হয়, জ্ঞানী গুণীরা ভাষা আন্দোলন আর মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে মাইক ফাটায় ফেলে বক্তব্য দিয়ে, পাঠ্যপুস্তকে দলীয় লোকদের কথা এতো পড়ানো হয়েছে যে এই বাঙলাদেশপন্থী মানুষটির কথা কোনদিন কেউ বলেনি,পড়ায়নি,শুনায়নি ।
তাই এই মানুষটিকে এই প্রজন্ম চেনেওনা ভালো করে !
ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে তাঁর প্রাপ্য সম্মান, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা ফেরত দেওয়ার জন্য বাঙলাদেশের বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার এবং ভবিষ্যত নির্বাচিত সরকারের প্রতি আমার আকুল আবেদন থাকবে।
অন্তত তাঁর মৃত্যু দিনটিকে যেনো বিশেষভাবে স্মরণ করা হয়,
যেনো পাঠ্যপুস্তকে তাঁর বীরত্বের কথা প্রকাশ পায় ।
প্রচলিত গুণিজন ও বীরদের ভিড়ে এই মানুষটি যেনো হারিয়ে না যায় সে ব্যাপারে সকলে সোচ্চার হবে এই আমার প্রার্থনা ।।
লেখক: আবিদ হোসেন
(সাহিত্যিক ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট)
২৩-০২-২০২৫
ঢাকা

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved সর্বস্বত্বঃ দেশ হাসান
Design & Developed By : JM IT SOLUTION