সোহেল রানা বাবু,বাগেরহাট প্রতিনিধি
বাগেরহাটে ৭ মাস ধরে বেতন পান না ২১১ কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা (সিএইচসিপি)।
বেতন না পাওয়ায় চরম আর্থিক কষ্টে ভুগছেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানকারী এসব কর্মীরা। শুধু বেতন নয়, কোথাও কোথাও নিয়মিত ওষুধ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। আবার কোন কোন কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়মিত প্রদান করা ওযুধের পরিমাণ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। যার ফলে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানকারী সরকারি এই প্রতিষ্ঠান থেকে কাংখিত সেবা পাচ্ছেন না প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগন।
বাগেরহাট সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় ২১৪টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। এর মধ্যে ৩ টি ক্লিনিকে সিএইচসিপির পদ শূন্য রয়েছে।
বাকী ক্লিনিকগুলিতে কর্মরত ২১১ জন সিএইচসিপি গেল বছরের জুলাই মাস থেকে বেতন পান না। দীর্ঘদিন ধরে বেতন বন্ধ থাকায় হতাশ হয়ে পড়েছেন তারা। কেউ কেউ ক্লিনিকে সেবা দেয়া বন্ধ করেছেন, কেউ তুলনামূলক কম সেবা দিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ নিয়মিত আসছেন না ক্লিনিকে।
প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগনের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা চালু রাখতে অতিদ্রুত বেতন চালু করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও সি এইচ সিপিরা।
বাগেরহাট সদর উপজেলার রাজাপুর গ্রামের মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমরা এলাকার লোকজন প্রায়ই
ছোট ছোট অসুস্থতায় রাজাপুর কনিউনিটি ক্লিনিকে আসি, এখানের ম্যাডাম (সিএইচসিপি) নাকি অনেকদিন বেতন পায় না। এরকম হলে তো আমাদের সেবা দেবে না।
রহিমাবাদ কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আশা বাসন্তি রানী দাস বলেন, জ্বর, সর্দি, ডায়রিয়াসহ ছোটখাটো যেকোনো সমস্যায় আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকে যাই। তবে চুলকানির ঔষধ সহ অনেক ঔষধ এখন আর আগের মত পাই না। ক্লিনিকের ডাক্তার জানান,ঔষধ কমায়ে দিয়েছে।
বাগেরহাট সদর উপজেলার রহিমাবাদ কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, প্রায় ৮মাস ধরে বেতন পাই না। খুবই কষ্টে সংসার চলছে। তারপরও রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি।
একই উপজেলার মুক্ষাইট কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বেতন না পেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে খুবই দুর্বিসহ অবস্হার মধ্যে থেকেও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কথা চিন্তা করে চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা যে বেতন না পেয়ে কি কষ্টে দিনাতিপাত করছি এটা কাউকে বলাও যায় না।
আগে ৩২ প্রকারের ওষুধ দিত, এখন দেয় মাত্র ২০ প্রকারের ঔষধ। রোগীদের সেবা নিশ্চিত করতে অতিদ্রুত বেতন চালু ও ঔষধের পরিমান পূর্বের মতো বৃদ্ধি করার দাবি জানান এই সিএইচপিপি।
রাজাপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি চাদনী বলেন, জুলাই মাস থেকে আমাদের বেতন হচ্ছে না। শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন ৭০-৮০ টাকা ব্যায় করে ক্লিনিকে আসি রোগীদের সেবা দিতে। বেতন না পাওয়ার কারণে খুবই হতাশ হয়ে যাচ্ছি। মানসিকতাও ভাল নেই। আমাদের মানসিকতা যদি
ভাল থাকে তাহলে রোগীদের আরও বেশি সেবা দিতে পারবো। এছাড়া নিয়মিত ওষুধ প্রদানেরও দাবি জানান তিনি।
কমিউনিটি ক্লিনিকে সিএইচসিপিদের নির্দিষ্ট নিয়ম করে রোগীদের সেবা দেয়া উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো) অনুপম রানী দাস বলেন, আমরা ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন ক্লিনিকে সিএইচসিপিদের পাশাপাশি রোগীদের সেবা দেই কিন্তু আমরা নিয়মিত বেতন পাই, সেখানে সহকর্মীরা যদি বেতন না পায়, তাহলে আমাদেরও খারাপ লাগে। এজন্য ক্লিনিকের দেবা নিশ্চিত করতে সিএইচসিপিদের বেতন চালু করার দাবি জানান এই কর্মকর্তা।
এদিকে সরেজমিন ঘুরে বিভিন্ন সময় বাগেরহাট সদর উপজেলা, কচুয়া ও শরণখোলার উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে অফিস নির্ধারিত সময়ে কয়েকটি কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ পাওয়া যায়।
বাগেরহাটের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক আগে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে চলত। গেল বছরের মাঝামাঝি সময়ে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলিকে একটি ট্রাস্টের আওতায় নেয়া হয়। এজন্য সিএইচসিপিদের নিয়োগপত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ট্রাস্টের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।
আশাকরি বর্তমান সরকার দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করবেন। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ আবারও আগের মত সেবা পাবেন।