মোঃ ইব্রাহীম মিঞা, বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার পলিপ্রয়াগপুর ইউনিয়ন পরিষদের পশ্চিমে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী মোন্নাপাড়া ব্রিজ এক দিনে যেন হয়ে উঠল পারিবারিক আবেগ, প্রকৃতির সৌন্দর্য এবং জনবান্ধব প্রশাসনের এক উজ্জ্বল প্রতীক। গায়ে হলুদের শাড়িতে সজ্জিত নববধূর হাসিমুখ, পাশে ভাইদের ভালোবাসায় ঘেরা নিরাপদ বৃত্ত—এ যেন হাজার কথার চেয়ে বেশি কিছু বলে দেয়। মোন্নাপাড়া ব্রিজের উপর এমন এক আবেগঘন ফটোসেশনের সাক্ষী হলো বিরামপুর।
নববধূর ভাই বললেন, “আমাদের বোনের এই বিশেষ দিনটা আমরা চিরস্মরণীয় করতে চেয়েছিলাম। এই ব্রিজ আমাদের স্মৃতির অংশ, তাই এখানেই বোনের সাথে কিছু মুহূর্ত ক্যামেরায় বন্দি করলাম।
দৃশ্যটি দেখে পথচারীরাও থেমে গেলেন। কেউ চোখে আঙুল দিয়ে স্মৃতি খুঁজলেন, কেউ মোবাইল ক্যামেরায় ধরলেন মুহূর্তটিকে। এই আনন্দঘন আবহকে আরও সমৃদ্ধ করেছে মোন্নাপাড়া ব্রিজের নিচে গড়ে ওঠা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মোড়ানো একটি দৃষ্টিনন্দন পার্ক।
এই পার্কটি তৈরি হয়েছে দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মহোদয়ের পরামর্শক্রমে, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নুজহাত তাসনীম আওন এর দিকনির্দেশনায় এবং উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান এর সৃজনশীল পরিকল্পনায়।
এটি শুধু একটি বিনোদনকেন্দ্র নয়, বরং একটি স্বস্তির নিঃশ্বাস, যেখানে রয়েছে ছায়াঘেরা বসার জায়গা, শিশুদের খেলার খোলা মাঠ, হালকা খাবারের দোকান, নদীর ধারে হাঁটার সুপথ এবং মনপ্রাণ জুড়ানো সবুজ পরিবেশ। প্রতিদিনই পার্শ্ববর্তী গ্রাম ও উপজেলা থেকে মানুষ পরিবারসহ এই পার্কে আসছেন। কেউ সন্তানকে নিয়ে পাখি দেখছেন, কেউ নদীর পাড়ে বসে জীবনের ক্লান্তি ভুলে শান্তির নিঃশ্বাস নিচ্ছেন।
একজন প্রবীণ ভ্রমণকারী বলেন, “বয়স হয়েছে, তবুও এই পার্কে আসলে মনটা যেন আবার তরুণ হয়ে যায়। এই নদীর পাড়ে বসে অনেক স্মৃতি ফিরে আসে। এমন জায়গা আগে ছিল না।
একজন তরুণ জানান, “বন্ধুদের নিয়ে বিকেলে এখানে আসি। এখন আমরা নিজের এলাকাতেই এমন জায়গা পেয়েছি, যা আগে শহরে গিয়েও পাইনি।
এই প্রকল্প নিয়ে বিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুজহাত তাসনীম আওন বলেন, “আমরা চেয়েছি মানুষ যেন প্রকৃতির সঙ্গে যুক্ত থাকে। পরিবারের সবাই একসাথে সময় কাটাতে পারে—এমন একটি পরিবেশ তৈরি করাই ছিল লক্ষ্য। এ লক্ষ্যে বিরামপুর উপজেলা পরিষদ চত্বরে ময়ূরাক্ষী পুকুর, মুক্ত মঞ্চ তৈরি করতে স্থানীয় সম্পদ কাজে লাগিয়েই মানুষকে কিছু দিতে পেরেছি, সেটাই সবচেয়ে বড় আনন্দ।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান বলেন, “আমরা শুধু অবকাঠামো বানাইনি, আমরা মানুষের জন্য একটি অনুভূতির স্থান তৈরি করেছি। মানুষ যখন সন্তুষ্ট হয়, তখন বুঝি আমরা সঠিক পথেই আছি।
এই ফটোসেশন এবং পার্ক—উভয়ই যেন একে অপরকে পূর্ণ করে। একদিকে পারিবারিক মায়া, অন্যদিকে প্রশাসনের মানবিক উদ্যোগ—এই দুই মিলেই বিরামপুরকে আরও উজ্জ্বল করেছে।
এই গল্প শুধু একটি ফটোসেশন বা একটি পার্ক নির্মাণের নয়। এটি এক উপজেলার সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ, পরিবেশ সচেতনতা, এবং জনগণের পাশে দাঁড়ানো প্রশাসনের এক মেলবন্ধনের গল্প।