কাবা কাকলি, কবি নজরুল কলেজ প্রতিনিধি
রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী কবি নজরুল সরকারি কলেজে বিশুদ্ধ পানির সংকট দীর্ঘদিনের। শিক্ষার্থীদের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে কলেজ প্রশাসন সম্প্রতি একটি গভীর নলকূপ স্থাপন করলেও তা থেকে ওঠা পানি এখন আর্সেনিক, ঘোলা ও দুর্গন্ধযুক্ত, যা একেবারেই পানযোগ্য নয় বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
শিক্ষার্থীদের দাবি, নলকূপ স্থাপনে প্রশাসনের অবহেলা ও গাফিলতি রয়েছে। পাশাপাশি অভিযোগ তোলায় শিক্ষার্থীদের প্রতি অধ্যক্ষের অবমাননাকর মন্তব্য ও হুমকি কলেজজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
প্রতিদিন কলেজের উচ্চমাধ্যমিক, অনার্স ও মাস্টার্স পর্যায়ের হাজারো শিক্ষার্থী এ নলকূপের পানি ব্যবহার করেন। কিন্তু সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, পানিতে তীব্র দুর্গন্ধ ও লালচে রঙ, যা পানির অনুপযোগী। অন্যদিকে, কলেজের অন্যান্য ফিল্টার নষ্ট থাকায় শিক্ষার্থীদের বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে বোতলজাত পানি কিনে পান করতে হচ্ছে।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি কলেজ প্রশাসনের অর্থায়নে স্থাপিত নলকূপটি উদ্বোধন করেন অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ। প্রকল্পের বাজেট প্রায় ১৪ লাখ টাকা ধরা হলেও প্রশাসনের দাবি, এর অর্ধেক বাজেটেই কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। তবে টেন্ডার ও ঠিকাদারি দায়িত্বে কারা ছিলেন, সে বিষয়ে প্রশাসনের কোনো স্পষ্ট জবাব পাওয়া যায়নি।
অভিযোগ রয়েছে, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. ইউসুফ নলকূপ স্থাপনের টেন্ডার পান। তবে অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান এ তথ্য অস্বীকার করে বলেন, “না, তিনি ছিলেন না।”
কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী রেজাউল ইসলাম বলেন, “এই পানি পান করে অনেক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়েছে। এতে প্রচুর আয়রন ও দুর্গন্ধ রয়েছে। আমি মনে করি, প্রশাসনের গাফিলতিই মূল কারণ।”
আরেক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,“নতুন নলকূপের পানি এত ঘোলা ও দুর্গন্ধযুক্ত যে মুখের কাছে নেয়াই যায় না। বোতলে ভরে রাখলে নিচে ময়লার স্তর পড়ে যায়। আমরা অভিযোগ করলে স্যাররা বলেন, সব ফিল্টার নষ্ট হয়ে যাক, তখন সবাই এই পানি খাবে।”
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা বলেন, “নলকূপ স্থাপনের পর কয়েকদিন ভালো পানি পাওয়া গেলেও পরে লালচে ও দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে যায়। আমরা প্রশাসনকে বলেছিলাম, লাইব্রেরির পাশে একটি ওয়াটার ফিল্টার বসানোর জন্য। তখন অধ্যক্ষ বলেন, ‘তাহলে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে ডিপ টিউবওয়েল কেন বসালাম?’”
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ অধ্যাপক হাবিবুর রহমান বলেন, “সমস্যা ধীরে ধীরে কেটে যাবে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই নলকূপ বসানো হয়েছে।”
তবে বাজেট ও দায়িত্বপ্রাপ্তদের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন,“তা দিয়ে তোমার কাজ কী! তোমরা কলেজে ভালো কিছু করো না, শুধু খোঁজো কেন কী হলো। বলে দিও, এক ফু দিলে একদম উড়ে যাবে।”

