মোঃ ইব্রাহীম মিঞা, দিনাজপুর প্রতিনিধি
আজ সোমবার (১৭ই নভেম্বর) (১লা অগ্রহায়ণ) নবান্ন উৎসবকে ঘিরে নতুন ধানের ঘ্রাণে মুখরিত হয়ে ওঠে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম। বাংলার চিরায়ত সংস্কৃতির প্রতীক এই উৎসবকে কেন্দ্র করে সকালে থেকেই গ্রামজুড়ে দেখা যায় এক আনন্দমুখর পরিবেশ।
উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের ঝগড়ুপাড়া গ্রামে আজ নবান্ন উৎসব পালিত হয়েছে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে। উৎসব উপলক্ষে গ্রামটিতে ১৬টি গরু জবাই করা হয়। গ্রামের প্রতিটি পরিবার, উঠান আর পথঘাটজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে উৎসবের রঙ। গরুর গোস্তের ভাগ–বাটোয়ারা, উঠানে ধান মেলে শুকানো, মাঠ থেকে দলবদ্ধভাবে ধান কেটে আনা—সব মিলিয়ে সৃষ্টি হয় এক অপুর্ব ঐতিহাসিক দৃশ্য, যা গ্রামীণ জীবনের হাজার বছরের ঐতিহ্যকে আবারও নতুনভাবে মনে করিয়ে দেয়।
নবান্ন মানেই নতুন ধানের প্রথম স্বাদ ভাগ করে নেওয়ার আনন্দ। সেই আনন্দ থেকেই গ্রামে গ্রামে পিঠা-পুলি, ক্ষীর-পায়েস, চিতই, ভাপা, পাটিসাপটা—সব মিলিয়ে এক মিলনমেলা। আত্মীয়-স্বজনদের দাওয়াত দিয়ে একসাথে বসে খাওয়া, গল্প-আড্ডায় মেতে ওঠা—গ্রামবাংলার এই বন্ধনই নবান্ন উৎসবকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে।
আজকের উৎসব শুধু ঝগড়ুপাড়া বা খানপুরেই সীমাবদ্ধ নয়। বিরামপুর পৌরশহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের চরকাই গ্রামেও আজ পালিত হচ্ছে নবান্ন উৎসব। শহুরে ব্যস্ত জীবনযাত্রার মাঝেও মানুষ গ্রামীণ ঐতিহ্যের টানে নতুন ধানের উৎসবে অংশ নিয়েছে পরিবার–পরিজন নিয়ে।
উপজেলার অন্যান্য স্থানেও নবান্ন উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে। আগামী বৃহস্পতিবার বিরামপুর উপজেলার জোতবানী ইউনিয়নের একর, মঙ্গলপুরসহ একাধিক গ্রামে অনুষ্ঠিত হবে নবান্ন উৎসব। ইতোমধ্যে সেইসব এলাকায় ধান কাটার উৎসবমুখর প্রস্তুতি চলছে, উঠানে নতুন ধান মেলে শুকানোর দৃশ্য যেন উৎসবের আগমনী বার্তা দিচ্ছে।
নবান্ন উৎসব সম্পর্কে জানতে চাইলে বিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কমল কৃষ্ণ রায় বলেন, নবান্ন আমাদের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি এবং সংস্কৃতির এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নতুন ধান ঘরে তোলার আনন্দ মানুষ প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে উৎসব করে উদযাপন করে আসছে। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের উৎপাদনও সন্তোষজনক। কৃষকের মুখে হাসি ফুটে ওঠায় গ্রামজুড়ে এখন নবান্নের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা কৃষকদের আধুনিক প্রযুক্তি, জাত পরিবর্তন ও সঠিক পরামর্শ দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। ধান সংগ্রহ থেকে প্রক্রিয়াজাতকরণ পর্যন্ত কৃষক যাতে লাভবান হন সে লক্ষ্যে কাজ চলছে। নবান্ন উৎসব আমাদের কৃষির সাফল্যেরই প্রতিচ্ছবি।

