আসলে আমাদের দেশে সমস্যা আছে, কিন্তু সমাধান নেই। এই যেমন সড়ক দুর্ঘটনার কথাই ধরা যাক, এমন কোন দিন নেই যে সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে না। বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সরকারের সাফল্য প্রশংসনীয়। অথচ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সড়ক দুর্ঘটনা মাহামারীর চেয়েও বেশি। অথচ বিষয়টা নিয়ে তেমন কোন উদ্যোগ চোখে পড়ে না।
এখন কী কী করলে এই দুর্ঘটনা কমানো যায় তা আমরা যেমন জানি, যারা দেশের অভিভাবক তারাও জানেন। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হলো, সড়ক দুর্ঘটনার জন্য সাধারণ জনগণ থেকে ক্ষমতাবান মহল সবাই কম-বেশি দোষী। যেমন,
১. তিন চাকার যানবাহনঃ হাই ওয়ে রোডে তিন চাকার ধীর গতির যানবাহন দুর্ঘটনার জন্য অনেকটা দায়ী- এই হিসাব সরকার অনেক আগেই কষে বসে আছে। কিন্তু পদক্ষেপ নিয়েছে? এক/দুই দিন একটু তদারকি করে, তারপর শেষ।
২. মোডিফাইড যানবাহনঃ নসিমন-করিমন নামের বেশ কিছু মোডিফাইড গাড়ি শুনেছিলাম নিষিদ্ধ হয়েছিলো। তো সেগুলো কেন এখনও হাইওয়েতে দেখা যায়? উপরের দুটি সমস্যা নিয়ে না সরকার জোরালো পদক্ষেপ নিয়েছে, না বাস-মালিক সমিতি আন্দোলন করেছে না আমরা জনগন আন্দোলন করেছি। সবাই আমরা দেখে যাই নীরবে, মরিও নীরবে!
৩. অপ্রশস্ত রাস্তাঃ আমরা উন্নত দেশের স্বপ্ন দেখি। অথচ আমাদের অনেক জেলার সড়ক এখনো অপ্রশস্ত। উদাহরণ হিসেবে, আমাদের টুঙ্গিপাড়া-গোপালগঞ্জ সড়কের কথাই বলি। এখানে একই রাস্তা দিয়ে বাস, মিনি বাস, মাহিন্দ্রা, লেগুনা, সিএনজি, ভ্যান, ইজি বাইক, ট্রাক, মোটর সাইকেল, নসিমন-করিমন, পিক আপসহ বিভিন্ন যানবাহন চলে। অথচ রাস্তাটি মাত্র দুই লেন এর। নেই কোন রোড় ডিভাইডার। তো এসব রাস্তায় দুর্ঘটনার প্রবণতা যে বেশি তা বোঝার জন্য আলোচনা সভার দরকার নেই। এমন রাস্তা তো দেশের বিভিন্ন জেলাতেই রয়েছে। এসব রাস্তা অনতিবিলম্বে প্রশস্ত করা দরকার।
“ড্রাইভারদের নিয়ে মাঝে মাঝে বসা জরুরী। “গাড়ি নামাইছি মানেই টাকা কামাচ্ছি”- এই ধারণা থেকে বের হতে হবে। প্রয়োজনে কোম্পানির উচিত হবে তার গাড়িগুলোকে নির্দিষ্ট গতিতে লক করে রাখা।”
– সার্জিল আবতাহী
৪. অদক্ষ চালকঃ এখনো অনেক যানবাহন অদক্ষ চালক দিয়ে চালানো হয়, যেতা খুবই ভয়ানক একটা ব্যাপার। এছাড়া অনেক চালক ৩০-৪০ কি.মি. পথ বাকি থাকলে নিজে নেমে গিয়ে হেল্পারকে দিয়ে গাড়ি চালাতে দেয়। এর কারণে অনেক দুর্ঘটনা আগেও হয়েছে, এখনো হচ্ছে। এই বিষয়টার প্রতি চালকদের সচেতন হতে হবে।
৪. বাসের গতিঃ অনেক ড্রাইভারের মাঝে দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানোর প্রবনতা লক্ষ্য করা যায়। এক্ষেত্রে কোম্পানির মনিটরিং জরুরী। ড্রাইভারদের নিয়ে মাঝে মাঝে বসা জরুরী। “গাড়ি নামাইছি মানেই টাকা কামাচ্ছি”- এই ধারণা থেকে বের হতে হবে। প্রয়োজনে কোম্পানির উচিত হবে তার গাড়িগুলোকে নির্দিষ্ট গতিতে লক করে রাখা। যেটা বিআরটিসির সর্বশেষ আমদানী করা এসি বাসে রয়েছে, সেবা গ্রীন লাইন করেছে এবং সম্প্রতি গোল্ডেন লাইন করেছে। তবে এক্ষেত্রে যাত্রীদের দোষ আছে। ধীর গতিতে চালালেই, অনেকে গাড়িকে ঠেলাগাড়ি, ইজি বাইকের সাথে তুলনা করে ড্রাইভারকে কটাক্ষ করে। ওই যে বললাম, আমরা সবাই দোষী।
যে হারে সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে তাতে একটা দুশ্চিন্তা মাথায় আসে। আর তা হলো, “আমার পালা কবে?”
– সার্জিল আবতাহী
৫. পথচারীদের অসতর্কতাঃ অনেক পথচারী উদাসীনভাবে রাস্তা পার হয়। অনেক সময় পথচারীকে বাচাতে গিয়ে অনেক দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাই রাস্তা পার হওয়ার সময় ভাল করে দুই পাশে তাকাতে হবে। এছাড়া শিশু ও বৃদ্ধদের দিকে নজর রাখতে হবে।রাস্তা পার করার জন্য তাদের সাহায্য করতে হবে।
গতকালকের দুর্ঘটনায় আমরা একজন মেধাবী শিক্ষককে হারালাম। একজন স্ত্রী তার স্বামীকে হারালো, একজন ছেলে তার বাবাকে হারালো। পুরো দেশের সড়ক দুর্ঘটনার চিত্র তো এমনই। এই মৃত্যু পুরো একটা পরিবারকে হঠাৎ শোকে স্তব্ধ করে দেয়। আজ শিক্ষক হারালাম, কাল পরিবারের কাউকে হারাবো। যে হারে সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে তাতে একটা দুশ্চিন্তা মাথায় আসে। আর তা হলো, “আমার পালা কবে?”
লেখকঃ সার্জিল আবতাহী
টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ