শেখ শাহিনুর ইসলাম শাহিন, মোল্লাহাট (বাগেরহাট) প্রতিনিধিঃ
প্রতি বছর বোরো ধান আবাদ করে পুরো সংসারের চাহিদা পূরণ করে আসছিলেন কৃষক আরবিন শেখ। চলতি বছর বোরো মৌসুমে প্রায় ২ বিঘা জমিতে ‘বি-ধান ২৮(ভিত্তি)’ আবাদ করেন। স্বপ্ন ছিল অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও পরিবারের চাহিদা মেটানোর। কিন্তু সেটি আর হচ্ছে না। তার আবাদকৃত পুরো জমির ধানেই ব্লাস্টের আক্রমণে চিটা হয়েছে। এতে করে চরম লোকসানের মুখে পড়েছেন তিনি। হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন আরবিনের পরিবার।
আরবিন শেখ বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার দারিয়ালা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ছাড়াও একই এলাকার কৃষক জসিম শেখ ২৫ কাঠা জমিতে ‘বি-ধান-২৮ (ভিত্তি) চিটা হয়েছে। তারাও চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ৮ হাজার ৩৪২ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ২৮, ২৯, ৫৮, ৮১, ৮৬, ৮৮, ৮৯ এবং হাইব্রিডসহ বিভিন্ন জাতের ধানের ফলন ভালো হয়েছে। চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলায় ২৫০ হেক্টর জমিতে ব্রি-ধান-২৮ আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ব্লাস্টের কারনে আংশিক ক্ষতি হয়েছে ২০ হেক্টর এবং ১ হেক্টর জমির ধান পুরো ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে আবার দু’জন কৃষকের ধানে ব্লাস্টের আক্রমণের কথা শোনা যাচ্ছে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ‘ব্রি-ধান ২৮’তে। কয়েকজন কৃষকের জমিতে ২৮ ধানে দেখা দিয়েছে চিটা। বোরো ধানের ওপর নির্ভর করে কৃষক পরিবারের একগুচ্ছ স্বপ্ন। এই বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে চরম হতাশায় ভুগছেন তারা।
কৃষক আরবিন শেখ বলেন, ‘প্রায় তিন বিঘা জমিতে ভালো ফলনের আশায় বোরো ধান-২৮ (ভিত্তি) আবাদ করি। ধান রোপণের পর মনে হচ্ছিল ফলন ভালো হবে। শীষ বের হওয়ার কয়েকদিনের মধ্যে ধানগুলো পাকতে শুরু করে। ধানগুলোতে ক্রমেই চিটা দেখা দেয়। এরপর বিএডিসি নির্ধারিত স্থানীয় ডিলারের সঙ্গে পরামর্শ করে ধানে মেডিসিন ব্যবহার করা হয়। কিন্তু তাতেও কোনও কাজ হয়নি। এখন সব ধানে চিটা হয়েছে। ২ বিঘা জমির ধান কাটলেও এক মণ ধানও হবে না।
তিনি আরও বলেন দুই বিঘা জমিতে সব মিলিয়ে প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ধানের আবাদ করেই আমার সংসার চলে। এখন আমার পথে বসা ছাড়া কোনও উপায় নেই। সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণের দাবি জানাচ্ছি।’
কৃষক জসিম উদ্দিন বলেন, আমি জাহাজে শ্রমিকের কাজ করি যা আয় রোজগার করেছি তার সব টুকু জমির পেছনে ব্যয় করেছি। কৃষি আবাদ করেই আমার সংসার চলে। এই বোরো ধানের ওপরেই আমার পুরো পরিবারের স্বপ্ন। প্রতি বছর আমার জমিতে ২৯ ধান আবাদ করি। কিন্তু আরও ভালো ফলনের আশায় নতুন জাতের ‘ব্রি-ধান ২৮ (ভিত্তি) আবাদ করেছি। আমার ২৫ কাঠা জমির সব ধান চিটা হয়েছে। ২৫ কাঠা জমিতে এক মণ ধানও হবে না। চিটা হওয়ায় জমির ধান কেটে খাওয়ানো হচ্ছে গরুকে। এখন সরকার থেকে অনুদান না দিলে আমার চলার মতো কোনও উপায় থাকবে না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ অনিমেষ বালা নবধারা কে বলেন, ‘উপজেলায় এবার ৮ হাজার ৩৪২ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। এবছর ২৫০ হেক্টর জমিতে ব্রি-ধান-২৮ আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ব্লাস্টের কারনে আংশিক ক্ষতি হয়েছে ২০ হেক্টর এবং ১ হেক্টর জমির ধান পুরো ক্ষতি হয়েছে। ব্রি-ধান-২৮ জাতটা অনেক পুরানো এই জাতের ধানে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। যার কারনে ব্লাস্টের আক্রমণ হয়েছে। আমরা বিভিন্ন প্রশিক্ষণে কৃষকদের ব্রি-ধান-২৮ আবাদ করতে নিরুৎসাহিত করেছি। এর বিকল্প হিসেবে ব্রি-৮১ আবাদের কথা বলেছি। তবে কিছু কিছু জায়গায় আমরা দেখতে পারছি বিভিন্ন ধরণের রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ আছে। বøাস্ট, ব্যাকটেরিয়া, পাতা পোড়া, অনেক সময় চিটা হতে পারে সে কারণে কৃষকদের বিভিন্নভাবে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ব্রি-ধান-২৮ চাষ করে যেসকল কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদেরকে সরকারের প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় তালিকা করে সার ও বীজের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।