নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পাচকাহুনীয়া গ্রামের সাবু মোল্যার মেয়ে তামান্না ওরফে টুকটুকিকে তার স্বামী ও শশুর বাড়ীর লোকেরা নির্যাতন করে হত্যা করার অভিযোগ করেছে তার পরিবার। ১০ আগষ্ট (বুধবার) রাত ১১টার দিকে ঘটনাস্থল উপজেলার কাঞ্চনপুর থেকে তামান্নার স্বামী আলম শেখ ফোনে তামান্না আত্মহত্যা করেছে বলে জানায়।
খবর পেয়ে ওই রাতেই স্বজনরা গিয়ে তামান্নার শশুরালয়ের কাউকে বাড়ীতে পায়নি, ছোট্ট দোচালা টিনের ঘরে লাশটি পড়ে আছে। নিহতের দু’পা বাঁধা ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাটা ও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে জানান তারা। রহস্যে ঘেরা এ মৃত্যু নিয়ে এলাকায় চলছে নানা গুঞ্জন। এ ঘটনায় ১২ আগষ্ট রাতে নিহতের পিতা বাদী হয়ে নিহত তামান্নার স্বামী উপজেলার কাঞ্চনপুর গ্রামের লুৎফর শেখের ছেলে আলম শেখ (২৮), শশুর লুৎফর শেখ (৬০), শাশুড়ী নাজমিন বেগম ও যা তানজিলা বেগম (৩০) সহ ৪ জনের বিরুদ্ধে কালিয়া থানা একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, অনুমান ২ বছর পূর্বে কাঞ্চনপুর গ্রামের লুৎফর শেখের ছেলে আলম শেখের সাথে তামান্নার বিবাহ হয় এবং ৮ মাস আগে তাকে তুলে নেয়। অতঃপর অভিযুক্তরা বিভিন্নভাবে তামান্নাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতে থাকে। এক পর্যায়ে ১০ আগষ্ট তামান্না তার মা- বাবাকে ফোনে স্বামীর সাথে তার সিঙ্গাপুর প্রবাসী ভাইয়ের স্ত্রী তানজিলার পরকীয়ার বিষয়টি জানালে অভিযুক্তরা ওই রাতেই তামান্নাকে নির্যাতন করে মেরে ঘরের নীচু আড়ায় ঝুলিয়ে রেখে পালিয়ে যায় ।
এ ঘটনায় তদন্তপূর্বক সুষ্ঠ বিচার দাবী করেছেন নিহত তামান্নার পিতা সাবু মোল্যা। ১৪ আগষ্ট (রবিবার) সরেজমিনে পাচকাহুনীয়া তামান্নার মা চম্পা বেগম বাবা সাবু মোল্যা জানান, সে প্রায়ই ফোন করে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের কথা বলত। এছাড়া আমাদের বাড়ী আসলে সে ওই ভয়ে যেতে চাইত না। এছাড়া তার যা এর সাথে আলমের সম্পর্কের বিষয়ে তার সিঙ্গাপুর প্রবাসী ভাসুর আসলে সবই বলে দেবে বলে আমাকে ফোনে জানায়। তিনি আরো বলেন, আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেনি, তাকে পা বেঁধে নির্যাতন করে মারা হয়েছে। আমরা হত্যাকান্ডের বিচার চাই। নিহতের চাচী সালমা বেগম ও চাচাত ভাই মফিজুর রহমান বলেন, তামান্নার মৃত্যুর খবর পেয়ে আমরা কাঞ্চনপুর গিয়েছিলাম এবং পুলিশের অনুমতিতে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরীতে সহযোগিতা করেছি। লাশের দুই পা বাঁধা ছিল, হাতে ব্লেডের ৬ টি পোচ, গলার নীচে ও চোখে আঘাতে চিহ্ন রয়েছে। এছাড়া যে আড়ার সাথে লাশ ঝোলানো ছিল তা ছিল অনেক নীচু। ওই উচ্চতায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা সম্ভব নয় বলে তারা জানান।
এদিকে কাঞ্চনপুরে গিয়ে তামান্নার স্বামী আলম শেখকে পাওয়া যায়নি। অভিযুক্ত লুৎফর শেখ ও তার স্ত্রী নাজমিন বেগম জানান, তামান্নার পৈত্রিক বাড়ী থেকে দেওয়া গরু মারাকে কেন্দ্র করে তার স্বামী ও শাশুড়ির সাথে কথা কাটাকাটির জেরে রাতে সে আত্মহত্যা করেছে। এ বিষয়ে অভিযুক্ত আলমের সিঙ্গাপুর প্রবাসী ভাইয়ের স্ত্রী তানজিলা বেগম আড়ালে থেকে সাংবাদিকদের চড়া সুরে এ ব্যপারে কোন বক্তব্য দিতে তিনি রাজি নন বলে জানিয়ে দেন।
এ বিষয়ে কালিয়া থানার ওসি (তদন্ত) রতনুজ্জামান অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে বিষয়টি আত্মহত্যা মনে হওয়ায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে তবে পোষ্টমর্টেম রিপোর্ট হাতে পেলে মৃত্যুর আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে। মোঃ জিহাদুল ইসলাম