গাজীপুরের শ্রীপুরে রাতভর নির্যাতনের পর নিহত যুবক রানার লাশ রাস্তায় রেখে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী। লাশ দাফনের আগে রাস্তার দুপাশে শত শত মানুষ মানববন্ধনে অংশ নেয়। নির্যাতনের শিকার হয়ে নিহত মো. রানা মিয়া (২২) উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের মাওনা গ্রামের মো. আমিরুল ইসলামের ছেলে। তিনি পেশায় নির্মাণ শ্রমিকের সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। এসময় নির্যাতনের শিকার হয়ে যুবকের মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত সকল আসামির মৃত্যুদণ্ডের দাবি করে বিক্ষোভ করেন তাঁরা। সেই সঙ্গে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আসামি গ্রেপ্তার করা না হলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তারা। রোববার ২৫ সেপ্টেম্বর রাত আটটার দিকে উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের মাওনা নয়নপুর সংযোগ সড়কের সরকার বাড়ি সংলগ্ন এক কিলোমিটার সড়কে এ মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
এ ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন—শিপন (২৭) আকাশ (২৫) উজ্বল (৪৫) শওকত (৩০) ইমন (৩০) ও মোশাররফ (৫০) তারা প্রত্যেকেই একই এলাকার বাসিন্দা ও প্রতিবেশী। সরেজমিনে দেখা যায়, নিহতের মরদেহ বাড়ি থেকে কাঁধে নিয়ে রাস্তায় রেখে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করছে এলাকাবাসী । এ সময় বিভিন্ন বয়সী হাজারো নারী–পুরুষ, রাজনৈতিক দলের নেতা–কর্মী, পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা মানববন্ধনে প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি দাবি করেন। এ সময় ক্ষোভ প্রকাশ করে এলাকাবাসী বলেন, হত্যাকাণ্ডের ২৪ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) মানসিক বিপর্যস্ত গাড়ি চুরির অপবাদে পিটিয়ে হত্যা করা হয় । মূলত, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ২২ বছরের রানা মিয়ার চিকিৎসা চলছিল শিকলে বেঁধে। হঠাৎ ছাড়া পেয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় রানা। ঘুরতে থাকে পিয়ার আলী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে ভাঙ্গারী দোকানের সামনের এলাকায়।
এ সময় বিপর্যস্ত যুবক রানাকে দেখে উপস্থিত লোকজন গাড়ি চুরির অপবাদ দিয়ে রাত ১টা থেকে পেটাতে থাকে। রানা হাতে পায়ে ধরেও নিজেকে রক্ষা করতে পারেনি। কাপড়ের মধ্যেই প্রস্রাব-পায়খানা করার পরেও পাষণ্ডরা অমানুষের মতো পেটাতে থাকে রানাকে। শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকালে উপজেলার মুলাইদ গ্রামে রানার বাড়ীতে খবর গেলে রানার বাবা আমিনুল ইসলাম এসে দেখে তার ছেলে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে, অতঃপর রানাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিতে চাইলে রানার মা বাবাকেও বেদম প্রহার করে তারা । পরে সাদা কাগজে সাক্ষর করে মৃত প্রায় অবস্থায় ছেলেকে উদ্ধার করে পিয়ার আলী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের পুকুরে গোসল করিয়ে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে দ্রুত ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। অবস্থা গুরুতর হলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যায়। নিহতের বাবা আমিরুল ইসলাম বলেন, আমার ছেলেকে তুলে নিয়ে দফায় দফায় নির্যাতন করে বুকের পাজর, দুই হাত, পা ভেঙে দেয়। আমার ছেলের শরীরের এক ইঞ্চি পরিমাণ জায়গা নেই যে ঐ স্থানে আঘাত করেনি ওঁরা।
অভিযুক্ত ভাঙ্গারী ব্যবসায়ী শিপনের বক্তব্য নিতে বাড়িতে গিয়ে তাদের পাওয়া যায়নি। এ সময় শিপনের মা রোকেয়া আক্তার বলেন, রানাকে শিপনকে মারধর করেনি। তাহলে আপনার ছেলে পালিয়ে গেলো কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন সে পালায়নি। সে ব্যবসায়ীক কাজে বাহিরে রয়েছে।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, এ বিষয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে কাজ করছে পুলিশ। ক্যাপশন : নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করা রানার লাশ নিয়ে মানববন্ধন করছে এলাকাবাসী ও নির্যাতনের পরে মুমূর্ষু রানার ছবি।