গাজীপুরের কালীগঞ্জে নিখোজের তিন দিন পর পোশাক শ্রমিক সবুজ বার্নার্ড ঘোষালের (৩১) সাত টুকরো মরদেহ উদ্ধারের পর হত্যাকান্ডে জরিত মূল হোতা শাহীনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। রোববার রাতে পিবিআইয়ের একটি দল সাতক্ষীরায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকান্ডে জরিত মূল হোতা শাহীনকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাঁর কাছ থেকে রক্তমাখা জামা কাপড় ও হত্যার আলামত জব্দ করা হয়েছে।
নিহত সবুজ বার্নার্ড ঘোষাল উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের পানজোড়া গ্রামের অমূল্য বার্নাড ঘোষালের ছেলে। তিনি পানজোড়া গ্রামের পূর্বাচল অ্যাপারেলস লিমিটেডে কোয়ালিটি চেকার (কিউ. সি) পদে চাকরি করতেন।
এবিষয়ে পিবিআইয়ের গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকসুদের রহমান বলেন, “সবুজকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন গ্রেপ্তারকৃত শাহীন। তাঁর কাছ থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত আলামত জব্দ করা হয়েছে।”
গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ছানোয়ার হোসেন বলেন, “গতকাল সকালে কালীগঞ্জ থানাধীন পানজোড়া গ্রামের পূর্বাচল অ্যাপারেলস লিমিটেড ফ্যাক্টরির পাশের পুকুর ও জঙ্গলে মরদেহের খন্ডিত অংশ দেখতে পান স্থানীয়রা। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রথমে কোমর থেকে হাঁটু পর্যন্ত অংশ, আঙুলবিহীন কাটা দুই হাত ও একটি জিনসের প্যান্ট উদ্ধার করে। পরে মরদেহের অবশিষ্টাংশের খোঁজে তল্লাশি চালিয়ে বিকেলে তাঁর দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন মাথা এবং কোমর থেকে গলা পর্যন্ত ও এক পায়ের কাটা দুটি খন্ড বিভিন্নস্থান থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরবর্তীতে মরদেহের মোট সাত টুকরো উদ্ধার করা হয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “দুর্বৃত্তরা সুবজকে হত্যার পর মরদেহ টুকরো টুকরো করে কেটে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে রাখে খুনিরা।”
উল্লেখ্য, গত শনিবার সকালে পূর্বাচল এ্যাপারেলস লিঃ এর ফ্যাক্টরীর পাশের পুকুরে ও জঙ্গলে মানুষের দেহের খন্ডিত অংশ দেখতে পেয়ে সাধারণ মানুষ উলুখোলা পুলিশ ক্যাম্পে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রথমে কোমড় থেকে হাটু পর্যন্ত অংশ, আঙ্গুলবিহীন কাটা দুই হাত ও একটি জিন্সের প্যান্ট উদ্ধার করে। পরে কোমড় হতে গলা পর্যন্ত ও এক পায়ের কাটা দুই অংশ এবং বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে মাথা উদ্ধার করে। সুবজকে হত্যার পর খুনিরা লাশ টুকরো টুকরো করে কেটে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখে।
সবুজের পিতা অমূল্য ঘোষাল জানান, শনিবার সকালে স্থানীয়দের কাছে ফ্যাক্টরীর পাশের পুকুরে ও জঙ্গলে মানুষের শরীরের খন্ডিত অংশ পড়ে থাকার খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে উদ্ধারকৃত জিন্সের প্যান্ট, কাটা দুই লোমশ হাত ও কোমড়ের নীচের অংশ দেখে তা আমার নিখোঁজ পুত্র সবুজের বলে সনাক্ত করি। দুই হাতের আঙ্গুলগুলোও কাটা ছিল। পরে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে তল্লাশী চালিয়ে জঙ্গল, পুকুর ও ডোবা থেকে কোমড় হতে গলা পর্যন্ত, এক পায়ের দুই টুকরো ও মাথা উদ্ধার করে পুলিশ। এখনো পর্যন্ত অপর পায়ের অংশ পাওয়া যায়নি। মাথা দেখে লাশটি আমার পুত্র সবুজের বলে সম্পূর্ণ নিশ্চিত হই। সবুজ গত বুধবার (২৮ অক্টোবর) সকালে বাড়ী থেকে তার কর্মস্থল পূর্বাচল এ্যাপারেলস্ লিঃ এর ফ্যাক্টরীতে যায়। রাতে বাড়ী না ফেরায় পরদিন তার কর্মস্থলে গিয়ে জানতে পারেন সবুজ বুধবার সকাল ৬টায় ফ্যাক্টরীতে প্রবেশ করে এবং বিকেল ৪.০৬ মিনিটে সেখান থেকে বের হয়ে যায়। পরে তারা বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) কালীগঞ্জ থানায় নিখোঁজের বিষয়ে একটি সাধারণ ডাইরী করেন, যার নং ১৩৭৪। আগামী মাসে সবুজের স্ত্রী প্রথম সন্তান প্রসব করবে।
ক্যাপশনঃ হত্যাকান্ডে জরিত মূল হোতা শাহিন।