নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পেড়লী ও পাঁচগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জমজমাট প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে। আগামীকাল রাত পোহালেই (২ নভেম্বর) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দু’টি ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে ১৬ জন এবং মেম্বার পদে ৮৯ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে দলীয় প্রতীক ছাড়া এবারই প্রথম ইভিএম-এ ভোটগ্রহণ করা হবে।
এ নির্বাচন ঘিরে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও কৌতুহল বিরাজ করছে। এদিকে, ভোটাররা যোগ্য প্রার্থীকে বেছে নিতে চান। তাদের প্রত্যাশা বিজয়ী প্রার্থীরা এলাকার উন্নয়নে কাজ করবেন। নির্বাচনী প্রচারণাকালে তাদের (প্রার্থী) যেমন ভোটারদের কাছে পাওয়া যাচ্ছে, বিজয়ের পরও যেন তারা মানুষের কাছে থাকে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, শান্ত-স্বচ্ছ চিত্রা নদী বিধৌত জনপদ নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পেড়লী ও পাঁচগ্রাম দু’টি ইউনিয়ন পরিষদ। তবে, দু’টি ইউনিয়নেই গ্রাম্য দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও হানাহানি রয়েছে। ইতোপূর্বে একাধিক হত্যাকান্ডের ঘটনাও ঘটেছে এখানে। তবে সুষ্ঠু-সুন্দর পরিবেশে নির্বাচনী প্রচারণা শেষ হয়েছে।
কালিয়া উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, পেড়লী ইউনিয়নে ১০ জন এবং পাঁচগ্রাম ইউনিয়নে ৬জন চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এক্ষেত্রে পেড়লী ইউনিয়নে সংরক্ষিত নারী সদস্য (মেম্বার) পদে ১১জন ও সাধারণ সদস্য (পুরুষ) পদে ৪৪ প্রার্থী মাঠে আছেন। এছাড়া পাঁচগ্রাম ইউনিয়নে সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ৯জন ও সাধারণ সদস্য (পুরুষ) পদে ২৫ প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। উন্নয়নের বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের মন জয় করার চেষ্টা করছেন সবাই।
এ ব্যাপারে পেড়লী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে রজনীগন্ধা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মানজুর মোরশেদ সাগর বলেন, ভোটারদের কাছে ভালো সাড়া পেয়েছি। আশা করছি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হবে। আমরা উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্ন করতে চাই।
মোটরসাইকেল প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী ফারুক হোসেন মোল্যা বলেন, দলীয় প্রতীক না থাকায় নির্বাচনে বাড়তি কোনো চাপ নেই। ভোটাররা তাদের মনের মতো প্রার্থীকে ভোট দিবেন। আর ইভিএম-এ গ্রামের লোকজন তেমন অভ্যস্ত নন। তারা ভোট দিতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে পারেন।
সংরক্ষিত ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী মুসলিমা বেগম বলেন, আমি মাইক প্রতীকে খুব ভালো সাড়া পেয়েছি। বিজয়ী হলে যার যা প্রাপ্য তা বুঝিয়ে দিব। অপরপ্রার্থী শামছুন নাহার শ্যামেলা বলেন, আমার আত্মবিশ্বাস অনেক ভোটে বিজয়ী হবো।
পাঁচগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান প্রার্থী বাদশা মোল্যা বলেন, পাঁচগ্রাম ছোট একটি ইউনিয়ন। শিক্ষা, সড়ক যোগাযোগসহ সার্বিক উন্নয়নের মধ্য দিয়ে ইউনিয়নবাসীর সেবা করতে চাই। আমার ঘোড়া প্রতীকে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। আশা করছি ২ নভেম্বরের নির্বাচনে বিজয়ী হবো।
চশমা প্রতীকের প্রার্থী এস এম সাইফুজ্জামান বলেন, আমি এই ইউনিয়নের প্রথম চেয়ারম্যান ছিলাম। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে ভোটাররা এবারও আমাকে বিজয়ী করবেন। বিজয়ী হলে তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর মডেল ইউনিয়ন গড়ে তুলতে চাই।
মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী এস এম আশিক বিল্লাহ বলেন, এ ইউনিয়নে তৃতীয়বারের মতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিগত দুই মেয়াদে তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। আমি বিজয়ী হলে ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ভূমি অফিস, পোস্ট অফিসসহ রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করতে চাই। এছাড়া আমাদের এলাকায় ব্যাপক গ্রাম্য হানাহানি রয়েছে। কয়েকটি হত্যাকান্ডও ঘটেছে। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে হানাহানি দুর করে সবাই যেন সুখ-শান্তিতে বসবাস করতে পারেন, সেই চেষ্টা করব।
২ নং ওয়ার্ডের ভ্যানগাড়ী প্রতিকের সদস্য প্রার্থী সাফায়েত শেখ বলেন, আমি কৃষক মানুষ, খেটে খাওয়া মানুষের পক্ষে কাজ করবো। ভাতার কার্ডে কোন টাকা নেবনা এবং জন্ম সনদ সংগ্রহ ও সংশোধনে কোন ভোগান্তি হতে দিবনা। ইউনিয়নের বরাদ্দকৃত মালামাল সকলের সমন্বয়ে সুষ্ঠভাবে বন্টন করবো।
কালিয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসার বিশ্বাস সুজন কুমার জানান, পেড়লী ইউনিয়নে ১৮ হাজার ৩৭৫জন ভোটার আছে। অন্যদিকে, পাঁচগ্রাম ইউনিয়নে ৬ হাজার ৫৪৪ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। সুষ্ঠু-সুন্দর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সব ধরণের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।