1. nabadhara@gmail.com : Nabadhara : Nabadhara ADMIN
  2. bayzidnews@gmail.com : Bayzid Saad : Bayzid Saad
  3. bayzid.bd255@gmail.com : Bayzid Saad : Bayzid Saad
  4. mehadi.news@gmail.com : MEHADI HASAN : MEHADI HASAN
  5. jmitsolution24@gmail.com : support :
  6. mejbasupto@gmail.com : Mejba Rahman : Mejba Rahman
শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৪ পূর্বাহ্ন

গোপালগঞ্জের এক আলোকবর্তিকা প্রধান শিক্ষক হাসিনা সিকদার

রাকিব চৌধুরী,স্টাফ রিপোর্টার
  • প্রকাশিতঃ মঙ্গলবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৩
  • ১৩৬৪ জন নিউজটি পড়েছেন।

মানুষ গড়ার কারিগর হিসাবে কাজ করছেন প্রায় ৩১ বছর ধরে। ১৯৯৩ সালের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে যোগদান করেন।উনার বাবার ইচ্ছা ছিল মেয়ে ডাক্তার হবে কিন্তু উনি এই শিক্ষকতা পেশাই বেছে নেন। অন্য পেশায় চাকুরীর সুযোগ থাকার পরও তিনি শিক্ষকতা পেশা অবলম্বন করেন;এটা ভেবে যে একজন বড় অফিসার হওয়ার থেকে শত শত আর্দশবান অফিসার উনার হাত থেকেই তৈরি হবে। এই ব্রত নিয়ে মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবেই নিজেকে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত করেন। বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীদের তিনি সন্তানের মতই মমতা ও ভালবাসা দিয়ে আগলে রাখেন। তিনি শিক্ষার্থীদের সর্বদা ভাল-মন্দ বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে ভোলেন না শত ব্যস্ততার মধ্যেও।চলাফেরা ও জীবন যাপন করেন ইসলামিক বিধি অনুসরণ করে । সাদামাটা জীবন যাপনের এই মানুষটি নিজের আদর্শ ধরে রাখতে চান মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। নীতি এবং আদর্শের ক্ষেত্রে উনি কোন ছাড় দেবার পক্ষপাতি নন।

বলছি ১২৭ নং আমিনা সরকারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাসিনা সিকদারের শিক্ষকতা জীবনের গল্প। প্রধান শিক্ষক হাসিনা সিকদার গোপালগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার মানিকহার গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ১৯৬৬ সালে। সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন ও হারুনুর রশিদ মহাবিদ্যালয় পাটকেলঘাটা থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন।বাবা ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও কৃষি কর্মকর্তা।বাবা সরকারি চাকরিজীবী হওয়ায় পরবর্তীতে খুলনাতে চলে আসেন। হাসিনা সিকদার খুলনা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়ে (লোকালি বয়রা কলেজ নামে পরিচিত ) বিএসসি ভর্তি হন। ১৯৮৭ – ১৯৮৮ শিক্ষা বর্ষের বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ব্যানারে কলেজ ছাত্রী সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন‌।

সেই সময়র স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি তুলে ধরেন,জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সে সময়ের বিরোধী দলের নেত্রী শেখ হাসিনার সান্নিধ্য পেয়েছেন। হাসিনা সিকদার খুলনা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের স্বাধীনতা উত্তর প্রথম ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। স্মৃতিচারণে তিনি আরো বলেন, শহীদ জননী জাহানারা ইমামের সঙ্গে একই মঞ্চে বসার সৌভাগ্য হয়েছিল এবং তার সান্নিধ্য পেয়েছিলেন সে সময়! পরবর্তীতে তিনি খুলনাতে মহেশ্বর পাশা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার মহান পেশায় আত্মনিয়োগ করেন। প্রধান শিক্ষক হিসেবে ১২৭ নং আমিনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০২০ ফেব্রুয়ারিতে যোগদান করেন। বিশ্ব তখন করোনার থাবায়!লকডাউন চলছে। এই স্কুলে জয়েন করার পর থেকেই স্কুলটাকে শিশুদের পাঠ্যদানের এবং শারীরিক-মানসিক বিকাশের জন্য বেশ কিছু সংস্কারের কাজ সহ অন্যান্য কাজও হাতে নেন।অসমতল স্কুল মাঠ কে শিক্ষার্থীদের জন্য খেলার উপোযোগী সমতল মাঠ তৈরি করেছেন।পুরাতন বিল্ডিং এর সংস্কারের কাজ ও করেছেন।

একজন অভিভাবক বলেন, “বর্তমান প্রধান শিক্ষক এর -পূর্বে যে প্রধান শিক্ষক ছিলেন তিনি একই স্কুলে ২৩ বছর চাকরি করেছেন। বর্তমান প্রধান শিক্ষক স্কুলটাকে অনেক সুন্দর করেছেনএবং আমাদের বাচ্চাদের জন্য খেলনার ব্যবস্থা করেছেন।স্কুলটা অনেক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়েছে। আগের সেই ভুতুড়ে চেহারাটা আর স্কুলের নেই। এখন স্কুলে ঢুকলে অনেক ভালো ও লাগে।” এলাকার একজন গণ্যমান্য ব্যক্তি প্রধান শিক্ষক সম্পর্কে বলেন তিনি তো অনেক ভালো ও পরোপকারী একজন সাদাসিধে মনের মানুষ কিন্তু দেখেন ভালো কাজ করতে গেলে সবাই সহযোগিতা নাও করতে পারে কারণ অসত্যের বাহিনী হয় বড় তার পিছনে থাকে মূর্খ, লোভী, স্বার্থপর ও বিশ্বাস ঘাতকের দল। কেবল কর্ম ক্ষেত্রে উনি ভালো তা নন সামাজিকভাবে উনি মানুষের উপকার করে থাকেন যা উনি প্রচার করতে চান না।নিরবে উপকার করতে পছন্দ করেন।

প্রধান শিক্ষক হাসিনা সিকদার খুবই দুঃখিত গলায় বলেন, সততা আর নীতির সঙ্গে কাজ করতে গেলে একা হয়ে যেতে হয় এটা আমি খুবই উপলব্ধি করেছি। এবং চাকুরী জীবনে আমি কখনও কখনও একা ও হয়ে গেছি। তবু দুঃখ করি না এটা ভেবে যে আমি একমাত্র সৃষ্টিকর্তা সন্তুষ্টির জন্য এবং আমার প্রতি যে দায়িত্ব প্রধান শিক্ষক হিসেবে তা পালনে রবি ঠাকুরের সেই বিখ্যাত গান, “যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে!” সাহস যুগিয়েছে আমার।এই দীর্ঘ চাকরি জীবনে! স্কুলের উন্নয়নের এবং শিক্ষার্থী বাচ্চাদের মানসিক, শারীরিক উন্নয়নের জন্য উনি তাদেরকে জাঙ্ক ফুড মানে অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ না করার জন্য সচেতন করার চেষ্টা করেন। পাশাপাশি স্কুলকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার নিমিত্তে বেশ প্রতিকূলতা সহ প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন তিনি। কথা প্রসঙ্গে উঠে আসে ,স্কুল বন্ধকালীন সময় ও কোরবানির ঈদের বন্ধের পর স্কুলের অবস্থা হতো সোচনীয়! স্কুলের মাঠে এলাকার কিছু লোক গরু জবাই করত, স্কুলকে নোংরা করে রাখত। এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে উনি বলেন, আমার স্কুলে কোন দপ্তরি এবং ক্লিনার নাই। এবং পাঁচজন সহকারী টিচার সহ মাত্র ছয় জন শিক্ষক রয়েছেন।স্কুল খুললে দেখা যেত মল-মুত্র ত্যাগ সহ বমি করে দুর্গন্ধ করে রেখেছে। কাউকে ডেকে যদি টাকাও দেয়া হতো, এত নোংরা দুর্গন্ধ পরিষ্কার করতে চাইত না কোন লোক। বাধ্য হয়ে নাক মুখ বেঁধে স্কুল ঘর পরিষ্কার ও করেছেন। স্কুলের মধ্যে কোরবানির পশুর জবাই করা বন্ধ করেছেন। স্কুলটা তো এলাকাবাসীরও।উনাদের সন্তানরাই এখানে শিক্ষা গ্রহণ করে। সেটা ভেবে ওনারা যদি একটু সচেতন হউন, তবে এই স্কুলটা আরো বেশি উন্নত হবে। এই সকল সমস্যা গুলো আর থাকবে না আশা করি।শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর হিংসা বিদ্বেষ এগুলোকে ভুলে যদি আমরা ভালো কাজের প্রশংসা করি। তবে সমাজে আরো ভালো কাজ করার করার মানুষ ও কাজের সংখ্যা বেড়ে যাবে। করোনার সময়ে স্কুলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য নিজ উদ্যোগে স্কুলে শিক্ষার্থীদের জন্য পানির ট্যাবের ব্যবস্হা করেছেন। যাতে শিক্ষার্থীরা সুপীয় পানি পান করতে পারে।

১২৭ নং আমেনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শিক্ষক বলেন, হাসিনা সিকদার একজন অসাধারণ মনের মানুষ এবং শিক্ষক হিসেবে তিনি চমৎকার ।উনি খুব সৎ এবং নিষ্ঠাবান। হাসিনা শিকদারের এক সময়ের সহকর্মী বর্তমানে ভোজেরগাতী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাছিমা খানম বলেন, প্রধান শিক্ষক হাসিনা শিকদার ভীষণ ভালো মানুষ,তবে তিনি শক্ত হাতে স্কুল পরিচালনা করেন। তিনি আমার একজন অনুকরণীয় ব্যাক্তিত্ব । আমি আপার সর্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনা করি। আগামী ২০২৫ সালের শুরুর দিকে চাকুরী হতে অবসর গ্রহন করবেন এই জ্যোতিমান মানুষটি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এভাবে শিক্ষার্থীদের পাশে থেকে তার আলোর জ্যোতি ছড়িয়ে দিতে চান কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে। জীবন যত দুঃখ আর কষ্টময় হোক না কেন সবার ভালোবাসায়,দোয়ায় বেঁচে থাকতে চান এই নিঃস্বার্থ মানুষটি।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved সর্বস্বত্বঃ দেশ হাসান
Design & Developed By : JM IT SOLUTION