মোঃ জিহাদুল ইসলাম, কালিয়া, নড়াইল
নড়াইলের কালিয়া উপজেলার বড়নাল দক্ষিন পাড়া গ্রামে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক ও টাকা আত্মসাত করে অস্বীকার করায় প্রেমিকার বাড়ীতে গিয়ে সুমাইয়া (২৪) নামে এক তালাকপ্রাপ্ত নারীর বিষপানে আত্মহত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত মাসের ২৮ ফেব্রুয়ারী রাত ৯ টার দিকে সুমাইয়া পাশ্ববর্তী কালাম মল্লিকের ছেলে জামাল মল্লিক (২৫) এর বাড়ী গিয়ে বিবাহ না করলে বিষপানে আত্মহত্যার হুমকি দিলে জামাল মল্লিক নিজ হাতে বিষ তুলে দিয়ে মরতে বলে এবং সুমাইয়া বিষ পান করে ফেলে।
পরবর্তীতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩ মার্চ দুপুরে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ৬ মার্চ সুমাইয়ার চাচি ছাবিনা বেগম বাদি হয়ে ওই গ্রামের কালাম মল্লিক ও তার তিন ছেলে কামাল, জামাল ও আফতাব মল্লিকসহ খুলনা জেলার তেরখাদা গ্রামের রবিউল ইসলাম (৩৫) কে আসামী করে কালিয়া থানায় একটি এজাহার দাখিল করেছেন। মৃত সুমাইয়া খুলনা জেলার তেরখাদা থানার আড়ফাঙ্গাশিয়া গ্রামের খশরু মোল্যার মেয়ে। এজাহার ও স্বজন সুত্রে জানা যায়, মৃত সুমাইয়া ও জামাল মল্লিকের বাড়ী ভিন্ন গ্রাম, ভিন্ন থানা ও ভিন্ন জেলা হলেও বাড়ি বড়নাল খালের এপার ওপার এবং দুই পারে যাতায়াতের সংযোগ সেতু আছে। ওই খালের পাড়ে জামালের মুদি দোকান থাকায় সুমাইয়া ও তাদের পরিবারের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ওই দোকান থেকেই কিনতো।
একটি কন্যা সন্তানসহ তালাকপ্রাপ্ত সুমাইয়ার চেহারা ভালো হওয়ায় এবং নিত্য দিনের যাতায়াতে জামাল তাকে বিবাহের প্রলোভন দেখিয়ে প্রায় ১ বছর আগে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে জামালের বাড়িতে গিয়ে স্বামী স্ত্রীর মত ঘন্টার পর ঘন্টা সময় কাটাতো সুমাইয়া। অতঃপর চাকুরীর কথা বলে জামাল ৫ লক্ষ টাকা দিতে বললে সুমাইয়ার পূর্বের স্বামীর থেকে পাওয়া ২ লক্ষ টাকা জামালের হাতে তুলে দেয়। এর মধ্যে সুমাইয়া জানতে পারে জামাল অন্যত্র বিয়ে করেছে। তখন সুমাইয়া জামালের বাড়ী গিয়ে বিবাহের জন্য চাপ দেয় না হলে বিষপানে আত্মহত্যার হুমকি দিলে জামাল নিজ হাতে সোপর্দ বিষ খেয়ে এ সব ঘটনা গোপন রাখার শর্তে সুমাইয়া তার চাচি ছাবিনাকে বলেছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। আরো জানা গেছে, টাকা নেওয়ার পর সুমাইয়া সাথে ও জামালের সম্পর্কের কথা জামালের পরিবার জেনে গেলে তার বাবা ও ভাইদের পরামর্শে ২৭ ফেব্রেয়ারী দুপুরে জামাল সুমাইয়াকে ফোন করে তাদের বাড়ীতে ডেকে পরিবারের লোক রাজি না অজুহাত দেখিয়ে বিয়ে করতে পারবেনা বলে জানিয়ে দেয়।
পরদিন ২৮ ফেব্রুয়ারী রাত অনুমান ০৯ টার দিকে সুমাইয়া জামালের বাড়িতে গিয়ে বিবাহ না করিলে বিষ পানের হুমকি দিলে জামাল দোকান থেকে একটি বিষের বোতল এনে সুমাইয়ার হাতে দিলে জামালের খাটের উপরেই বিষপান করে। অতঃপর স্বজনরা তাকে কালিয়া স্বাস্থ কমপ্লেক্সে ভর্তি করে এবং অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ০৩ মার্চ সুমাইয়ার মৃত্যু হয়। এসময় মভিযুক্তরা সুমাইয়ার ব্যবহৃত ফোনটিও গোপন করে ফেলে। সুমাইয়ার মা রোকসানা বেগম কন্যা শোকে পাগল প্রায়। এ ঘটনায় দোষীদের কঠোর সাজা দাবি করেছেন নিহতের স্বজনরা।
বিশ্বস্ত কয়েকটি সুত্রে জানা গেছে সুমাইয়া গর্ভবতী ছিল। অভিযুক্ত জামাল মল্লিকের বাড়িতে গিয়ে তাদের পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে কালিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খন্দকার শামিম আহমেদ বলেন, এ ঘটনায় খুলনার সোনাডাঙা থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। এজাহারের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে, তবে পোষ্ট মর্টেম রিপোর্ট আসলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।